বইমেলার মোহনায় মিশে গেলেন নবাব এবং ‘প্রিন্স’
টুপিটা ডান চোখের উপর অল্প নামানো, সাদা শার্টের কলার তোলা, চুলে ব্যাকব্রাশ। আপাদমস্তক রোম্যান্টিকতায় মোড়া ছ’ফুটের শরীর।
না, শনিবারের বইমেলায় এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব ছিল না। ‘নবাব’ একজনই হন। তিনি আজ প্রয়াত।
যিনি ছিলেন, তিনি ‘নবাব’ নন। কিন্তু ‘প্রিন্স’ তো বটে। জাতীয় দলের ক্রিকেট কিট তুলে রাখার তিন বছর পরেও যাঁকে ভুলতে পারে না বাঙালি। ভারতবাসী। রোম্যান্সের সেনসেক্স অতীতে পড়েনি, বর্তমানেও অটুট। ‘গাঙ্গুলি’ শব্দের মোহিনী-মন্ত্র, লর্ডসের ব্যালকনিতে জামা ওড়ানোকে ভুলেছে?
ভিন্ন সময়, ভিন্ন প্রজন্মের দুই ভারত অধিনায়ক। তাঁরা যে যুগ-সংস্কৃতির পাঁচিল পেরিয়ে শনিবাসরীয় বইমেলার মোহনায় মিশে যাবেন, কে জানত!
মনসুর আলি খান পটৌডি এবং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।
প্রেক্ষাপট, পটৌডিরই উপর এক বইয়ের উদ্বোধন। নাম: ‘টাইগার, দ্য নবাব অব ক্রিকেট।’ যা ‘প্রিন্স অব ক্যালকাটার’ হাত দিয়ে করে গেলেন শর্মিলা ঠাকুর। একই সঙ্গে খোঁজ পাওয়া গেল সেই ক্রিকেট ঐতিহ্যের, যা পটৌডির থেকে হাত বদল হয়েছে সৌরভে। যা মিলিয়ে দিল দু’জনকে।
সেটা কী?
ভারতীয় ক্রিকেট থেকে প্রাদেশিকতা তুলে দিয়েছিলেন টাইগার। যার পরম্পরা মেনেছেন সৌরভও। মুম্বই-কর্নাটক-দিল্লির বিভাজন পটৌডি মুছে দিলে, সৌরভ ভারতীয় টিমের ম্যাপে উপস্থিত করেছেন উত্তরপ্রদেশ, জলন্ধরকে। অধিনায়কত্বের প্রথম দিনে টাইগার-মন্ত্র তা হলে মাথায় ছিল?
শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গে সৌরভ। শনিবার। ছবি: সৌভিক দে
জবাবে সলজ্জ সৌরভ, “আমার ক্যাপ্টেন্সির থিওরি খুব সহজ ছিল। এমন ক্রিকেটার চাই যে ম্যাচ জেতাবে।” একটু থেমে, “আমি চেয়েছিলাম টিমে জয়ের সংস্কৃতিটা আসুক। চাইতাম টিমে কেউ ঢুকলে অন্তত দশটা টেস্ট যেন সুযোগ পায়। ক্রিজে গিয়ে শুধু বলের কথা ভাবতে পারে। টিমে জায়গা নিয়ে নয়।”
ক্রিকেট-আড্ডা বললে ক্রিকেট-আড্ডা। পটৌডি নিয়ে স্মৃতিচারণ বললে তাই। হর্ষ-বিষাদ সবই মিশে থাকল অনুষ্ঠানের ধমনীতে। নিজের ক্রিকেটজ্ঞান বোঝাতে এক বার ভাল বিপাকে পড়েছিলেন শর্মিলা। উপলক্ষ্য ছিল, টাইগারের হৃদয় জয়। ফল, ‘লেট কাট’-কে ‘লেগ কাট’ বলে ফেলা। বলে টেবিলের তলায় টাইগারের ‘কিক’ শর্মিলার বেমালুম হজম, আর যা শুনে সৌরভের ইয়ার্কি, “আপনি খুব ভাল মানুষ বলতে হবে। নইলে এত বড় পরিবার থেকে এসেও কিক হজম করেছেন..।” ঠিক তেমনই কুড়ি বছরে চোখ হারানোর যন্ত্রণা, প্রয়াত টাইগারের বইয়ের মুখবন্ধ লিখতে বসে আবেগে শর্মিলার কলম থেমে যাওয়াসবই থাকল। সৌরভ তো শর্মিলাকে জিজ্ঞেসও করে বসলেন, “একটা চোখ নিয়েও কী ভাবে ও রকম খেলে গেলেন টাইগার?” উত্তরে অকপট শর্মিলা, “ওটা নিয়ে কথা বলতে গেলেই রেগে যেত।” সঙ্গে সংযোজন, “ওর জীবনে অনেক গভীর ক্ষত ছিল। অধিনায়কত্ব চলে যাওয়া, চোখ হারানো, কিন্তু কখনও কিছু বলেনি।”
‘নবাব’ বলেননি। ‘প্রিন্স’ও কি বলেছেন? ক্ষত তো তাঁরও কম নয়।
“সে জন্যই আত্মজীবনী লিখিনি। সব না লেখা গেলে ওটা লেখার মানে নেই,” বলছিলেন সৌরভ। অনেকটা যেন টাইগার-কণ্ঠেরই প্রতিধ্বনি। মেয়ে সোহার শত অনুরোধ-উপরোধেও তো টাইগার বারবার বলতেন, অর্ধসত্য লেখার চেয়ে কিছু না লেখা ভাল। সৌরভ জুড়লেন, “এতে লাভ কী? বিতর্ক হবে, কাগজের প্রথম পাতায় নাম উঠবে, আজ যেমন সলমন রুশদির উঠেছে। আমার এ সবের দরকার নেই।” শেষে তো আরও একটা কথা বলে গেলেন সৌরভ। যতই ভারতীয় বোর্ড মেয়েদের ক্রিকেট নিয়ে সহানুভূতিশীল হোক, যতই দেশে হোক বিশ্বকাপ, তবু মেয়ে সানাকে কোনও দিন ক্রিকেটে আনবেন না!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.