সম্পাদকীয় ২...
নির্ভয় আকাশের দাবি
দুই হাজার তেরো সালের নারী দিবসের একটি বিশিষ্টতা রহিয়াছে। পূর্বের যাবতীয় নারী দিবস হইতে তাহার গুরুত্ব আলাদা। দুই হাজার তেরো সাল ভারতীয় নারী বিষয়ে একটি পুরাতন দাবি নূতন ভাবে তুলিয়া ধরিয়াছে, পণ করিয়াছে যে সেই দাবির প্রতি সুবিচার চাই। গত ডিসেম্বরে দিল্লি গণধর্ষণের পর যে দীর্ঘ জনজাগরণ দেখিয়াছে রাজধানী এবং দেশের অন্যান্য শহর, যে ভাবে লাগাতার সেই আন্দোলনকে জিয়াইয়া রাখিয়া এক দিকে নারীসুরক্ষার দাবি, অন্য দিকে ধর্ষক ও নারী-অত্যাচারীর কড়া শাস্তির দাবি অনমনীয় স্বরে উত্থাপিত হইয়াছে, রাষ্ট্রকে যত দ্রুত সম্ভব পদক্ষেপে বাধ্য করিতেছে সমাজ, তাহা এক কথায় অভূতপূর্ব। এই প্রেক্ষিতেই এ বারের নারী দিবসটি গুরুত্বপূর্ণ: এই দিনটি সমগ্র জাতিকে স্মরণ করাইয়া দিক, ভারতবর্ষে এই মুহূর্তে একটি যুদ্ধ চলিতেছে, নারীহিংসার বিরুদ্ধে যুদ্ধ। শপথ প্রচারিত হউক, ভারতের রাষ্ট্র ও সমাজ যদি নারীর প্রাপ্য মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত না করিতে পারে, তবে এই যুদ্ধ থামিবে না।
সামাজিক চাপের সামনে রাষ্ট্রও এত দিনে কিছু সাড়া দিতেছে। নারীহিংসার বিরুদ্ধে যে সংশোধনী বিল গত ডিসেম্বরের গোড়াতেই পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডিং কমিটিতে প্রেরিত হইয়াছিল, সেটি নানা অর্থেই অত্যন্ত সীমিত, সুতরাং প্রতিবাদযোগ্য ছিল। অথচ তখন সেই প্রতিবাদ নেহাতই ‘নারীবাদী বাড়াবাড়ি’ বলিয়া উড়াইয়া দিবার চেষ্টাও কম ছিল না। অতঃপর ১৬ ডিসেম্বরের কালান্তক গণধর্ষণ। এবং তাহার পর ২৩ ডিসেম্বর ত্বরিত জাস্টিস বর্মা কমিটি গঠন। এক মাসের মধ্যে, আবারও আর এক অভূতপূর্ব ঘটনা হিসাবে জাস্টিস বর্মা কমিটির রিপোর্ট দাখিল। ৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় দাবিকে সম্মানপ্রদর্শনপূর্বক, তড়িঘড়ি অর্ডিন্যান্স জারি, সংসদের বাজেট অধিবেশনে বিতর্ক-আলোচনার পর সংশোধনী বিল আনিবার বন্দোবস্ত। সমগ্র দেশ অপেক্ষায়, বিশেষত নারী দিবস উদ্যাপনের আবহে: কী সিদ্ধান্তে পৌঁছন জনপ্রতিনিধিরা, এত সংবেদনশীল একটি সংকটের কী মীমাংসা করেন।
বস্তুত নারীহিংসার প্রশ্নে এই সংবেদনশীলতার দাবিটিই ১৬ ডিসেম্বর-পরবর্তী গণ-আন্দোলন ফিরাইয়া আনিয়াছে। সেই দিক হইতে বর্মা কমিটির রিপোর্টটি এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত। নারীসুরক্ষার বিবিধ দিক ইহা যত্নসহকারে তুলিয়া আনে, সাধারণ হিংসাত্মক কার্যকলাপের বাহিরে গিয়া দাম্পত্য ধর্ষণ কিংবা ধর্ষণ-তদন্তের প্রকার লইয়াও মৌলিক প্রশ্ন তুলিয়া ধরে, নারী-সুরক্ষা ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রেও যৌনসুরক্ষার ব্যবস্থা কতটা জরুরি ও আবশ্যিক, তাহা স্মরণ করাইয়া দেয়। একই সঙ্গে ইহাও অপ্রত্যাশিত নহে যে, পরবর্তী অর্ডিন্যান্সটিতে কিন্তু বর্মা কমিটি রিপোর্টের প্রগতিশীল ও সংবেদনশীল দৃষ্টিভঙ্গিটি প্রতিফলিত হয় নাই, আবারও তাহা গতানুগতিক সীমাবদ্ধতায় ফিরিয়া গিয়াছে। এ বার সংসদীয় মঞ্চে বর্মা কমিটির প্রশ্নগুলি নূতন ভাবে উত্থাপিত হইবে কি? এত বড় জনজাগরণের পরও কেবল সামাজিক সংস্কারের জগদ্দল চাপে যদি জন-প্রতিনিধিরা সংবেদনশীলতার বহুবাঞ্ছিত পরীক্ষায় অসফল হন, সেই দায়িত্বজ্ঞানহীনতা হইবে অক্ষমার্হ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.