জেরা হবে ভিডিও ফুটেজ নিয়ে
মারো নয়, বলেছিলাম ভাগো, দাবি ইকবালের
গার্ডেনরিচ-কাণ্ডের বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ সঙ্গে নিয়ে ভবানী ভবনে মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্নাকে জেরা করতে বসবেন সিআইডি-র তদন্তকারীরা। পুলিশ অফিসার খুনে অভিযুক্ত মুন্না জেরার সময়ে অন্য রকম কিছু বলার চেষ্টা করলেই তাঁকে ওই ফুটেজ দেখিয়ে দেওয়া হবে। গোয়েন্দাদের দাবি, মুন্না মাঝেমধ্যেই সত্য থেকে সরে আসছেন। তাই তাঁরা এই পন্থা নিচ্ছেন।
সেই সঙ্গে, ১৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর রঞ্জিত শীলকেও ভবানী ভবনে তলব করবে সিআইডি। মুন্না শুরু থেকেই গোয়েন্দাদের বলছেন যে, ঘটনার দিন, অর্থাৎ ১২ ফেব্রুয়ারি হরিমোহন ঘোষ কলেজের সামনে তাঁকে যেতে জোর করেছিলেন রঞ্জিত শীল-ই। মুন্নার দাবি, রঞ্জিতবাবু বলেছিলেন, কংগ্রেসের মোক্তারকে তিনি একা সামলাতে পারবেন না। শনিবার আলিপুর আদালতের সামনে দাঁড়িয়ে একই দাবি করেছিলেন মুন্নার মেয়ে সাবাতাজ-ও। রঞ্জিতবাবু যদিও মুন্নাকে ডাকার কথা অস্বীকার করেছেন। সিআইডি সূত্রের খবর, প্রয়োজনে রঞ্জিত ও মুন্নাকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হবে।
সিআইডি সূত্রের খবর, মুন্না স্বীকার করেছেন, মোক্তারের মোকাবিলায় তাঁর পক্ষের কিছু লোকজনও সশস্ত্র অবস্থায় হরিমোহন ঘোষ কলেজের সামনে জড়ো হয়েছিল এবং তারা বন্দুক ও বোমা নিয়ে তাঁর নির্দেশেই সে দিন কাজ করেছিল। কিন্তু পুলিশ অফিসার তাপস চৌধুরীকে খুনের ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই বলে জেরায় দাবি করেছেন তৃণমূলের ধৃত বরো চেয়ারম্যান। গোয়েন্দাদের বক্তব্য, শেখ সুহান ও মহম্মদ ইবনের গুলি ছোড়ার কথা মুন্না এখনও স্বীকার করেননি। বলেছেন, তিনি এ ব্যাপারে কিছু জানেন না।
তবে এটুকু স্বীকার করেছেন যে, ওই দু’জনকে তিনি চেনেন। তাঁর দাবি, মোক্তারের দলবলই প্রথমে বোমা-গুলি ছুড়তে শুরু করে। প্রাণ বাঁচাতে তিনি তাঁর দলের লোকেদের পালাতে বলেছিলেন। মুন্নার বক্তব্য, “আমি তো ‘মারো’ বলিনি, বলেছিলাম ভাগো!”
কিন্তু তদন্তকারী এক অফিসার বলেন, “ছবিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, আগাগোড়া মুন্নার সঙ্গে রয়েছে ইবনে-সুহানরা। তাদের সঙ্গে নিয়েই মুন্না মারমুখী ভঙ্গিতে তেড়ে যাচ্ছেন। একটি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, সুহান কী ভাবে গুলি চালাল।” গোয়েন্দাদের দাবি, মুন্না এ সব না-জানার ভান করছেন। সব সময়ে সত্যি বলছেন না। তাঁর বাড়ির লোকজন এখন ইবনে-সুহানকে চেনেন না বলছেন। তাই, ওই সমস্ত ফুটেজ নিয়েই তাঁরা মুন্নাকে জেরা করবেন। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের থেকে সংগ্রহ করা ফুটেজই এখন সিআইডি-র বড় অস্ত্র।
তবে গোয়েন্দারা মানছেন, ইবনে-সুহান পুলিশি হেফাজতে থাকার সময়ে মুন্নাকে ধরা গেলে তাদের সঙ্গে বসিয়েই তৃণমূলের বরো চেয়ারম্যানকে জেরা করা যেত। সে ক্ষেত্রে মুন্নার সঙ্গে ওই দু’জনের যোগাযোগ এবং তাদের অস্ত্রশস্ত্র দেওয়ার বিষয়টি প্রমাণ করা অনেক সহজ হত। কিন্তু ওই দু’জনই এখন জেলে থাকায় সেটা সম্ভব হচ্ছে না।
আসামিকে ভিডিও ফুটেজ দেখানোর পাশাপাশি তাঁর ব্লাড সুগার ও কিডনির সমস্যার কথা মাথায় রেখে যে-ভাবে খাবার-দাবার ও ওষুধ দেওয়া হচ্ছে, তারও ভিডিও রেকর্ডিং করে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তদন্তকারীরা। তাঁরা জানান, শনিবার সকালে ভবানী ভবনে পৌঁছনোর পর মুন্নাকে চিনি ছাড়া লিকার চা ও বিস্কুট দেওয়া হয়, তার পর দুপুরে রুটি ও আলু ছাড়া তরকারি খেতে দিয়ে ওষুধও দেওয়া হয়। প্রথম দিন বলে সাবধানতার জন্য ফিল্টারের জল না-দিয়ে মুন্নাকে বোতলে ভরা জল কিনে দেন গোয়েন্দারা। তার পরেও মুন্নার আইনজীবী আলিপুর আদালতে দাবি করেন, মুন্নাকে এক গ্লাস জলও দেয়নি সিআইডি। কাঠগড়ায় দাঁড়ানো মুন্না এই কথার বিরোধিতাও করেননি। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, মুন্না তিলকে তাল করে তাঁদের বেকায়দায় ফেলে দিতে পারেন। তাই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবেই সিআইডি ওই ভিডিও রেকর্ডিং করতে চায়।
সিআইডি সূত্রের খবর, শনিবার সন্ধ্যায় আদালত থেকে ভবানী ভবনে ফেরার পর মুন্না সরাসরি গোয়েন্দাদের জানিয়ে দেন, নামী কোনও চিকিৎসককে দিয়ে তাঁর স্বাস্থ্য যেন নিয়মিত পরীক্ষা করানো হয়। মুন্নার অন্যতম আইনজীবী সুজিতকুমার মাইতি বলেন, “আমরা মুন্নাভাইয়ের শারীরিক অবস্থার কথা সিআইডি-কে জানিয়েছি। তিনি এমনিতেই অসুস্থ। সে ভাবেই তাঁকে সাবধানে রাখতে হবে।” সিআইডি-র বক্তব্য, মুন্নার বাড়ির লোক যে প্রেসক্রিপশন দিয়েছেন, সেটি কোনও সরকারি চিকিৎসককে দেখিয়ে তাঁর পরামর্শ মতোই তাঁকে ওষুধ দেওয়া হবে।
ভবানী ভবনে শনিবার রাতে মুন্নার মেনু ছিল দু’টো রুটি ও সয়াবিনের তরকারি। রবিবার সকালে তিনি চিনি ছাড়া লিকার চা ও দু’টি বিস্কুট খান। রবিবার দুপুরে তাঁকে দেওয়া হয় অল্প ভাত, ডাল ও বাঁধাকপির তরকারি। মুন্না ও গোয়েন্দারা, দু’পক্ষই দু’দিনের যাত্রার ধকলে ক্লান্ত ছিলেন।
তাই শনিবার রাতে আর মুন্নাকে জেরা করা হয়নি। রবিবার ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও এ দিন দুপুরে সিআইডি-র স্পেশ্যাল আইজি বিনীত গোয়েল ভবানী ভবনে যান। বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে স্পেশ্যাল আইজি-র ঘরে ফের মুন্নাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন গোয়েন্দারা। তার আগেই মুন্না চিৎকার জুড়ে দেন। জানতে চান, প্রবল ব্লাড সুগার থাকা সত্ত্বেও কেন তাঁকে এ দিন আলু দেওয়া তরকারি দেওয়া হল। সিআইডি সূত্রের খবর, এ দিন দুপুরে বাঁধাকপির তরকারিতে আলু ছিল।
আসলে রবিবার বলে মুন্নার খাওয়ার সময়ে তদন্তকারীদের অফিসারদের প্রায় কেউই পৌঁছননি। তাই ঘটনাটি বিশেষ কারও নজরে আসেনি। শেষ পর্যন্ত মুন্নাকে বুঝিয়ে শান্ত করা হয়। মুন্নাকে যাতে সব সময়ে আলু ছাড়া খাবারই দেওয়া হয়, স্পেশ্যাল আইজি সেই ব্যাপারে অফিসারদের নজর রাখতে বলেন।
মুন্নাকে জেরার পাশাপাশি তাঁর বড় ছেলে অনিল এবং শাগরেদ হাসান নাকভি ওরফে সানুর খোঁজ চালাচ্ছে সিআইডি। জেরায় মুন্না জানিয়েছেন, কলকাতা ছেড়ে পালানো ইস্তক তাঁর সঙ্গী ছিলেন সানু এবং আলিগড় পর্যন্ত সানু কখনও তাঁকে কাছছাড়া করেননি। মুন্নার দাবি, কলকাতা ও নাজিরগঞ্জ ছেড়ে পালানোর পর যে-সব জায়গায় তিনি গিয়েছেন, সেগুলির মধ্যে একমাত্র আলিগড় ছাড়া অধিকাংশ জায়গাই তাঁর অচেনা। ওই সব এলাকায় যাওয়া ও থাকার ব্যাপারে সানুই তাঁকে সাহায্য করেছিলেন। সানু ও অনিল দু’জনেই গার্ডেনরিচ-কাণ্ডে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাঁধানোর ঘটনায় অভিযুক্ত। সিআইডি জেনেছে, দিন কয়েক আগে অনিল ব্যান্ডেলের একটি জায়গায় আত্মগোপন করেছিলেন। সিআইডি সূত্রের খবর, মুন্না বারবার গোয়েন্দাদের কাছে নিজেকে মহানুভব, দয়ালু ও সজ্জন হিসেবে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। জেরায় জানিয়েছেন, দাদা মোগল খুন হওয়ার পর এক রকম বাধ্য হয়েই তাঁকে রাজনীতিতে জড়াতে হয়। মুন্নার বক্তব্য, পারিবারিক খাটাল থেকে দুধ বিক্রি করেই তাঁর যা রোজগার এবং ওই রোজগারের সবটুকুই তিনি গরিব-দুঃখীদের মধ্যে বিলিয়ে দেন। নিজের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি প্রমাণের চেষ্টার পাশাপাশি মোক্তারকে নিষ্ঠুর ও জুলুমবাজ বলে তদন্তকারীদের কাছে অভিহিত করেছেন মুন্না।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.