লক-আপ থেকেই নয়া বিতর্ক উস্কে দিলেন মুন্না
গার্ডেনরিচ-কাণ্ডের পরেই টিভি চ্যানেলের ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল টেলিফোনে মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্নার কথোপকথন। বলেছিলেন, “কুছ দিন কে লিয়ে ছুপ যাঁউ?” (কিছু দিনের জন্য গা-ঢাকা দেব?)। শুক্রবার ডেহরি-অন-শোন রেল পুলিশ থানার লক-আপের গরাদ ধরে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, “উপর সে অর্ডার থা, দো-চার দিন ছুপনে কে লিয়ে।” (উপর থেকে নির্দেশ ছিল, দু’-চার দিন লুকিয়ে থাকুন)।
এই উপরতলার লোকেরা কারা, তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি মুন্না। কিন্তু বিরোধী দলে তো বটেই, এমনকী তৃণমূলের অন্দরেও প্রশ্ন উঠছে মুন্নাকে গা ঢাকা দেওয়ার নির্দেশ কি তবে দিয়েছিলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম? কারণ, এলাকার মানুষ মুন্নাকে পুরমন্ত্রীর কাছের লোক বলেই জানেন। ববি নিজেও তা গোপন করেননি। বরো চেয়ারম্যানের অফিসে বসে মুন্নার হয়ে পুলিশ অফিসারধের ধমকেছেন। এমনকী তাপস চৌধুরীর হত্যার পরে মহাকরণে দাঁড়িয়ে বলেছেন, “ইকবাল এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তা আমি বিশ্বাস করি না।”
পরে অবশ্য মুন্না প্রসঙ্গে আর মুখ খোলেননি ববি। বরং মুন্নার থেকে দূরত্ব তৈরির চেষ্টায় ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, ইকবাল তাঁর বিধানসভা এলাকার কাউন্সিলর। এলাকায় কাজ করতে গেলে তাঁকে কাউন্সিলরের সাহায্য নিতেই হতো। বিধায়ক হিসেবে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভাব-অভিযোগ শুনতে স্থানীয় বরো চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে গেলেও এলাকায় ইকবাল কী করে বেড়াচ্ছেন, তা তিনি জানতেন না বলেই ঘনিষ্ঠদের কাছে দাবি করেন ববি। কিন্তু তত ক্ষণে গার্ডেনরিচের জল অনেক দূর গড়িয়েছে। রাজনৈতিক ভাবে পরিস্থিতি অনেক জটিল হয়ে পড়েছে। খোদ মুখ্যমন্ত্রী ডেকে পাঠিয়ে ধমকেছেন ববিকে।
তৃণমূলের একাংশ জানান, মুখ্যমন্ত্রী নিহত পুলিশকর্মী তাপস চৌধুরীর বাড়িতে গিয়ে দোষীদের গ্রেফতার করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ঘটনার পরে রাজ্যপালও জানিয়েছিলেন, এফআইআরে নাম থাকা প্রত্যেককেই গ্রেফতার করা উচিত বলে তিনি মনে করেন। ফিরহাদের মতো মন্ত্রীদের এ ব্যাপারে কিছু বলার অধিকার নেই বলেও তিনি জানিয়ে দেন। প্রশাসনের শীর্ষ দুই কর্তার এই অভিমতের পরে ইকবালকে গ্রেফতার করার ব্যাপারে আর কোনও বাধা ছিল না বলে শাসক দলের একাংশের দাবি। এই কারণেই ইকবালকে গা-ঢাকা দিতে বলা হয়েছিল বলেও তাঁরা মনে করেন।
এখনও অধরা

অনিল (ইকবালের ছেলে)

শানু
• রাজা (ইকবালের শ্যালক)
• সানি (ইকবালের শ্যালক)
• তবরেজ আনসারি • আনোয়ার • ফৈয়াজ
• শামিম • টাকলা জাহাঙ্গির • আলি

তৃণমূলের এক নেতা জানান, প্রাথমিক ভাবে ঠিক ছিল, দিন কয়েক পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে ইকবাল ফের এলাকায় ফিরে আসবেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী এবং দলের একাংশ তাঁকে গ্রেফতারের ব্যাপারে অনড় থাকেন। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে ইকবাল-ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতারা তাঁকে আত্মসমর্পণ করার ব্যাপারে চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু আরাবুলের উদাহরণ মাথায় রেখেই সেই কথা মানতে রাজি ছিলেন না ইকবাল। এই নিয়েই তাঁর সঙ্গে দলের ওই নেতাদের দূরত্ব তৈরি হয়। ফোনে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ও হয়। এর মধ্যে তৃণমূলের একটি বড় অংশ বুঝতে পারেন, আসন্ন বিধানসভা অধিবেশনে বিরোধীরা বিষয়টিকে নিয়ে সরকারকে নাস্তানাবুদ করার চেষ্টা করবে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারেও উঠে আসবে বিষয়টি। তাই বিধানসভার অধিবেশনের আগেই যে কোনও মূল্যে মুন্নাকে ধরার জন্য সিআইডি-কে নির্দেশ দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার মুন্না গ্রেফতার হওয়ার পরে অনেকটাই হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন তৃণমূলের নেতারা। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল, স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বজায় রাখতে হলে, রাজধর্ম পালন করতে হলে ইকবালকে গ্রেফতার করতেই হবে।” যদিও শেষ পর্যন্ত মুন্না বা আরাবুলের গ্রেফতারে রাজধর্ম কতটা পালন হয়েছে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে শাসক দলের একাংশেই। তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার মন্তব্য, ‘‘এত দেরিতে কি রাজধর্ম হয়!”
একই প্রশ্ন বিরোধীদের গলাতেও। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রর প্রতিক্রিয়া, “এ ব্যাপারে কী বলব! কিন্তু এর পিছনে আসল লোক কে, তা নিয়ে আজ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর তো কোনও জবাব মেলেনি। ওঁকে দলের পক্ষ থেকে গা ঢাকা দিতে বলা হয়, তা টিভিতে দেখলাম।” মুন্নার ফেরার থাকার প্রেক্ষাপটের থেকেও গার্ডেনরিচ কাণ্ডের পিছনে কারা দায়ী, তার সদুত্তর জানা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন সূর্যবাবু। তাঁর মন্তব্য, “ঘটনার আগের দিন বোমা ফাটল, এক জন মারা গেল, তার জন্য কে দায়ী? কে পুলিশ কমিশনারকে ফোন করে কোনও ব্যবস্থা না নিতে বলেছিলেন? কার জন্য কমিশনারের চাকরি গেল এ সব নিয়ে আমি মুখ্যমন্ত্রীকে যা প্রশ্ন করেছিলাম, তা নিয়ে আজ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী হ্যাঁ বা না, কোনও জবাবই দেননি। মুন্নাকে কে পালানোর পরামর্শ দিয়েছিল, তার থেকেও এই সব প্রশ্নের জবাব অনেক বেশি জরুরি।”
তবে ইকবালের গ্রেফতারের ঘটনা নিয়ে শোরগোল পছন্দ করছেন না তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। এ দিন উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামে নজরুল মঞ্চে যুব তৃণমূলের প্রশিক্ষণ শিবিরের পর মুন্না প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মুকুলবাবু বলেন, “যখন সুশান্ত ঘোষ, লক্ষ্মণ শেঠরা গ্রেফতার হয়, তখন তো আপনারা এত হইচই করেন না।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.