শ্রীনগরে হানা হিজবুলের
ক্রিকেট কিট থেকে ছুটে এল গুলি-গ্রেনেড, হত ৫ সিআরপি
ত্মঘাতী জঙ্গিহানায় ফের উত্তপ্ত ভূস্বর্গ। ক্রিকেটারের ছদ্মবেশে খেলার মাঠে ঢুকে বেপরোয়া ভাবে গ্রেনেড ছুড়ল, গুলি চালাল জঙ্গিরা। নিহত হলেন পাঁচ সিআরপিএফ জওয়ান। একটি সূত্রে খবর, ঘটনার সময় পাঁচ জনের মধ্যে মাত্র এক জনের কাছে অস্ত্র ছিল।
গত তিন বছরে সে ভাবে সন্ত্রাস দেখেনি কাশ্মীর। একটু একটু করে গড়ে ওঠা শান্তির বাতাবরণ আজ বড় রকম ধাক্কা খেল।
সেনা-পুলিশের পাল্টা গুলিতে মারা গিয়েছে দুই জঙ্গিও। ঘটনার দায় স্বীকার করে নিয়েছে হিজবুল মুজাহিদিন। তারা
জানিয়ে দিয়েছে “ভবিষ্যতে এমন আরও অনেক কিছুর সাক্ষী হতে চলেছে ভারত।”
ঘটনার সূত্রপাত সকাল পৌনে এগারোটায়। বেমিনার পুলিশ পাবলিক স্কুলের মাঠে ব্যাটে-বলে খেলা চলছে জোরকদমে। কাছেই সিআরপিএফের ছাউনি। মাঠের চারপাশে দর্শকদের ভিড়ে থিকথিক করছে সেনা-পুলিশ। আফজল গুরুর দেহ কাশ্মীরে ফেরত না পাঠানো নিয়ে আজ বন্ধ ডেকেছিল কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন। সেই কারণেই শহরে নিরাপত্তা ছিল আঁটোসাটো।
ইতিমধ্যে জ্যাকেট গায়ে খেলার মাঠে ঢুকল দু’জন লোক। সঙ্গে ক্রিকেটের ব্যাগ। সকলে ভেবেছিল ওরাও খেলতে এসেছে। সেনা-জওয়ানরাও সে দিকে মাথা ঘামাননি। বন্দুক হাতে ঘুরতে ঘুরতে কখন যে খেলায় মগ্ন হয়ে পড়েছিলেন! ঘোর কাটল প্রচণ্ড একটা আওয়াজে।
মাঠে ঢোকার পরই ওই দু’জনের ব্যাগ থেকে বেরিয়ে এল গ্রেনেড আর একে-৪৭। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক ট্র্যাফিক পুলিশ জানালেন, জঙ্গিরা প্রথমে গ্রেনেড ছোড়ে। পরে হাতে তুলে নেয় একে-৪৭। বললেন, “বীভৎস একটা বিস্ফোরণের আওয়াজ। তার পরেই গুলির শব্দ। সবাই তখন ভয়ে মাটিতে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়েছি। এর পর হামাগুড়ি দিয়ে বাঁচার জন্য পথ খোঁজা শুরু। চতুর্দিকে কান্নাকাটি পড়ে গিয়েছে।” টানা ৩০ মিনিট গুলিযুদ্ধের পর শান্ত হয় পরিস্থিতি। তত ক্ষণে পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছে দুই জঙ্গি। আহত সাধারণ মানুষ থেকে সেনা-পুলিশ। তবে তাঁদের বিপদ কেটে গিয়েছে, জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তা-ও ভাল, ধর্মঘটের জেরে বন্ধ ছিল স্কুল, তাই বেঁচে গেল অনেকে, জানালেন স্থানীয় এক ব্যক্তি।
শ্রীনগরের বেমিনা অঞ্চলটি যোগাযোগের দিক থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বেমিনার সড়ক পথেই সাধারণত বারামুলা, কুপওয়ারা কিংবা হান্ডওয়ারা যান সেনা-জওয়ানরা। অনেকেরই ধারণা, সে জন্যই হয়তো বেমিনা অঞ্চলকে বেছে নিয়েছিল সন্ত্রাসবাদীরা।
জঙ্গিহানার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন কাশ্মীর পুলিশের আইজি আব্দুল গনি মির। বললেন, “বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনেই মাটিতে শুয়ে পড়ি। কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না।” কী ভাবে যে নজর এড়িয়ে জঙ্গিরা ওই এলাকায় ঢুকে পড়ল, দিশা খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ।
পুলিশের এক সূত্রের খবর, জঙ্গিরা উত্তর কাশ্মীরের কোনও জায়গা থেকে এসেছিল। তবে নয়াদিল্লির দাবি, শ্রীনগরে হামলার পিছনে পাকিস্তানেরই হাত রয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজকুমার সিংহ বলেছেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, নিহত দুই সন্ত্রাসবাদী স্থানীয় বাসিন্দা নন। সীমান্তের ও পার থেকে এসেছে তারা, সম্ভবত পাকিস্তান থেকে।” আফজল গুরুর ফাঁসির পরেই এই হামলার চক্রান্ত বলে মনে করছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা। এ দিকে, হিজবুল মুজাহিদিন হামলার দায় স্বীকার করলেও, ঘটনার পিছনে লস্কর-ই-তইবার হাতও উড়িয়ে দিচ্ছেন না কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।
স্বরাষ্ট্রসচিবের বক্তব্যের সূত্র ধরে পাকিস্তানের কড়া সমালোচনা করেছে বিজেপি-ও। দলের মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদের বক্তব্য, “পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী রাজা পারভেজ আশরফ চার দিন আগেই জয়পুরে বিশ্ব শান্তির কথা বলে গিয়েছেন। তার পরেই এই ঘটনা। আসলে পাকিস্তান কোনও দিনই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। দিল্লির উচিত পাকিস্তানের সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্ক বজায় রাখা।”
তবে দায় অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তারা বলেছে, পাকিস্তানের কোনও নাগরিক কাশ্মীরের ঘটনায় জড়িত নয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.