আল্পসের ঢালেই শেষ বাবা-ছেলে
ঠাৎই একটা ফোন। উল্টো দিক থেকে ভেসে এল প্রচণ্ড ভয়ার্ত একটা পুরুষ কণ্ঠ। জানালেন, বরফে ঢাকা পাহাড়ি ঢালে পড়ে গিয়েছে ছেলে। যত দূর চোখ যাচ্ছে, ছেলেকে তিনি দেখতে পাচ্ছেন না...।
এই পর্যন্তই, আর কিছু শুনতে পায়নি পুলিশ। ফোন কেটে যায়। শনিবার দুপুর ৩টের ওই ঘটনার প্রায় ১৬ ঘণ্টা পরে গত কাল মঁ ব্লঁ-র পার্বত্য ঢাল থেকে উদ্ধার হয়েছে বাবা-ছেলে পিটার ও চার্লি সন্ডার্সের দেহ।
সপ্তাহান্তের ছুটিটায় দারুণ কিছু একটা করতে চেয়েছিলেন অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী পিটার। বারো বছরের ছেলেকে নিয়ে চলে যান ফ্রান্সের শ্যামোনি। কিন্তু শেষটা যে এমন হবে, হয়তো কল্পনাও করতে পারেননি পিটার। তাঁর ফোনটা থেকে পুলিশের অনুমান, চার্লি বরফে ঢাকা আল্পসের ঢাল থেকে পড়ে যাওয়ার পরেই ফোন করেছিলেন পিটার। ছেলের কথাও বলেন। কিন্তু সেটুকু জানানোর পরেই ফোন কেটে যায়। পুলিশের ধারণা এর পরেই পড়ে যান পিটারও। তাঁরা ঠিক কোথায় রয়েছেন, সেটাই তো জানা হল না এই ভেবে পিটারের মোবাইল নম্বরটিতে পাল্টা ফোন করে পুলিশ। কিন্তু এ বার আর কোনও কথা হয়নি। শুধু বরফে পা ফেলার চাপা আওয়াজ এবং হাল্কা গোঙানি।
পিটার সন্ডার্স চার্লি সন্ডার্স
পুলিশ অবশ্য চেষ্টা ছাড়েনি। ফের ফোন করতে থাকে তারা। এ বার ফোনটা সরাসরি ‘আনসারিং মেশিন’-এ চলে যেতে থাকে।
ফ্রান্সের মাউন্টেন পুলিশ হেলিকপ্টারে করে আল্পসের একটা বড় অংশে পাক খায়। কিন্তু অত বিস্তৃত অঞ্চল, কোনও লাভ হয় না। সন্ধে নেমে যায়। বন্ধ হয় না তল্লাশি অভিযান। এ বার ইনফ্রারেড ক্যামেরা দিয়ে খোঁজ চলে। তবু পিটারদের খুঁজে পায় না কেউ।
শেষমেশ সন্ধের পর তারা বাকিংহামে পিটারের স্ত্রী স্যান্ড্রার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সে দিনই সকালের দিকে স্যান্ড্রাকে তাঁদের অভিযানের একটা ফোটো পাঠিয়েছিলেন পিটার। ছবি থেকেই ঠিক কোথায় আটকে পড়েছিলেন পিটার-চার্লি, চিহ্নিত করে পুলিশ। শুরু হয় তল্লাশি অভিযান।
রবিবার সকাল ৭টা বেজে ৪০ মিনিট নাগাদ, টানা চার বার তল্লাশি অভিযানের পর বাবা-ছেলের দেহ খুঁজে পায় তারা। ১৫,৭৮১ ফুট উঁচু পর্বতের ৫০০০ ফুট উচ্চতায় হাইকিং করছিলেন পিটার ও তাঁর ছেলে। প্রায় ৯৮০ ফুট নীচে পড়ে গিয়েছিল চার্লি। আর পিটারের দেহ মেলে ৮৩০ ফুট নীচে।
ব্রিটিশ মাউন্টেন গাইড রিচার্ড ম্যানসফিল্ড বলেন, উপত্যকার ওই অংশটা এ সময় পুরু বরফের স্তরে ঢাকা থাকে। শনিবার বেশ রোদ ঝলমলে আবহাওয়া থাকলেও, মার্চে কেউ সাধারণত ও দিকে যায় না। তার উপরে পাহাড়ে চড়ার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও ছিল না ওদের কাছে। সাধারণ বুট পরেছিল দু’জনে। পুলিশের বক্তব্য, হাইকিংয়ের জন্য ‘লা জঁসিওঁ’ অঞ্চলটা বেছে নিয়েছিল বাবা-ছেলে। গরমে আল্পসের ওই অংশে অভিযানে গেলেও, শীত বা বসন্তের শুরুতে কেউ ও দিকে যায় না। অ্যাল্পসের মঁ মদি এবং মঁ ব্লঁ-এ অভিযানে গিয়ে প্রতি বছর গড়ে ১০০ জন করে মারা যান। ২০১২ সালেই মারা গিয়েছিলেন তিন ব্রিটিশ। আর এ বার, পিটার ও চার্লি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.