আরাবুলের নাম মুখেই আনলেন না মুখ্যমন্ত্রী
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পৌঁছনোর আগেই পোস্টার-ফ্লেক্সে সবুজ রঙের পোঁচ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হল তাঁর নাম। ঘণ্টা খানেকের বক্তৃতায় একবারও তাঁর নাম মুখে আনলেন না মুখ্যমন্ত্রী। কর্মী-সমর্থকেরা তাঁর কথা তুলে বিক্ষোভ দেখালেও নীরবে তা এড়িয়ে গেলেন মমতা। তা হলে কি দক্ষিণ ২৪ পরগনার রাজনীতি থেকে মুছে গেলেন তৃণমূলের ‘তাজা নেতা’ আরাবুল ইসলাম? এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে আরাবুল অনুগামীদের মনে।
প্রথমে রেজ্জাক মোল্লা এবং তার পরে সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের উপরে হামলায় অভিযুক্ত আরাবুল সম্পর্কে দলনেত্রীর মনোভাব নিয়ে জল্পনা চলছিলই। সোমবার ভাঙড়ের চণ্ডীপুর মাঠে সংখ্যালঘুদের জন্য প্রস্তাবিত সুপার স্পেশালিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিলান্যাস উপলক্ষে আয়োজিত সরকারি অনুষ্ঠানের শেষে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঞ্চ থেকে নামতেই আরাবুল অনুগামীরা জিজ্ঞাসা করে ফেলেন, “আরাবুলের কী হল? কী করলেন ওঁর জন্য?” অল্প বিক্ষোভও দেখান তাঁরা। উত্তরই দেননি মমতা। একটু থতমত খেয়ে গাড়িতে গিয়ে ওঠেন। হকচকিয়ে যান কতর্ব্যরত পুলিশও। পরে তাঁরা বিক্ষোভকারীদের জিজ্ঞাসাবাদও করেন। দলনেত্রীর ‘আচরণে’ আরাবুল অনুগামীদের একাংশ মনে করছেন, দল আরাবুলের থেকে ব্যবধান বাড়াতে চাইছে।
এখানেই ছিল আরাবুলের নাম।
এ দিনের অনুষ্ঠানের জন্য ক’দিন আগে থেকেই ভাঙড়ের দু’টি ব্লক এবং বাসন্তী হাইওয়ের বিভিন্ন জায়গায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দিয়ে পোস্টার-ফ্লেক্সে প্রচার করা হয়। নীচে লেখা ছিল ‘সৌজন্যে আরাবুল ইসলাম’। কিন্তু সোমবার সকালে দেখা গেল, ওই সব পোস্টার-ফ্লেক্সে রঙের পোঁচ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে আরাবুলের নাম। কয়েক জন স্থানীয় তৃণমূল নেতা বলেন, “পাছে দিদি চটে যান, সেই কারণে দলীয় নেতাদের নির্দেশেই পোস্টার-ফ্লেক্স থেকে আরাবুলের নাম মুছে দেওয়া হয়।” এ ভাবে নেতার নাম মুছে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ আরাবুল অনুগামীরা। তাঁদের অনেকেই মনে করছেন, পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে আরাবুলের থেকে দূরত্ব বাড়াতে চাইছেন দলের শীর্ষ নেতারা। এ নিয়ে অবশ্য দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের নেতারা কোনও মন্তব্য করতে চাননি। জানুয়ারির গোড়ায় রেজ্জাক-কাণ্ডের পরে আরাবুলকে ‘উদ্যমী ছেলে’ বলে প্রশংসা করেছিলেন তৃণমূলের মহাসচিব তথা শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রও আরাবুলকে ‘তাজা নেতা’ বলে চিহ্নিত করেছিলেন। কিন্তু তখন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একবারও আরাবুলের নাম করেননি। এমনকী, গ্রেফতারের পরে প্রথম দফায় যখন আরাবুল এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হন, তখন একটি অনুষ্ঠানে সেখানে গেলেও মমতা দলীয় নেতাকে দেখতে যাননি। ১৭ জানুয়ারি গ্রেফতারের পরে আরাবুলকে যখন সোনারপুর থানার লক-আপে রাখা হয়েছিল, তখন গরাদ ধরে ধরে তিনি দলের জেলা স্তরের কয়েক জন নেতার সামনে চিৎকার করে বলেন, “সব কিছুই দলকে জানিয়ে করেছি। আর আমাকেই এখন পুলিশ হেফাজতে রাখা হল!” এর পরে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি বলেন, “দলই আমাকে শেষ করে দিল।”
সোমবার ভাঙড়ের চণ্ডীপুর মাঠে এক সরকারি অনুষ্ঠানে সংখ্যালঘুদের জন্য প্রস্তাবিত সুপার স্পেশালিটি মেডিক্যাল
কলেজ হাসপাতালের শিলান্যাস করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলার মাছ বিক্রেতাদের জন্য ‘সাউন্ড সিস্টেম’
বসানো মাছ বিক্রির ভ্যান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। সেই গাড়ি থেকে সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে মাছ কেনার কথা
বলা হবে। এমনই কয়েকটি ভ্যান এ দিন বিলিও করেন মুখ্যমন্ত্রী। তা ছাড়াও জেলার ৫০টি মাদ্রাসার সাত হাজার
ছাত্রীকে সাইকেল বিলির প্রতিশ্রুতি দেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে, একবারও ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা আরাবুল
ইসলামের নাম নেননি মুখ্যমন্ত্রী। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে অল্প বিক্ষোভও দেখান আরাবুল অনুগামীরা।
সোমবার ভাঙড়ে দল থেকে বহিষ্কৃত নেতা তথা জেলা পরিষদের সদস্য মির তাহের আলিকে সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে অনুষ্ঠানের তদারকি করতে দেখা গিয়েছে। সাংসদ মুকুল রায় যদিও তাঁর সঙ্গে কথা বলেননি। তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে অশ্লীল নাচের আয়োজন করার জন্য তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। তাহের আলি বলেন, “জেলাশাসকের দফতর থেকে চিঠি দিয়ে আমাকে সমাবেশে থাকতে বলা হয়েছিল।” জেলার তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘‘দলের তরফে ওঁকে ডাকা হয়নি। প্রশাসনের তরফে ডাকা হলে আমাদের কিছু করার নেই।” তাহের আলির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলেও আরাবুল সম্পর্কে নিজেদের অবস্থান এখনও স্পষ্ট করেনি তৃণমূল। তবে, রাজনৈতিক মহল মনে করছে ভাবমূর্তি উদ্ধারের জন্য কোনও ‘বিতর্কিত’ নেতার থেকে দূরত্ব বাড়ানো রাজনৈতিক দলগুলির ক্ষেত্রে নতুন কিছু নয়। দলবিরোধী কাজের জন্য প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ অনিল বসুকে বহিষ্কার করেছে দল। একই কারণে ২০১০ সালে ‘সাসপেন্ড’ হন খড়দহের সিপিএম নেতা কল্যাণ মুখোপাধ্যায়। বর্তমানে তিনি জেলা কমিটিতে জায়গা করে নিয়েছেন। শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে ‘সাসপেন্ড’ করা হয় বরাহনগরের সিপিএম নেতা রঞ্জিত দাসকেও। তিনিও বর্তমানে আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন। এমন উদাহরণ আরও আছে। তবে, সিঙ্গুরের ‘বিদ্রোহী’ দলীয় বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য সম্পর্কে তৃণমূল কী ভাবছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

এই সংক্রান্ত আরও খবর



—নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.