ফের ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু ডুয়ার্সে
তীব্র গতিতে ছুটতে থাকা ট্রেনের ধাক্কায় ফের দাঁতাল হাতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটল ডুয়ার্সে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭ টা নাগাদ ডুয়ার্সের রাজাভাতখাওয়ার কাছে ঘটনাটি ঘটেছে। নয়াদিল্লি থেকে গুয়াহাটিগামী সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেসের ধাক্কায় দাঁতালটির মৃত্যু হয়। রেল ইঞ্জিনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দাঁতালটির ডান দাঁতের বেশ কিছুটা অংশ ভেঙে যায়। মাটিতে পড়ে থাকা দাঁতের খানিকটা অংশ ব্যাগে পুরে নেন ট্রেনের দুই যাত্রী। বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে একজন মহিলা সহ অপর একজন ওষুধের দোকানের কর্মচারীকে আটক করেন। অসুস্থতার কারণে ওই মহিলাকে ছেড়ে দেওয়া হলেও রামেন্দ্র সিংহ নামে অসমের করিমগঞ্জের বাসিন্দা ওই যাত্রীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
প্রাথমিক তদন্তের পরে রেল ও বন দফতরের অফিসার-কর্মীদের অনেকেরই অনুমান, কোনও কারণে হাতিটি ক্ষিপ্ত হয়ে সরাসরি ইঞ্জিনে ধাক্কা মারায় এমন ঘটনা ঘটেছে। বনকর্মীদের একাংশ জানান, গত ৫ জানুয়ারি রাতে ঝাঝা এক্সপ্রেসের ধাক্কায় রাজাভাতখাওয়ার ওই এলাকায় ৫ টি হাতি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ওই হাতিটিকে তার পর থেকে মাঝেমধ্যেই রেললাইনের আসেপাশে দেখা যাচ্ছিল। কয়েকজন বনকর্মী হাতিটিকে ট্রেনের পাশে ছুটতেও দেখেছেন। তাঁদের সন্দেহ, হাতিটি সরাসরি ইঞ্জিনে ধাক্কা মারায় দাঁত ভেঙেছে। ট্রেনের চালকও বন দফতরকে জানান, তিনি ব্রেক কষলে ট্রেনের গতিবেগ কমতে থাকে। তখন দেখেন দাঁতালটি সোজা ছুটে ইঞ্জিনে ধাক্কা মারল। এর পরে ইঞ্জিনের মুখে থেঁতলে প্রায় ২০০ মিটার যাওয়ার পরে হাতিটি লাইনের ধারে ছিটকে পড়ে।
ট্রেনের ধাক্কায় ফের একটি পূর্ণবয়স্ক দাঁতাল হাতির মৃত্যু হল ডুয়ার্সে। ছবি: নারায়ণ দে।
বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ক্ষেত্র অধিকর্তা রবীন্দ্র পাল সাইনি বলেন, “দাঁতালটির বয়স প্রায় ৬৫ বছর। গত জানুয়ারি মাসে ট্রেনের ধাক্কায় পাঁচটি হাতি মারা যায়। ট্রেন দেখে হাতিটি দৌড়ে ইঞ্জিনে ধাক্কা মারে বলে শুনেছি। মনে হচ্ছে বুনোটি ওই দলের সদস্য ছিল।” তিনি জানান, হাতিটি ইঞ্জিনের সামনের চাকায় আটকে যাওয়ায় ট্রেনটি প্রায় ২০০ মিটার দূর পর্যন্ত হাতিটিকে টেনে নিয়ে যায়। দুর্ঘটনার জন্য টানা পাঁচ ঘণ্টা ডুয়ার্সের ওই পথে রেল চলাচল বন্ধ ছিল। বেলা সাড়ে ১২ টা নাগাদ ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। দু’মাসের মাথায় সকাল বেলা প্রায় একই জায়গায় ট্রেনের ধাক্কায় দাঁতালের মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। ২০০৪ সালে ডুয়ার্সের ওই লাইন ব্রডগেজ হয়। তার পর থেকে এই নিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় ৩৯টি হাতির মৃত্যু হল। অতীতে ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যুর পরে বন দফতর ও রেল কর্তৃপক্ষের মধ্যে যে ধরনের চাপানউতোর হয়েছে, এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বন দফতরের দাবি, ট্রেনটি ওই এলাকায় কম গতিতে চলার কথা। কিন্তু, ট্রেনটি অন্তত ১০০ কিলোমিটার গতিতে ছুটছিল বলে সন্দেহ করছে বন দফতর।
মৃত্যু মিছিল
পক্ষান্তরে, রেল কর্তৃপক্ষের যুক্তি, ওই এলাকায় হাতির গতিবিধি জানার জন্য বন দফতর ঠিকঠাক নজরদারি চালালে এমন ঘটত না। পাশাপাশি, রেলের অফিসার-কর্মীদের একাংশের দাবি, হাতিটিকে দেখে ট্রেনের গতি কমালেও সেটি নিজেই ছুটে গিয়ে ইঞ্জিনে ধাক্কা মারে। কোনও কারণে হাতিটি ক্ষিপ্ত হয়ে ওই কান্ড করেছে বলে রেলকর্মীদের কয়েকজনের অনুমান। যদিও বন দফতর বিষয়টি মানতে নারাজ।
ওই ঘটনার পরে রেল মন্ত্রকের আধিকারিকদের সাথে বৈঠক করেন বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন। পরে তিনি বলেন, “ট্রেনের ধাক্কায় বার বার হাতি মৃতুর ঘটছে। হাতিটি সরাসরি ধাক্কা মেরেছিল কি না তদন্ত সাপেক্ষ ব্যাপার। এটা বলতে পারি, রেল নির্দেশিকা মানছে না। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে রেল ও বন বিভাগ ২৪ ঘন্টা যৌথ নজরদারি চালাবে। দমনপুর রেঞ্জ থেকে ডিমা নদী পর্যন্ত এই নজরদরি চলবে। রেলের তরফে দুজন কর্মী ও ওয়াকিটকির ব্যবস্থা করা হবে। বন দফতর দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে বনবস্তির যুবকদের কাজে লাগাবে। মুখ্যমন্ত্রীকে সব জানিয়েছি। তা ছাড়া, হাতি যাতে রেল লাইনের ধারে না-আসে সে জন্য বিশেষ সরঞ্জাম বসানোর কথা ভাবা হয়েছে।”
আলিপুরদুয়ারের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার বীরেন্দ্র কুমার জানান, তাঁরা রাজ্য বন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে হাতির সঙ্গে ট্রেনের সংঘাত কমাতে সবরকম চেষ্টা করেন। ডিআরএম জানান, এদিনও চালক ব্রেক কষে ট্রেনের গতি কমানোর চেষ্টা করলেও হাতিটি সরাসরি গিয়ে ধাক্কা মেরেছে বলে চালক জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “রাত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত ওই এলাকায় ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে ট্রেন চলে। যে সময় দুর্ঘটনা ঘটেছে, সে সময় গতিবেগ নিয়ন্ত্রণের কোনও নির্দেশ নেই। তবে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পরে সব স্পষ্ট ভাবে বলা যাবে।” পাশাপাশি, এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে জানান, ওই হাতিটিকে কদিন ধরেই রেললাইনের পাশে ঘোরাফেরা করতে দেখা গিয়েছে। সে জন্য বন দফতর নজরদারি চালিয়ে হাতিটিকে গভীর জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া কিংবা রেলের কন্ট্রোল রুমে সতর্ক বার্তা পাঠায়নি কেন সেই প্রশ্নও উঠেছে।
বন দফতরের একাধিক অফিসার জানান, ২০০০ সালে উত্তরবঙ্গে হাতির সংখ্যা ছিল ২০০টি। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৫৩০টি। অথচ বনকর্মীর সংখ্যা কমছে। ফলে, নজরদারিতে ত্রুটি থেকে যাচ্ছে বলে অফিসারদের অনেকেই স্বীকার করেছেন। হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, “ওই লাইনে অপ্রয়োজনীয় দ্রুতগতির ট্রেন চালানো বন্ধ করতেই হবে। না হলে হাতির মৃত্যু কমানো যাবে না।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.