পাতালপ্রবেশে আতঙ্ক ফ্লোরিডায়
বিছানায় ঘুমিয়েছিলেন জেফ বুশ। আচমকা বীভৎস আওয়াজ। শুনেই জেফের ঘরের দিকে পড়ি কি মরি ছুট দেন তাঁর ভাই জেরেমি। ঢুকতেই চোখে পড়ে ঘরের ভিতর তৈরি হয়েছে এক বিশাল গর্ত। পোশাকি নাম ‘সিঙ্কহোল’। আর সেই গর্তের ভিতর থেকেই শোনা যাচ্ছে জেফের আর্তনাদ। কোনও কিছু না ভেবে গর্তে ঝাঁপ দেন জেরেমি। কিন্তু চেষ্টাই সার। খুঁজে পাননি ভাইকে। এবং উদ্ধারকারী দলের আশঙ্কা, সিঙ্কহোলেই মৃত্যু হয়েছে জেফের। বৃহস্পতিবার রাতে দুর্ঘটনাটি ঘটে ফ্লোরিডার ব্র্যান্ডনে।
তার পরে কেটে গিয়েছে গোটা দু’টো দিন। অথচ উদ্ধারকাজ এগোনো যাচ্ছে না কিছুতেই। সৌজন্যে? সেই সিঙ্কহোল। উদ্ধারকারী দলের দাবি, জেফের শোওয়ার ঘর যে সিঙ্কহোলের ‘প্রাণকেন্দ্র’, তা আপাতদৃষ্টিতে তিরিশ ফুট চওড়া হলেও মাটির তলায় সেই সিঙ্কহোল অন্তত ১০০ ফুট চওড়া হতে পারে।
সিঙ্কহোলের কারণে ঘিরে রাখা হয়েছে বাড়ি। ফ্লোরিডায়। ছবি: রয়টার্স
ইঞ্জিনিয়ারদের ধারণা, গভীরতায় ওটি প্রায় ৫০ ফুট। অর্থাৎ মাটির উপর থেকে দেখে বোঝা না গেলেও ফ্লোরিডার ওই এলাকার বেশ বড়সড় অঞ্চল যে কোনও মুহূর্তে চলে যেতে পারে সিঙ্কহোলের গহ্বরে। তবে জেফের ছোট আকাশ-নীল রঙের গোটা বাড়িটিই যে এখন সিঙ্কহোলের উপর ঝুলছে, সে ব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিত উদ্ধারকারী দল। আর বিপদটা সেখানেই। ভারী যন্ত্রপাতি কিংবা দক্ষ কর্মী কাউকেই ওই বাড়ির ভিতর পাঠাতে ভরসা পাচ্ছেন না তাঁরা।
ঠিক কী এই সিঙ্কহোল? কতটা ভয়াবহ? কী ভাবেই বা তৈরি হয় তা?
বিশেষজ্ঞদের মতে, সিঙ্কহোল আসলে আচমকা তৈরি হওয়া এক বিশাল গর্ত। বিভিন্ন কারণে তা তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। যেমন— ভূপৃষ্ঠের তলদেশের ক্রমাগত ক্ষয়। কিংবা ক্রমাগত জল জমে তলদেশের গলে যাওয়া। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, মূলত বেলেপাথর, চুনাপাথর, এবং লবণ-প্রধান উপাদান দিয়ে তৈরি ভূ-স্তর জলে সহজেই গলে যায়। ফলে ধীরে ধীরে মাটির তলায় তৈরি হয় গর্ত। একসময় আচমকা খসে পড়ে মাটির উপরিভাগ।
ঠিক যেমনটি হয়েছে ফ্লোরিডার ব্র্যান্ডনে। আমেরিকার জিওলজিক্যাল সার্ভে জানাচ্ছে, শুধু ফ্লোরিডা নয় টেক্সাস, আলাবামা, মিসৌরি, কেন্টাকি, টেনেসি, পেনসিলভ্যানিয়ার মতো দেশের বিস্তীর্ণ এলাকাও সিঙ্কহোলের সমস্যার শিকার। তবে সিঙ্কহোলে পড়ে মৃত্যুর সংখ্যাটা খুব বেশি নয়। ফলে সে দিক থেকে দেখলে জেফের ঘটনাটি খুবই বিরল।
এবং একই সঙ্গে ‘ট্র্যাজিক’ও বটে। কারণ বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘটনাটি আচমকা হলেও অন্তত কয়েক ঘণ্টা আগে থেকে কিছু না কিছু ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু জেফের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনও ইঙ্গিত আগে থাকতে মেলেনি। ফলে পুরো ঘটনাটি নিয়ে সতর্কতা নেওয়ার কোনও সুযোগই পায়নি বুশ পরিবার। জেরেমির আক্ষেপ তাই যাচ্ছে না কিছুতেই। বলেই চলেছেন, “আমি খালি একটা বড়সড় গর্ত দেখেছিলাম। আর তার ভিতর দিয়ে দেখেছিলাম ওঁর খাটের উপরি-অংশটা। ....খালি শুনতে পাচ্ছিলাম আমার নাম ধরে চিৎকার করছে আমার ভাই। আর আমি কিছু করতে পারলাম না।” ভাইকে বাঁচাতে গর্তে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। পরে উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা এসে উদ্ধার করে তাঁকে। গর্তে নামানো হয়েছে ক্যামেরা এবং আওয়াজের হদিস দিতে পারে এমন যন্ত্র। সীমাবদ্ধতার মধ্যেও চেষ্টার ত্রুটি নেই। কিন্তু জেফের আওয়াজ নেই। ‘আশার আওয়াজ’ না মেলায় তাই তীব্র হচ্ছে আশঙ্কা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.