বনগাঁ-বাগদা রোডে বন্ধ বেশ কিছু বাসরুট
চালক-যাত্রী বিবাদে ভিলেন রাস্তাই
ক নজরে দেখলে মনে হবে, রাস্তা নয়, ছোটখাটো ডোবা।
বনগাঁ থেকে বাগদার বয়রা— ৩৩ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিলে যে কেউ এই ধন্দে পড়তে বাধ্য। বনগাঁ মহকুমার সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র এই রাস্তার গুরুত্ব বাগদার কয়েক লক্ষ বাসিন্দার কাছে অপরিসীম। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বনগাঁ থেকে বাগদা পর্যন্ত রেললাইন তৈরির ঘোষণা যোগাযাগের বিকল্প উপায় হিসাবে বাগদাবাসীকে স্বস্তি দিয়েছিল। কাজ শুরুর জন্য শিলান্যাসও হয়। কিন্তু জমিজটের কারণে প্রকল্প থমকে গিয়েছে। ফলে রেলপথ পাওয়ার স্বপ্ন ভুলেছেন বাগদার মানুষ। এই অবস্থায় এই সড়কপথই তাঁদের কাছে ‘জীবনরেখা’। কিন্তু প্রায় ১০ বছর ধরে পূর্ণাঙ্গ সংস্কার না হওয়ায় ‘জীবনরেখা’ এখন বাগদার বাসিন্দাদের কাছে আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ছবি: পার্থসারথি নন্দী।
পিচের চাদর উঠে গিয়ে রাস্তার বেশিরভাগ অংশে বেরিয়ে পড়েছে বড় বড় পাথরের টুকরো। মাঝেমধ্যে অবশ্য স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি মেনে জোড়াতালি দিয়ে খানাখন্দ ভরাট করা হয়। কিন্তু কিছু দিন পরেই ফের আগের অবস্থায় ফিরে যায় রাস্তা। তার উপর বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। গর্তগুলি জলে ভরে গিয়ে গাড়ির চালকদের কাছে আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। যানবাহন উল্টে যাওয়া থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দু’টি গাড়ির মধ্যে সংগর্ষের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। খারাপ রাস্তার কারণে কমে গিয়েছে যানবাহন। মূলত বাস ও অটো চলাচলের এই রাস্তায় বহু বাস মালিকই যন্ত্রপাতি খারাপ হয়ে যাওয়ার জন্য বাস তুলে নিয়েছেন। বনগাঁ-বয়রা বাস সিন্ডিকেটের সম্পাদক দেবদাস মণ্ডল বলেন, “ওই সড়কে বাস চালিয়ে রোজই কোনও না কোনও যন্ত্রাংশ বিকল হচ্ছে বা ভেঙে যাচ্ছে। সারাই করতে বহু টাকা খরচ হচ্ছে। ফলে বাসমালিকেরা লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না। তবুও সাধারণ যাত্রীদের কথা ভেবেই আমাদের বাস চালাতে হচ্ছে। যদিও ইতিমধ্যেই অনেক বাসমালিক বাস তুলে নিয়েছেন।” একই বক্তব্য অটোচালকদেরও। বেহাল রাস্তার কারণে স্বাভাবিক গতির চেয়ে অনেক কম গতিতে গাড়ি চালাতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চালকেরা। এর ফলে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছতে অনেক সময় লাগছে। চালকদের অভিযোগ, এ জন্য রোজই তাঁদের সঙ্গে যাত্রীদের বচসা লেগে রয়েছে।
শুধু উত্তর ২৪ পরগনার মানুষই নন, নদিয়ার মানুষের কাছেও এই রাস্তার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। বনগাঁ যাতায়াতের জন্য এই রাস্তাই ব্যবহার করেন তাঁরা। তা ছাড়া জেলার অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র পারমাদান অভয়ারণ্যে যেতেও এই রাস্তাই ব্যবহার করতে হয় পর্যটকদের। কিন্তু খারাপ রাস্তার কারণে অনেকেই এই অভয়ারণ্যে আসার উৎসাহ হারাচ্ছেন। সবচেয়ে সমস্যা হচ্ছে হাসপাতালে পৌঁছতে। যান চলাচল কমে যাওয়ায় বহু ক্ষেত্রে ভ্যানরিকশায় রোগী নিয়ে যেতে হচ্ছে। তাতে রোগী আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অনেকেই স্কুলে হেঁটে যাতায়াত করছে।
সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সড়ক সুরক্ষা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান তথা বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক এই রাস্তা সংস্কারের দাবি জানিয়ে পূর্ত দফতর-সহ প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে আবেদন জানান। রাস্তা সংস্কারের ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিলেন স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ মন্ত্রী উপেন বিশ্বাসও। গোপালবাবু জানান, সংস্কারের দাবির প্রেক্ষিতে ওই রাস্তার জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। জেলা পূর্ত দফতর সূত্রে খবর, ওই রাস্তার পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যেই ১১ কোটি টাকা অনুমোদন হয়েছে। পূর্ত দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার মুস্তাফা কামাল বলেন, “প্রথম পর্যায়ে বনগাঁ থেকে হেলেঞ্চা পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার অংশের পূর্ণাঙ্গ সংস্কার করা হবে। এ জন্য টেন্ডারও হয়ে গিয়েছে। পরে বাকি অংশ অর্থাৎ হেলেঞ্চা থেকে বয়রা পর্যন্ত সংস্কার করা হবে। এ জন্য নাবার্ডের কাছে ঋণ চাওয়া হয়েছিল তারা তা অনুমোদন করেছে।”
শুধু পূর্ণাঙ্গ সংস্কারই নয়, রাস্তার দু’পাশে ৫ ফুট করে চওড়া করারও পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে পূর্ত দফতর সূত্রের খবর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.