পরিকাঠামোর দাবি পর্যটকদের
নিরাপত্তাই মূল কারণ, নৌকাবিহারে অনুমতি নেই, জানাল সেচ
মুকুটমণিপুর জলাধারে নৌকাবিহার বেআইনি বলে ঘোষণা করল কংসাবতী সেচ দফতর। নৌকাবিহার চলাকালীন কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায়ও তারা নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। সম্প্রতি মুকুটমণিপুরের বিভিন্ন জায়গায় কংসাবতী সেচ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবের জন্যই সেচ দফতর এখানকার নৌকাবিহারে অনুমতি দেয়নি বলে জানিয়েছে। পরিকাঠামো না গড়ে নিছক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সরকার কেন দায় সারছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পর্যটকেরা। যদিও কংসাবতী সেচ কর্তৃপক্ষের দাবি, পর্যটকদের সচেতন করতেই এই বিজ্ঞপ্তি। রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও দাবি করেছেন, পরিকাঠামো গড়ার জন্য পর্যটন দফতরের সঙ্গে তাঁরা আলোচনা করবেন।
কুমারী ও কংসাবতী নদীর এই সঙ্গমস্থলে বাঁধ বেঁধে বিরাট জলাধার গড়ে ওঠার পর থেকেই মুকুটমণিপুরের সৌন্দর্যের টানে পর্যটকরা আসতে শুরু করেন। চালু হয় নৌকাবিহার। জলাধারের অন্য পাড়ে ডিয়ারপার্ক দেখতে যাওয়া কিংবা নিছকই জলে ভেসে বেড়ানোর আকর্ষণও কম নয়। মোটরচালিত ও হস্তচালিত প্রায় ৫০টি নৌকা চলে। স্থানীয় তেঁতুলচিটা, খড়িডুংরি, ভুটকুঘুটু, ভেলাইগোড়া, ভমরপুর-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের কয়েকশো বাসিন্দা এখানে নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। নৌকাবিহারের ভাড়া মাথাপিছু ৩০ থেকে ৫০ টাকা। ঘন্টার চুক্তিতে ভাড়া ৫০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত। ওই জলাধারের দায়িত্বে রয়েছে কংসাবতী সেচ দফতর। কিন্তু বিজ্ঞপ্তি জারির পরেও নৌকাবিহার বন্ধ করা হয়নি।
আর কি দেখা যাবে এই ছবি? ইনসেটে সেচ দফতরের বিজ্ঞপ্তি। —নিজস্ব চিত্র।
কংসাবতী সেচ দফতরের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার (১) বিশ্বনাথ কুমার বলেন, “জলাধারে নৌকা বিহারের অনুমতি কাউকে দেওয়া হয়নি। স্থানীয় কিছু নৌকা চালক ব্যবসায়িক স্বার্থে এটা চালিয়ে যাচ্ছেন।” কেন অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না? তাঁর জবাব, “ওই যাত্রীবাহী নৌকাগুলিতে ‘লাইফ সেভিং জ্যাকেট’, ‘টিউব’ এ সব নেই। দুর্ঘটনা ঘটলে যাত্রীদের বাঁচানো কঠিন। তা জানতে পেরেই আমরা বিজ্ঞপ্তি জারি করে সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছি।” তাঁদের আশঙ্কা অমূলকও নয়। অনেক নৌকাতেই গাদাগাদি করে পর্যটকদের তোলা হয়। তা হলে নৌকাবিহার বন্ধ করা হচ্ছে না কেন? তিনি জানান, সে ক্ষমতা তাঁদের নেই। ওটা প্রশাসনের কাজ।
“কিন্তু প্রশাসন সব জেনেও নৌকাবিহারের পরিকাঠামো গড়তে কেন এগিয়ে আসছে না”-- প্রশ্ন তুলেছেন মুর্শিদাবাদের লালগোলা থেকে বেড়াতে আসা মহম্মদ সাবির ও তানিয়া বিবি। তাঁদের কথায়, “এখানে নৌকাবিহারের আকর্ষণ এড়ানো যায় না। এ ভাবে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কিংবা নৌকাবিহার বন্ধ করে দিলে আখেরে পর্যটকদেরই ক্ষতি হবে।” আর্থিক ক্ষতির কথা বলছেন নৌকা চালক জীবন মুদি, সুকেশ সিং পাতররা। তাঁদের দাবি, “দীর্ঘদিন ধরেই আমরা জলাধারে নৌকা চালাচ্ছি। বাড়তি যাত্রী তোলা হয় না। আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে নৌকায় ‘টিউব’ রাখা থাকে। পুজোর পর থেকে শীত পর্যন্ত কয়েকটা মাস যে টুকু রোজগার হয়। তাও সরকার কেড়ে নিলে আমরা খাব কী?”
সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মুকুটমণিপুরে নৌকাবিহার তো বন্ধ নেই। নৌকাবিহারের পরিকাঠামোর অভাব থাকায় শুধু সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।” এত দিন চলতে দিলেন কেন? মন্ত্রীর অভিযোগ, “সিপিএমের লোকেরা বেআইনি নৌকাবিহার থেকে টাকা কামাতেন। তাই মদত দিয়ে গিয়েছে।”
সিপিএমের স্থানীয় গোড়াবাড়ি পঞ্চায়েতের প্রধান চন্দনা মাহাতো অবশ্য দাবি করেছেন, “এলাকার বহু মানুষ মুকুটমণিপুর জলাধারে নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাঁদের কথা ভেবেই নৌকাবিহারে বাধা দেওয়া হয়নি। তবে দুর্ঘটনার জন্য কিছু সতর্তকা নেওয়া উচিত।” খাতড়ার বিডিও মৈত্রী চক্রবর্তী জানিয়েছেন, মুকুটমণিপুর জলাধারে নৌকাবিহারের ব্যাপারে কংসাবতী সেচ কর্তৃপক্ষ তাঁকে লিখিতভাবে কিছু জানায়নি। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.