দিল্লিতে আন্দোলন, পাহাড়ে সন্ধির কৌশল মোর্চার
পাহাড়ে জমি ধরে রাখার স্বার্থে দিল্লিতে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে সুর চড়ালেও পাহাড়ের অতিথি মুখ্যমন্ত্রীর সম্মান রাখতে সুর নরম করল বিমল গুরুঙ্গের দল। সোমবার দার্জিলিঙে বিমল গুরুঙ্গের পাশে বসে মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা বিনয় তামাং বললেন, “আমরা উত্তরবঙ্গ উৎসবে যোগ দেব। মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে অতিথি হয়ে আসছেন। আমরা, পাহাড়বাসী অতিথিদের সব সময় উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাই। এই ক্ষেত্রেও তাই করা হবে। পাহাড়বাসীকে অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে।” পাশাপাশি, অনুষ্ঠানের পর বিমল গুরুঙ্গের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক হবে বলেও কার্যত জানিয়ে দিয়েছেন বিনয়বাবু। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে পাহাড়ের যাবতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। তার পরে আমরা আমাদের বক্তব্য সবাইকে জানাব।” তৃণমূল শিবির মনে করছে, মমতা-গুরুঙ্গ বৈঠক মোর্চা ও পাহাড়ের অনেক সমস্যারই সমাধান সূত্র বার হয়ে আসবে।
রোশন গিরি-সহ মোর্চার প্রথম সারির নেতা-বিধায়করা রবিবার সকালেই দিল্লিতে গিয়েছেন যন্তর-মন্তরে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে ধর্নায় যোগ দিতে। বিমলেরও যাওয়ার কথা ছিল সোমবার। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে থাকার সময়ই মোর্চার শীর্ষ নেতাদের দিল্লিতে গিয়ে ধর্নায় বসে থাকা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছিল মোর্চাকে। তবে কি তারা রাজ্য সরকারের সঙ্গে সংঘাতের পথ নিচ্ছে? সিপিএম, সিপিআরএম, গোর্খা লিগ জিএনএলফ সব মোর্চা-বিরোধী দল আবার এ-ও বলে যে, এ সবই মোর্চা-তৃণমূলের গড়াপেটা খেলা। এই পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত দিল্লি যাওয়া স্থগিত রাখলেন মোর্চা সভাপতি গুরুঙ্গ। আপাত ভাবে অতিথির প্রতি সৌজন্যবশত। কিন্তু সরকারি ভাবে মোর্চা নেতৃত্ব যাই-ই বলুন না কেন, দলের একটি সূত্র অন্য ব্যাখ্যা দিয়েছে। মোর্চার অন্দরের খবর, তেলেঙ্গানার দাবির বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আরও সময় নিয়েছে কেন্দ্র। তাই সময় পেয়ে গেল মোর্চাও। গোর্খাল্যান্ড নিয়ে তাদের এখনই পাহাড়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে না। এ দিকে মোর্চার শীর্ষ নেতারা অনুপস্থিত থাকা সত্ত্বেও যদি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় লোকসমাগম ভাল হয়, তা হলেও পাহাড়ের মোর্চা-বিরোধী দলগুলি নানা প্রশ্ন তুলবে। তৃণমূলও শক্তি বৃদ্ধি হয়েছে বলে দাবি করতে পারে। সেই ক্ষেত্রেও পাহাড়ে মোর্চার কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠার আশঙ্কা থাকছে। গোর্খাল্যান্ড টাস্ক ফোর্সের মতো নবগঠিত দল তখন সেই প্রশ্ন তুলে শক্তি বাড়াতে চাইবে।
মোর্চা তাই পা ফেলছে সাবধানে। কেন্দ্রীয় সরকার তেলেঙ্গানা প্রশ্নে দীর্ঘদিনের টালবাহানা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের রাজনৈতিক লাভক্ষতির অঙ্ক কষেই। এমনকী গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অথরিটি (জিটিএ)-রই ধাঁচে তেলেঙ্গানাকে বাড়তি কিছু ক্ষমতা দিয়ে সব দিক ঠান্ডা রাখা যায় কি না, ভাবা হচ্ছে তা-ও। তবু এখনই গোর্খাল্যান্ডের আন্দোলনে ঢিলে দিতে চাইছেন না মোর্চা নেতৃত্ব। কারণ কেন্দ্র এক বার তেলেঙ্গানা রাজ্য ঘোষণা করে দিলে পাহাড়ে রাজনৈতিক ভাবে বেজায় চাপে পড়তে হবে তাঁদের। ফলে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে এখন সরবই থাকার পরিকল্পনা নিয়েছে মোর্চা। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গেও বৈঠক করতে সময় চেয়েছে মোর্চা।
সোমবার সকালে দলের বিভিন্ন মহকুমার নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন গুরুঙ্গ। সেখানে সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। উত্তরবঙ্গ উৎসবে ও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে থাকার জন্য শাসক দলের পক্ষ থেকেও যে বারবার অনুরোধ এসেছে, সেই বিষয়টি নিয়েও মত বিনিময় করেন মোর্চা নেতারা। সেখানে অধিকাংশ মোর্চা নেতাই জানান, রাজ্য সরকারের আমন্ত্রণ উপেক্ষা করলে জিটিএ চালাতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর পরেই গুরুঙ্গ দিল্লি যাওয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত করে দেন। মমতার উৎসব বয়কট করতেই দিল্লি চলে এসেছেন বলে যে অভিযোগ উঠেছে দিল্লিতে তা আজ অস্বীকার করেন রোশন গিরিও। তিনি বলেন, “পৃথক রাজ্যের দাবিতে কিছু নেতা-নেত্রী দিল্লি এসেছেন। বাকি যারা ওখানে রয়েছে তারা ওই উৎসবে যোগ দেবেন।” প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য এ দিনও অভিযোগ করেন, “আমরা তো গোড়া থেকেই বলছি মোর্চা-তৃণমূলের মধ্যে গোপন বোঝাপড়া রয়েছে। সবটাই সাজানো। পাহাড়ের মানুষও ওই বোঝাপড়ার স্বরূপ ধরে ফেলেছেন।” একই অভিযোগ জিএনএলএফ, গোর্খা লিগ, সিপিআরএম নেতাদেরও।

আর কতই বা বলব: মমতা
ক্যানিং-এ সাড়ে তিন ঘন্টা থেকে শিলিগুড়িতে ২০ মিনিট। সাত দিনের মধ্যে মমতা বুঝিয়ে দিলেন, ‘ছুটলে কথা থামায় কে’ কথাটা মোটেই বলা চলে না তাঁর সম্পর্কে। বরং মুখ্যমন্ত্রী এ দিন একাধিকবার বলেছেন, “বেশি বলব না। তা হলে আপনারা বিরক্ত হবেন।” বলার মতো খুব নতুন কোনও কথাও ছিল না অবশ্য। উত্তরবঙ্গের জন্য কী কী প্রকল্প করবেন, তার ফিরিস্তি দেওয়ার পরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “বেশি বলব না। তা হলে আপনারাই বলবেন বেশি কথা বলছেন। তা ছাড়া বেশি বললে আমারও তো মুখে ব্যথা হবে। আর কতই বা আমি বলব।” বইমেলায় মমতা বলেছিলেন, শরীর খারাপ বলে বেশি কথা বলবেন না। সোমবার বক্তৃতার শেষ পর্বে এক সময়ে ঠাট্টার সুরে মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, “বেশি কথা বললে বিরক্ত হবেন। আমাকে মারতেও পারেন।” এর পরে মঞ্চে উপস্থিত চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ-সহ অন্য ব্যক্তিদের ডেকে নেন। প্রায় আধ ঘন্টা ধরে মঞ্চে রাখা একটি ক্যানভাসে ছবিও আঁকেন তিনি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.