পরমা উড়ালপুল
দু’বছর কাজ পিছোনোর খেসারত ২২৭ কোটি
দু’বছর সময়ের দাম ২২৬.৫২ কোটি টাকা!
পার্ক সার্কাস থেকে ই এম বাইপাসের পরমা আইল্যান্ড পর্যন্ত উড়ালপথ তৈরি করতে দু’বছর বেশি সময় লাগবে। এ জন্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় কেএমডিএ-র কাছে ওই টাকা দাবি করেছে প্রকল্পের নির্মাণকারী সংস্থা ‘হিন্দুস্থান কনস্ট্রাকশন কোম্পানি’ (এইচসিসি)। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের অবশ্য দাবি, “টাকার অঙ্কটা ১০০ কোটির কিছু বেশি।” কিন্তু ওই টাকাই বা আসবে কোথা থেকে, তা মন্ত্রী-সহ কেএমডিএ-র কর্তারা জানেন না! বিষয়টি রাজ্যের অর্থ দফতর বিবেচনা করবে বলে সরকারি সূত্রের খবর।
বামফ্রন্টের আমলে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ওই উড়ালপথ তৈরির কাজ শুরু হয়। এ জন্য খরচ ধরা হয় ৩১৭ কোটি টাকা। নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয় এইচসিসি-কে। ঠিক হয়, ৩০ মাসে (২০১২ সালের ৩১ অগস্ট) উড়ালপথ তৈরি হয়ে যাবে। কেএমডিএ-র দাবি, উড়ালপথ তৈরি হয়ে গেলে দৈনিক এক লক্ষ গাড়ি যাতায়াত করতে পারবে।
কাজ শুরু হওয়ার পরে মাঝপথে এসেই বোঝা যায়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উড়ালপথ তৈরি হবে না। এ জন্য আরও সময় দরকার। প্রথমে চলতি বছরের ৩১ অগস্ট, পরে আরও এক বছর সময় বাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সব মিলিয়ে দু’বছর অতিরিক্ত সময় লাগবে বলে জানিয়ে দেয় এইচসিসি। সময়ের সঙ্গে খরচও বেড়ে যাওয়ায় কেএমডিএ-র কাছে আরও ২২৬.৫২ কোটি টাকা দাবি করে ওই সংস্থা। বৃহস্পতিবার কেএমডিএ-র পরিচালন কমিটির বৈঠকে এই নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানেই ঠিক হয়, অর্থ দফতরের বিবেচনার জন্য প্রস্তাবটি পাঠানো হবে।
মূল প্রকল্পটি ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের ‘জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আর্বান রিনিউয়াল মিশন’ (জেএনএনইউআরএম)-এর অধীনে। নিয়ম অনুযায়ী, মোট প্রকল্প-খরচের ৩৫ শতাংশ অর্থ দিয়েছে কেন্দ্র। বাকি টাকা রাজ্য সরকারের। কিন্তু এইচসিসি যে বাড়তি অর্থ দাবি করেছে, তা শুধু রাজ্য সরকারকেই বহন করতে হবে বলে জানিয়েছেন নগরোন্নয়নমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “টাকার ব্যবস্থা আমাদেরই করতে হবে।” কিন্তু রাজ্য সরকারের যেখানে ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর’ অবস্থা, কর্মীদের বেতন দিতেই যেখানে নাভিশ্বাস উঠছে সরকারের, সেখানে নগরোন্নয়নমন্ত্রীর দাবি মতো ১০০ কোটি কোথা থেকে আসবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সরকারি কর্তাদের দাবি, দু’বছর নয়, গোটা প্রকল্পটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ল।
প্রকল্পের কাজ শেষ করতে কেন দু’বছর সময় বেশি লাগবে, তাই নিয়ে এইচসিসি কর্তৃপক্ষ কোনও মন্তব্য করতে রাজি না হলেও এই নিয়ে রাজ্যের প্রাক্তন ও বর্তমান নগরোন্নয়নমন্ত্রীর মধ্যে চাপান-উতোর শুরু হয়ে গিয়েছে। ফিরহাদের অভিযোগ, “আগে পরিকল্পনাই ঠিকমতো করা হয়নি। তাই এই বাড়তি খরচ।” এর পাল্টা দাবি প্রাক্তন নগরোন্নয়নমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের। তাঁর কথায়, “আমাদের আমলে শুধু এক বারই মাস দেড়েকের জন্য কাজ বন্ধ ছিল। এ ছাড়া জমি, ঠিকাদার, বস্তি বা টাকা— কোনও কিছুর জন্যই কাজের কোনও ক্ষতি হয়নি। সবই মসৃণ গতিতে এগিয়েছে।”
কেএমডিএ সূত্রের দাবি, সরকার এবং এইচসিসি— গাফিলতি দু’পক্ষেরই ছিল। সময় বেড়ে যাওয়ার মূল সমস্যা এইচসিসি-র জন্য কাজের পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারা। বাইপাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় এমন কাজ করার জন্য যান নিয়ন্ত্রণ খুবই জরুরি। অভিযোগ, পুলিশ সেই অনুমতি দিতে অনেক সময়েই দেরি করেছে। সমস্যা ছিল ভূগর্ভস্থ বিভিন্ন সংযোগ সরানো নিয়েও। পুরনো ব্যবস্থার জন্য এ কাজেও বহু সময় গিয়েছে। এ ছাড়া, পার্ক সার্কাস চার নম্বর ব্রিজের পাশে ঝুপড়ি থাকাতেও কাজে অসুবিধা হয়। সরকারি সূত্রের খবর, গত বিধানসভা নির্বাচনের জন্যও অনেক দিন কাজের ক্ষতি হয়েছে।
সরকারের গাফিলতিতে ওই ক্ষতির অঙ্কই দাঁড়িয়েছে ২২৬.৫২ কোটিতে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.