দু’বছরের চেষ্টা সফল
চালকলের মেয়েরা পেলেন আলাদা শৌচাগার
-ও এক পরিবর্তন।
বাসন্তী বর্মন, দীপা কুজুর, মণি সরেন, লক্ষ্মী মুর্মুরা কাজ করেন চালকলে। দক্ষিণ দিনাজপুরের ৩৮টি আধুনিক চালকলে অধিকাংশ কাজ মেশিনে হলেও, ঝাড়াই-বাছাইয়ের কাজটা আজও করছে মেয়েরা। দিনে সাত-আট ঘণ্টা কাজ, কিন্তু ছিল না মেয়েদের শৌচাগার। দরকারে তাই ঝোপে-ঝাড়ে যেতে হত মেয়েদের।
গত দু’বছরের চেষ্টায় বাসন্তী-দীপারা ছবিটা বদলাতে পেরেছেন। “এখনও অবধি ২৪টি চালকলে মহিলা শ্রমিকদের জন্য আলাদা শৌচালয় তৈরি করা হয়ে গিয়েছে। বাকিগুলিতে কাজ চলছে,” জানালেন দক্ষিণ দিনাজপুর চালকল মালিক সমিতির সভাপতি অশোক জোয়ারদার। রামপুর রাইস মিলে গিয়ে দেখা গেল, পাকা বাথরুমের দেওয়াল উঠেছে লিন্টেল অবধি। আস্ত বাথরুম তৈরি হয়ে গিয়েছে পাল ব্রাদার্স রাইস মিলে। সেখানে সান্ত্বনা বর্মণ, বুধি রায় বললেন, “বাথরুম ছিল, কিন্তু পুরুষরাও যেত বলে আমাদের লজ্জা করত। আমরা আড়ালে যেতাম। এখন আমাদের আর কষ্ট নেই।”
নকশাল-প্রভাবিত চালকল মজদূর ইউনিয়ানের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সভাপতি রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, “গত ২০১০ সালে শ্রমিকদের একগুচ্ছ দাবি চালকল মালিকদের জানানো হয়। তার মধ্যে ছিল মেয়েদের শৌচাগারের বিষয়টিও। তারপরেই কাজ হয়েছে।” দক্ষিণ দিনাজপুরের সহ শ্রম কমিশনার চন্দন বণিক বলেন, “আইন অনুযায়ী সমস্ত চালকলে মহিলা-পুরুষদের জন্য আলাদা শৌচাগারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। বেশ কিছু বড় চালকলে তা থাকলেও, বাকিগুলিতে যাতে দ্রুত তা তৈরি করা হয়, তা দেখা হবে।”
গোটা রাজ্যের ছবিটা কেমন? উত্তর ২৪ পরগণায় ৩২টি রাইস মিল, কর্মীদের ৬০ শতাংশ মহিলা। সেখানে গত বছর তিনেকের মধ্যে সবক’টিতেই মেয়েদের জন্য শৌচাগার তৈরি হয়েছে, বললেন রাইস মিল মালিকদের সংগঠনের সম্পাদক দেবাশিস কুণ্ডু। মালিকদের বক্তব্য, শৌচাগার না রাখলে দক্ষ মহিলা শ্রমিকরা কাজ ছেড়ে দিচ্ছিলেন।
কিন্তু পিছিয়ে রয়েছে বর্ধমান। সেখানে রয়েছে আশিটিরও বেশি চালকল। মালিক সমিতির সম্পাদক দেবনাথ মণ্ডল বলেন, “মহিলাদের আলাদা শৌচাগার করার কথা আমরা নিজেরাও কখনও ভাবিনি, কোনও শ্রমিক ইউনিয়নের থেকে প্রস্তাবও পাইনি।” আইএনটিটিইউসি নেতা গোলাম জার্জিস, সিটু নেতা অশোক ঘোষ, সকলেই মনে করেন, মজুরি, নিরাপত্তা, পানীয় জলের মতো সমস্যার তুলনায় মেয়েদের শৌচাগার “আকাশের চাঁদ চাওয়া।” চালকল মালিক আবদুল মালেক বলেন, “বাড়িতে মেয়েদের আলাদা শৌচাগার থাকে? পরিবারে সকলে একই শৌচাগার ব্যবহার করেন। চালকলের কর্মীরাও তো একই পরিবার।”
এই দশা সব কর্মী মেয়েদেরই। নাগরিক মঞ্চের নব দত্ত জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত বড় কারখানাগুলো বাদ দিলে, অন্য অধিকাংশ কারখানায় পুরুষ-মহিলা কারও জন্যই নেই শৌচাগার। কিন্তু পুরুষরা পরোয়া করে না শৌচাগারের, সমস্যা মেয়েদেরই। শ্রমিক নেত্রী অনুরাধা তলোয়ার বলেন, “দু’টি ক্ষেত্রের মেয়েদের থেকে আমরা এ বিষয়ে অভিযোগ পাই খুব বেশি। যারা বাড়ি নির্মাণের কাজ করে, আর যারা একশো দিনের কাজ করে। এনআরইজিএ কাজ হয় খোলা মাঠে। ৩০০-৫০০ মেয়ে কাজ করে সারাদিন। অনেকেরই প্রস্রাবের পথে সংক্রমণ (ইউ টি আই) হয়ে যায়।”
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সঞ্জীব মুখোপাধ্যায় জানান, দীর্ঘক্ষণ বাথরুম যেতে না পারার জন্য মেয়েদের ইউটিআই-এর হার অত্যন্ত বেশি। তা থেকে কিডনি আক্রান্ত হয়। “নানা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ভারতে শ্রমিক মেয়েদের কিডনির অসুস্থতার কারণে উচ্চ রক্তচাপ হয় খুব বেশি।”
যেখানে রুখে দাঁড়াচ্ছে মেয়েরা, কাজ হচ্ছে সেখানে। ফলতা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সেক্টর ফাইভের কাগজ কলের শ্রমিক পুষ্প মণ্ডল বলেন, “আড়াই বছর আগে যখন কাজে ঢুকি, তখন মেয়েদের জন্য আলাদা কোনও শৌচাগার ছিল না। ছ’মাস ওই অবস্থায় কাজ করার পরে আমরা আপত্তি জানাই। তার পরে আমাদের জন্য আলাদা শৌচাগারের ব্যবস্থা হয়।” তবে, তাঁদের মিলের পাশেই কারখানা তৈরির কাজ করছে যে মেয়েরা, তাদের শৌচাগার নেই, বললেন পুষ্প।
কত মেয়ে আজও জল না-খেয়ে, ঝোপঝাড়ের ভরসায় কাজ করেন দিনে সাত-আট ঘণ্টা? জানার উপায় নেই। অতিরিক্ত লেবার কমিশনার এস এইচ আকসারি জানালেন, “আমাদের ইনস্পেক্টররা দেখেন, শ্রমিকরা নির্দিষ্ট হারে নিয়মিত বেতন পাচ্ছে কি না, পুরুষ-মহিলা একই কাজের জন্য সমান মজুরি পাচ্ছে কি না। আইনত মেয়ে শ্রমিকদের জন্য শৌচাগার বা ক্রেশ থাকার কথা হলেও, কোথায় তা নেই, সে বিষয়ে কোনও রিপোর্ট দেন না তাঁরা। তাই সরকারের কাছে কোনও পরিসংখ্যান নেই। শ্রমিক ইউনিয়ন বা আর কারও তরফ থেকে মেয়েদের শৌচাগার নিয়ে কোনও অভিযোগও আমরা কখনও পাইনি। পেলে হয়তো বিষয়টাতে নজর দেওয়া হত।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.