তাপ বাড়ছে সুড়ঙ্গে, সমস্যায় মেট্রো
টানেলের হাওয়া চলাচলের ব্যবস্থা তো পুরনো হয়েছিলই, তার সঙ্গে গোদের উপর বিষফোঁড়া এসি রেক থেকে বেরোনো গরম হাওয়া। এই জোড়া ফলাতেই শহরে মেট্রোর ভূগর্ভস্থ টানেলে ক্রমাগত বাড়ছে তাপমাত্রা। তবে কর্তৃপক্ষের আশ্বাস, তাপমাত্রা বৃদ্ধি কমাতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আসন্ন গরমেই ফল মিলবে।
কী অবস্থা ভূগর্ভস্থ টানেলের? মেট্রো সূত্রের খবর, গত আড়াই দশকে টানেলের হাওয়া চলাচল ব্যবস্থার তেমন পরিবর্তন হয়নি। ফলে মেশিনগুলি পুরনো হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এসি রেক চলার আগে বিষয়টি সে ভাবে নজরে আসেনি কর্তৃপক্ষের। এক মেট্রো কর্তার বক্তব্য, “শুধু এসি রেক-ই নয়, ট্রেন ও যাত্রীসংখ্যা বেড়েছে। নতুন স্টেশন তৈরি হওয়ায় ট্রেনের ইঞ্জিনও বেশি গরম হচ্ছে। সব মিলিয়ে বাড়ছে তাপমাত্রা।” ওই মেট্রোকর্তা জানান, গত এক বছরে চাঁদনি চক, এসপ্ল্যানেড, শোভাবাজার, শ্যামবাজার ইত্যাদি স্টেশন থেকে যাত্রীদের অভিযোগ আসছিল। তার পরেই মেট্রোর ইঞ্জিনিয়ারেরা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শুরু করেন। গত ৭-৮ মাস ধরে ইঞ্জিনিয়ারেরা দফায় দফায় সমীক্ষা চালান। তার পরেই মেট্রোর হাওয়া চলাচল ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করার চেষ্টা চলছে।
মেট্রোর এক ইঞ্জিনিয়ার জানান, প্রথমে ভিতরের গরম বাতাস বার করে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে বিশুদ্ধ করে টানেলে ঢোকানো হয় জলীয় বাষ্প-সহ ঠান্ডা বাতাস। এই প্রযুক্তির জন্য এত দিন যে যন্ত্রগুলি ব্যবহৃত হচ্ছিল, তা বহু পুরনো। কয়েকটি ঠিক ভাবে কাজও করছিল না। ফলে যে পরিমাণ বাতাস বেরিয়ে যাওয়ার কথা তা বার করা যাচ্ছিল না। ঢুকছিল না ঠান্ডা বাতাসও। সে কারণেই তাপমাত্রা বেড়ে যাত্রীদের অস্বস্তি বাড়ছিল। মেট্রো রেল ভবনের এক সূত্র বলছেন, কলকাতা মেট্রোর টানেলে সাধারণত ২৭ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকে। কিন্তু মাঝেমধ্যেই তা ৩০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাচ্ছিল। বাতাসের আর্দ্রতা ও গতিবেগ মিলিয়ে কার্যকর তাপমাত্রা ৮৫ ইটি (এফেক্টিভ টেম্পারেচার)। রেলের নিয়মে তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রির উপরে উঠলেই চালু হয়ে যাওয়ার কথা হিমেল বাতাস পরিচালন ব্যবস্থা। আবার, তাপমাত্রা নেমে ২৭ ডিগ্রিতে পৌঁছলে ওই সব মেশিন আপনা থেকেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা।
নতুন ব্যবস্থায় কী পরিবর্তন আনছে মেট্রো? মেট্রোর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রত্যুষ ঘোষ জানান, এত দিন স্টেশন প্রতি ৫৪০ টনের মেশিন লাগানো ছিল। সেগুলি ৮০০ টন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে যতীন দাস পার্ক স্টেশনে তা বসানোও হয়েছে। বাকি কিছু স্টেশনে মেশিনের ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। পরিকল্পনা রয়েছে আরও কিছু নতুন মেশিন বসানোর। মেট্রোর ইঞ্জিনিয়ারদের বক্তব্য, কাজ শেষ না হলেও যেটুকু হয়েছে, তাতেই আসন্ন গ্রীষ্মে টানেলের তাপমাত্রার পরিবর্তন কতটা কমল তা বোঝা যাবে। তার পরে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আর কী কী হবে। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা কিন্তু তাপমাত্রার পরিমাপ ও ঠিক মতো গরম বাতাস বার করার উপরেই জোর দিচ্ছেন। ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যাল্স লিমিটেড-এর আর্গোনমিস্ট অনিন্দ্য গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “প্রথমে টানেলের তাপমাত্রা ঠিক মতো মাপা জরুরি। সেই অনুযায়ী গরম বাতাস বার করতে হবে। তাহলে এসি বা নন-এসি, কোনও রেকেই সমস্যা হওয়ার কথা নয়।” মেট্রো সূত্রের খবর, তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য বসানো কয়েকটি সেন্সর মাঝেমধ্যেই বিগড়ে যায়। তার জন্য কর্মীরা হাতে তাপমাত্রা পরিমাপের যন্ত্র নিয়ে কাজ করেন বলে ওই সূত্রের দাবি।
তবে পাশাপাশি অন্য একটি প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে মেট্রো রেল ভবনের অন্দরে। অনেকেই বলছেন, গত বছরের গোড়ায় প্রচুর অর্থব্যয়ে স্মার্ট গেট বসানো হয়। কিন্তু তার পরিষেবা অত্যন্ত খারাপ বলে অভিযোগ। এ বার টানেলের হাওয়া চলাচলের নতুন যন্ত্রগুলিও তেমন হবে না তো? এ বিষয়ে রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী বলেন, “নতুন প্রযুক্তির বিষয়ে আমার জ্ঞান নেই। আমি বলেছি, সুস্থ পরিষেবা দেওয়ার জন্য যা যা প্রয়োজনীয় করতে হবে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.