সম্পাদকীয় ১...
দণ্ডদানের বিলম্ব
ফজল গুরুর ফাঁসি এক দিকে মৃত্যুদণ্ডের অপেক্ষায় থাকা দেশের অন্য আসামিদের লইয়া বিতর্ক সৃষ্টি করিয়াছে, অন্য দিকে মৃত্যুদণ্ড বা ফাঁসি কার্যকর করার প্রক্রিয়া লইয়াও প্রাসঙ্গিক তর্কের অবতারণা করিয়াছে। তর্কটি প্রণিধানযোগ্য। প্রথমত, আফজল গুরুর অনেক আগে হইতে মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত কিছু আসামির ফাঁসি এখনও স্থগিত। তাহার মধ্যে রাজীব গাঁধীর ঘাতকরা যেমন রহিয়াছে, তেমনই রহিয়াছে পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী বিয়ন্ত সিংহের আততায়ীও। উভয় ক্ষেত্রেই সুপ্রিম কোর্টের রায় ছাড়াও রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদনও খারিজ হইয়া গিয়াছে। তথাপি দণ্ডাদেশ কার্যকর হয় নাই। প্রথম ক্ষেত্রটিতে তামিল ভাবাবেগ আহত হওয়ার এবং দ্বিতীয় ক্ষেত্রটিতে অকালি তথা শিখ ভাবাবেগ আহত হওয়ার অজুহাতই যে এখনও দণ্ডাদেশ কার্যকর না-হওয়ার কারণ, তাহাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নাই। বস্তুত, এই কারণ বা ব্যাখ্যা এতটাই সুবিদিত যে জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা পর্যন্ত দ্রুত ওই দণ্ডাদেশ কার্যকর করার দাবি তুলিয়াছেন। এবং তাঁহার সঙ্গত অভিমত, অন্যথায় কেবল আফজল গুরুকে ফাঁসিতে ঝুলাইবার পিছনে কেন্দ্রীয় শাসক গোষ্ঠীর রাজনৈতিক অভিপ্রায়ের সন্দেহ ঘনাইতে পারে।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ক্ষেত্রে এই অনাবশ্যক দীর্ঘসূত্রতা বস্তুত দেশের বিচারব্যবস্থা ও প্রক্রিয়ার সামগ্রিক দীর্ঘসূত্রতারই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। বিলম্বিত বিচার যেমন অবিচারের নামান্তর, দণ্ডাদেশ কার্যকর করায় বিলম্বও যে তেমনই, ইহা সম্ভবত সংশ্লিষ্ট কাহারও মনে উদয় হয় না। এমনকী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির পক্ষেও চূড়ান্ত মৃত্যুর আগে দীর্ঘ কাল ধরিয়া তিলে-তিলে প্রতি দিন নিঃসঙ্গ কারাবাসে মৃত্যুচিন্তার হতাশা, অবসাদ ও গ্লানি ভোগ করার মর্মান্তিক অমানবিকতা ঘুচাইবার কথা কাহারও মনে হয় না। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী বলিয়াছেন, প্রাণভিক্ষার আবেদনের নিষ্পত্তিরও একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকা উচিত। যত দিন সে আবেদন মঞ্জুর করার এক্তিয়ার রাষ্ট্রপতির থাকিতেছে, অন্তত তত দিন অবশ্যই এই সীমা নির্দিষ্ট থাকা উচিত। রাষ্ট্রপতি যে নিজের ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় সেই আবেদন মঞ্জুর কিংবা খারিজ করেন না, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পরামর্শেই সিদ্ধান্ত লন, ইহাও কাহারও অজানা নয়। অর্থাৎ আপাতদৃষ্টিতে প্রাণদণ্ডের বিরুদ্ধে প্রাণভিক্ষার আবেদনের নিষ্পত্তি যতই রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের অপেক্ষায় থাকুক, কার্যত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অর্থাৎ কেন্দ্রীয় শাসক দলের নেতৃত্বই প্রাণদণ্ড বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি লইয়া থাকে। প্রাণভিক্ষার আবেদনের নিষ্পত্তির সময় হ্রাস করা অতএব শাসক দলেরই একচেটিয়া বিশেষাধিকার। সেই অধিকারটিকে সময়বদ্ধ করিতে আইনি ব্যবস্থা লওয়ার দায়ও শাসক দলেরই। দণ্ড কার্যকর করা লইয়া টালবাহানার সুযোগ না থাকিলে রাজনৈতিক বিবেচনা আসিয়া ন্যায়বিচারের পথ আগলাইয়া দাঁড়াইতে পারিবে না। বিচারপ্রক্রিয়ার সর্ব স্তরেই তাই দীর্ঘসূত্রিতার অবসান ঘটানো জরুরি। কাজটি অবিলম্বে শুরু করা দরকার।
এখানে একটি গভীরতর প্রশ্ন ওঠে। আসামির মার্জনাভিক্ষার আবেদন ও তাহা মঞ্জুর কিংবা নাকচ হওয়ার পদ্ধতি কতটা যথার্থ, সেই প্রশ্ন। সুপ্রিম কোর্ট এই দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সেই আদালতের মাননীয় বিচারপতিরা যখন কাহাকেও মৃত্যুদণ্ডের মতো গুরুদণ্ডের জন্য দোষী সাব্যস্ত করেন, তখন সেই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতির কাছে মার্জনাভিক্ষার আবেদন কেহ করিতেই পারেন। কিন্তু একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতির এ ধরনের আবেদন গ্রহণ করার বন্দোবস্ত থাকা উচিত কি না, তাহাও বিবেচ্য। রাষ্ট্রপতি দেশের সাংবিধানিক প্রধান, কিন্তু তিনি তো রাজা নন, যাঁহার অভিপ্রায় গণতান্ত্রিক আইনের বিচারে দণ্ডিত আসামির দণ্ডও মকুব করিতে পারে। কার্যক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অভিমত অনুসারেই মার্জনা ভিক্ষার আবেদন মঞ্জুর করেন অথবা করেন না। কিন্তু সেই কারণেই প্রশ্ন ওঠে, সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড ফিরাইয়া লইবার সুযোগ কি শাসনবিভাগের হাতে আদৌ থাকা উচিত? এই বিষয়ে বিতর্ক তুলিবার সময় কিন্তু আসিয়াছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.