দেহ কার, নাটকীয় তর্কে নিরালায় অন্ত কলিমের
নিথর দেহটা শুয়ে আইসিইউ-এ। নার্সিং হোমের বাইরে জড়ো হয়েছে কয়েক’শো লোক। নীচে কোমর বেঁধে দাঁড়িয়ে দুই মহিলা। এবং দুই পুরুষও! নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষ ভেবেই পাচ্ছেন না, ডেথ সার্টিফিকেট দেবেন কার হাতে?
সিনেমায় এমন হয়। আসলে বাস্তবেও হয়! প্রাক্তন মন্ত্রী কলিমুদ্দিন শামসের মৃত্যু পরবর্তী কয়েক ঘণ্টায় এই শহরে এমনই হয়েছে!
জীবদ্দশায় বিতর্কের পরোয়া করেননি বহুভার্যা তিনি। অন্তরালের জীবনে চিরতরে পর্দা নেমে যাওয়ার পরে বিতর্কের ভয়ে সেই কলিমুদ্দিনেরই শেষকৃত্য কি না মিটিয়ে ফেলতে হল নিভৃতে। মহাকরণ, বিধানসভা বা প্রয়াত নেতার দলীয় দফতরে মালা দেওয়ার পরিচিত আচার ছাড়াই।
রাজনৈতিক জীবনের শেষ তিন বার নলহাটি থেকে বিধায়ক হন কলিমুদ্দিন। ত্রিপাক্ষিক লড়াইয়ে ভোট ভাগাভাগির ফায়দা তুলে এ বার নলহাটি পুনরুদ্ধার করেছে তাঁর পুরনো দল ফরওয়ার্ড ব্লক। আর নার্সিং হোমে পরিবারের ত্রিপাক্ষিক লড়াইয়ের ফয়সালা হয়েছে তৃণমূলের এক প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে! যার ফলে খিদিরপুরের পুরনো বাড়িতে এক রাতের জন্য ফিরেছিল কলিমুদ্দিনের মরদেহ। অদৃষ্টের মোচড় এমনই!
ডাকাবুকো ফব নেতা কলিমুদ্দিন বিয়ে করেন তিন বার। প্রথমা স্ত্রী প্রয়াত। সেই পক্ষের দুই ছেলে মইনুদ্দিন ও নিজামুদ্দিন এখনও কলিম পরিবারে ফব-র পতাকা ধরে রেখেছেন। মইনুদ্দিনেরা তিন ভাই, এক বোন।
দ্বিতীয়া স্ত্রী প্রাক্তন শিক্ষিকা। তিনি, তাঁর দুই মেয়ে, এক ছেলে কেউ রাজনীতিতে নেই। তৃতীয়া স্ত্রী অধুনা তৃণমূলে। গোলমাল সেখান থেকেই!
তৃণমূল ও ফব সূত্রে খবর, প্রাক্তন মন্ত্রীর জীবনাবসানের পরবর্তী পর্ব আগাগোড়া নাটকীয়তায় মোড়া! যার সংক্ষিপ্ত কাহিনি এ রকম: দীর্ঘ দিনের অসুস্থতার জেরে শুক্রবার শেক্সপিয়র সরণির একটি নার্সিং হোমে ভর্তি করা হয় অধুনা সল্টলেক নিবাসী কলিমুদ্দিনকে। ভর্তি করেছিলেন তৃতীয়া স্ত্রী শাকিলা। সোমবার বিকালে ফব-র রাজ্য দফতরে হঠাৎ একটা ফোন! কলিমুদ্দনের মৃত্যু সংবাদ। মরদেহের ব্যাপারে যেন যোগাযোগ করা হয়।
ফোন পেয়ে দলের রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষ কিছু যুব নেতা-কর্মীকে নার্সিং হোমে পৌঁছতে নির্দেশ দেন। যাওয়ার পথেই নিজামুদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁরা জানতে পারেন, বাবার মৃত্যু সংবাদ তক্ষুণি পেয়ে দুই ভাইও নার্সিং হোম রওনা হচ্ছেন।
ফব-র দুই তরফ মিলিত হয় নার্সিং হোমেই। এবং উপরে উঠে দেখে, প্রয়াত নেতার দ্বিতীয়া স্ত্রী সাজদা কলিম এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে আইসিইউ-এর সামনে। তাঁরা চান, মরদেহ তাঁদেরই দিয়ে দেওয়া হোক। আর মইন-নিজামরা চাইছেন, বাবার দেহ নিয়ে গিয়ে দলের তরফে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে যথাযথ মর্যাদায় শেষকৃত্য সারতে।
কিছু ক্ষণ পরে তৃতীয়া স্ত্রী শাকিলা হাজির। তাঁর দাবি, স্বামীর মরদেহ শুধু তাঁকেই দিতে হবে! শেষ জীবনে স্বামীকে তিনিই দেখেছেন। এই টানাপোড়েন চলতে চলতেই বাইরে হাজির খিদিরপুরের এক দঙ্গল ফব সমর্থক। তাঁরা প্রয়াত নেতার মরদেহ পুরনো বাড়িতেই ফিরিয়ে নিতে চেয়ে সরব! নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষ তখন ঘামছেন!
এমন সময়ই প্রায় দেবদূতের মতো প্রবেশ তৃণমূল সাংসদ সুলতান আহমেদের। ভিড় কাটিয়ে তিনি সটান উপরে। কিছু ক্ষণ বাদে নীচে নেমে এসে তাঁর ঘোষণা, মৃত্যুর পরে বাবার দেহ বড় ছেলের হাতেই দেওয়া হোক। আগে যা-ই হয়ে থাকুক না কেন। স্বস্তি মইনুদ্দিনদের! তাঁরাই এ বার মরদেহ খিদিরপুর নিতে উদ্যোগী।
সুলতানের সমাধানসূত্র দেখে কলিমুদ্দিনের দ্বিতীয়াও তখন প্রথমার পরিবারের সঙ্গে সমঝোতা করে নিয়েছেন! একঘরে তৃতীয়া। তাঁকে এ বার ফব কর্মী-সমর্থকেরা ‘পরামর্শ’ দিচ্ছেন, এক-আধ ঘণ্টা পর্যন্ত নার্সিং হোমের বাইরে যাবেন না! ‘অপ্রীতিকর’ কিছু ঘটে যদি! বাম নেতার পরিবারের এমন কিস্সা সামলে দিল্লি থেকে মঙ্গলবার সুলতান বলছেন, “আমি না-গেলে কিছু ঘটে যেতে পারত! শাকিলা (যিনি এখন তৃণমূল করেন বলে উলুবেড়িয়ার সাংসদ জানাচ্ছেন) মুকুল রায়কে ফোন করছিলেন। তিনি তো তখন বাংলাদেশে। আমি গিয়ে বললাম, দু’পক্ষই যখন দাবি করছে, তার চেয়ে বড় ছেলের হাতে মরদেহ তুলে দেওয়া হোক। দেহ তো ভাগ করা যায় না! আমার পরামর্শ মেনেই নার্সিং হোম কাজ করেছিল বলে অন্য রকম আর কিছু ঘটেনি!”
খিদিরপুরে গিয়ে পড়ার পরে দুই পরিবার মিলে আর ‘অন্য রকম’ কিছু ঘটতে দেয়নি। শাকিলা আর সে দিকে যাননি। একবালপুরের গোরস্থানে এ দিন শেষকৃত্য হয়ে গিয়েছে। সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। বাড়িতে ফব-র অশোকবাবু। বিধানসভায় ছুটি হয়েছে অর্ধ দিবসে।
কিন্তু মহাকরণ বা বিধানসভায় কেন গেল না প্রাক্তন মন্ত্রীর দেহ? ফব নেতা হাফিজ আলম সৈরানির জবাব, “পরিবারের সবাই এতে একমত ছিল না।” আর সুলতান বলছেন, “মৃত্যুর পরে মানুষ শেষমেশ পরিবারের সম্পত্তি। যা করেছে, ভালই করেছে!”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.