হলদিয়ায় ভাষা দিবসের মঞ্চে সৌজন্যের রাজনীতি
সাত মাসের বিরোধিতা মুছল ভাষা দিবসে। বৃহস্পতিবার হলদিয়া পুরসভার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান এক সঙ্গে পালন করল ক্ষমতাসীন বামফ্রন্ট এবং বিরোধী তৃণমূল।
শুরুটা অবশ্য অন্য ভাবে হয়েছিল। এ দিন আগেভাগে এসে অনুষ্ঠান শুরু করে দিয়েছিলেন বিরোধী তৃণমূলের কাউন্সিলাররা। ঠিক তখনই বাম কাউন্সিলারদের নিয়ে পুরপ্রধান তমালিকা পণ্ডা শেঠ উপস্থিত হন পুরভবনের সামনে বাংলাদেশের আদলে নির্মিত ভাষা শহিদ মঞ্চে। নিজে থেকে এগিয়ে এসে পুরপ্রধান একসঙ্গে অনুষ্ঠান করার প্রস্তাব রাখেন বিরোধীদের কাছে। সৌজন্যের সেই ডাকে সাড়াও মেলে। একসঙ্গে নীরবতা পালন, শহিদবেদিতে মাল্যদানের পরে ‘ধনধান্যে পুষ্পে ভরা’ গেয়ে ওঠেন সকলে। সৌহার্দ্যের এই আবহে ছেদ পড়ে পুরভবনের সামনে তৃণমূলের প্রতি দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচিতেও।

একই মঞ্চে বামফ্রন্ট ও তৃণমূলের পুর প্রতিনিধিরা। হলদিয়ায় বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র
দীর্ঘ সাত মাসের বিরোধিতার কি অবসান হল তা হলে? তমালিকাদেবীর উত্তর, “বিরোধী, যুযুধান এই সব শব্দ এই দিনে ঘুচে যাক। তিক্ততা আর ভাল লাগছে না। ওঁদেরও একই অবস্থা। বিভেদ ভুলে ভাষা দিবসে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করি বরং।” বিরোধী দলনেতা তৃণমূল কাউন্সিলার দেবপ্রসাদ মণ্ডল অবশ্য বিরোধিতা মেটানোর প্রশ্নে এখনও সতর্ক। তাঁর কথায়, “এই দূরত্ব কমে যাক সেটা আমরাও চাইছি। তবে রাজনৈতিক দাবি থেকে সরছি না। আগামী দিনে সৌজন্য বজায়ের চেষ্টা করব। ওঁদেরও এই বিষয়ে ভাবা উচিত। তা না হলে এক দিন পরে কী হবে জানি না।”
গত বছর জুন মাসের পুরভোটে ২৬টি আসনের ১৫টিতে জিতে হলদিয়া পুরসভা বামেরা পুনর্দখল করার পর থেকেই লাগাতার বিক্ষোভ দেখাচ্ছে তৃণমূল। এখনও একটিও উন্নয়নমূলক বোর্ড মিটিংয়ে যোগ দেননি তৃণমূল কাউন্সিলাররা। শেষ বোর্ড মিটিংয়ে বিরোধ চরমে পৌঁছলে বিষয়টি রাজ্যপালকে জানান পুরপ্রধান। ২৯ জানুয়ারি থেকে পুরভবনের সামনে টানা বিক্ষোভ চলছে তৃণমূলের। প্রাক-ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানও তৃণমূলের বাধাতে বানচাল হয়।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ২৬ জন কাউন্সিলারকেই। সকাল ৯টায় নির্ধারিত সময়ের কিছু আগে মঞ্চে পৌঁছে তৃণমূল কাউন্সিলাররা অনুষ্ঠান শুরু করে দেন। বিরোধী দলনেতা দেবপ্রসাদ মণ্ডল নীরবতা পালনের ঘোষণা করেন। তখনই সদলবলে হাজির হন তমালিকাদেবী। তিনি প্রস্তাব দেন, “আমরা এক সঙ্গে নীরবতা করব।” পুরপ্রধানের এই আহ্বান ফেরাতে পারেননি তৃণমূল কাউন্সিলাররা। সকলে মিলে নীরবতা পালনের পর দেবপ্রসাদবাবু নিজের সঙ্গে আনা মালা শহিদবেদিতে পরাতে যান। নাছোড় তমালিকাদেবী সেই মালা নিজের হাতে নিয়ে পুরসভার মালা তাঁর হাতে ধরিয়ে দেন। এরপর একে-একে মাল্যদান করেন সিপিএমের উপ-পুরপ্রধান নারায়ণ প্রামাণিক থেকে তৃণমূল কাউন্সিলার হেলেন করন, রেখারানি দেবকুণ্ডু, চন্দন মাজি-সহ প্রত্যেকেই।
সৌজন্যের এই রাজনীতিতে বিস্মিত অনুষ্ঠান দেখতে আসা পুরবাসী। শহরেরই বাসিন্দা বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে গণ্ডগোল চলছিল। আজ পুরপ্রধান আর বিরোধী দলনেতাকে পাশাপাশি খোশমেজাজে দেখে ভাল লাগল।” দু’পক্ষের মিলনে সবচেয়ে খুশি পুর কর্মীরা। পুরসভার আধিকারিক অশোককুমার মিত্র বলেন, “খুব ভাল লাগছে। আশা করি এই সৌজন্য বজায় থাকবে। ত্বরান্বিত হবে হলদিয়ার উন্নয়নের গতি।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.