সান সিরোর ঝলক
বার্সার তিকিতাকা
সম্ভবত অবলুপ্তির পথে
এসি মিলান-২ (বোয়াতেং, মুন্তারি)
বার্সেলোনা-০
মি জানি না আপনারা আমার ধারণার সঙ্গে একমত হবেন কি না। কলকাতায় বার্সেলোনা সমর্থক এমনিতে প্রচুর। এই ম্যাচ রিপোর্ট তাঁদের দুঃখ দেবে, অনেকে চমকে উঠবেন। কিন্তু বুধবার রাতে বার্সেলোনাকে ধ্বংস হতে দেখে একটা কথা মনে হচ্ছিল।
ফুটবল বিশ্বের নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছিল যে কনসেপ্ট, আধুনিক ফুটবলকে হাজির করেছিল নতুন চেহারায়, সেই তিকিতাকা ফুটবল এগোচ্ছে অবলুপ্তির দিকে!
আটকে গেলেন মেসি।
ফুটবলের ইতিহাস বই খুললে আমার কথাটা অন্যদের মেনে নিতে একটু সুবিধে হবে। বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন কনসেপ্ট হাজির হয়েছে ফুটবলে। কখনও কাতানেচিও। কখনও কিক অ্যান্ড রান। কখনও টোটাল ফুটবল। কখনও নতুন সিস্টেমের জন্ম দিয়েছে ইতালি। কখনও ইংল্যান্ড। রেনাঁস মিশেলসের টোটাল ফুটবল তো ঝড় তুলে দিয়েছিল। তেমনই আধুনিক ফুটবলে যদি কোনও সিস্টেম এসে থাকে, তো সেটা তিকিতাকা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাতানেচিও, টোটাল ফুটবলসবেরই মৃত্যু ঘটেছে। তিকিতাকাও আজন্ম টিকে থাকবে, আশা করাটা বোধহয় উচিত নয়।
কী ভাবে বেরোল তিকিতাকা-বধের পাসওয়ার্ড? বহু দিন আগে হোসে মোরিনহোকে দেখেছিলাম স্ট্র্যাটেজিটা নিতে। মোরিনহো তখন ইন্টারের কোচ। ইউরোপিয়ান ক্লাব কাপে মোরিনহো সে বার তিকিতাকাকে ধ্বংস করেছিলেন একটাই ট্যাকটিক্সে। নিজেদের অর্ধে কড়া ট্যাকল করো, বিপক্ষের কেউ বল ধরলে তাঁকে ঘিরে ধরো চার-পাঁচ জন মিলে। আর বিপক্ষের ‘জোন’-এ স্রেফ বল তাড়া করে যাও। এত দিন মোরিনহোর তত্ত্বটা পড়ে ছিল। কিন্তু হালফিলে অনেককেই দেখছি বার্সার বিরুদ্ধে নামলে স্ট্র্যাটেজিটা নিচ্ছে।
মুন্তারির হুঙ্কার।
মিলান কোচ ম্যাসিমিলানো অ্যালেগ্রিও সেটাই করলেন। স্রেফ তাঁর ট্যাকটিকাল ফুটবলের কাছে উড়ে গেল বার্সা।
জাভি-ইনিয়েস্তারা নিজেদের মধ্যে যত পাস খেলেছে, তত বেশি নিজেদের রক্ষণকে গুছিয়ে নিয়েছে মিলান। আর বেশি পাস খেলতে গিয়ে খেলার গতিটাকে অসম্ভব রকম কমিয়ে ফেলেছিল বার্সা। ইতালির টিমগুলোর ডিফেন্স এমনিতেই শক্তিশালী। সেখানে গতি কমিয়ে ফেললে ওদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়ে। অ্যালেগ্রির হাতে কে ছিল? নিয়মের জালে বালোতেলিকে পাননি। ইব্রাহিমোভিচ, গাটুসো, পাতো আগের মরসুমের ছ’-সাতজন সুপারস্টার ফুটবলার ক্লাব ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু তবু অ্যালেগ্রি বার্সাকে নিজেদের জঘন্যতম ফুটবলটা খেলতে বাধ্য করলেন। অবস্থা এতটাই খারাপ হল যে, ফাব্রেগাসের মতো প্লেয়ারকে তুলে নিতে বাধ্য হল রৌরা। জাভির মতো প্লেয়ার একের পর এক মিসপাস করল। মেসি গোটা ম্যাচে একটা বল ঠিকঠাক বাড়াতে পারল না। বল ছুঁলেই তিন থেকে চার জন ওকে ঘিরে ধরছিল নিয়ম করে। বল পজেশনে বার্সেলোনা ৬৬-৩৪ এগিয়ে থাকলে কী হবে, একবারও মনে হয়নি ম্যাচটা মেসিরা জিততে পারে বলে। বরং দ্বিতীয়ার্ধে মিলানের দুই ঘানাইয়ান বোয়াতেং, মুন্তারির গোল দু’টো মনে রাখার মতো। প্রথমটা বক্সের কোণ থেকে। পরেরটা ভেতর থেকে।
বান্ধবীকে নিয়ে বালোতেলি।
আরও একটা জিনিস বলার আছে। অনেকে বলবেন, বার্সেলোনার মতো টিমকে নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করাটা উচিত নয়। ঘরের মাঠে ফিরতি ম্যাচেই ওরা সমস্ত সমালোচককে মূর্খ প্রমাণ করে ছাড়বে। আমি নিজেও ভুল করতে পারি। কিন্তু বুধবারের পর মনে হচ্ছে, এ বারের মতো বার্সেলোনার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ অভিযান মোটামুটি শেষ। কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে গেলে ওদের ন্যু কাম্পে ন্যূনতম তিন গোলের ব্যবধান রেখে জিততে হবে। আমার মনে হয় না পারবে বলে। তিন গোলের এমনিই একটা আলাদা চাপ থাকে। তা ছাড়া মন বলছে, বার্সার ঘরের মাঠেও অ্যালেগ্রি একই স্ট্র্যাটেজি নিয়ে নামবেন। তিকিতাকাকে নিঃশেষ করার জন্য।

ছবি: এএফপি, রয়র্টাস




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.