দরজার এ পারে দমবন্ধ দু’ঘণ্টা
হাত খানেকের একটা আঁশ বটির ভরসাতেই আটকে রাখা হল আস্ত একটা চিতাবাঘকে।
প্রায় ছ’ফুটের মতো লম্বা চিতাবাঘটা হলুদ বিদ্যুতের ঝলকানির মতোই এক ঝটকায় এক মহিলার হাতে থাবা বসিয়ে ঢুকে পড়েছিল ঘরে। শিলিগুড়ির হাকিমপাড়ার অতুলপ্রসাদ সরণীর ঘোষ পরিবার যখন ঘোর কাটিয়ে বিপদ বুঝতে পারলেন, মনে পড়ল ওই ঘরের দরজার হাতলটা ভাঙা। বাইরে থেকে বন্ধ করা যাবে না। তত ক্ষণে ভিতরের দরজা দিয়ে পাশের ঘরে ঢুকে পড়েছে চিতাবাঘটা। সেই ঘরের দরজা তৎক্ষণাৎ বাইরে থেকে বন্ধ করে দেওয়া গিয়েছিল। কিন্তু অন্যটা হাট করে খোলা। ঘরের ভিতর থেকে শোনা যাচ্ছে ক্রুদ্ধ শ্বাপদের শ্বাসের শব্দ। যে কোনও মুহূর্তে লাফিয়ে বেরিয়ে এলে ফালাফালা করে দিতে পারে সকলকে।
ইতিমধ্যে খবর রটে গিয়েছে পাড়ায়। কাছেই থাকেন নীতীশ ঘোষ। মাঝ বয়সী সেই ভদ্রলোকই দেখলেন, খোলা দরজাটার বাইরে দাওয়ার উপরে পড়ে রয়েছে একটা আঁশ বটি। বাঘটা তখন পাশের ঘরে। দ্রুত হাতে দরজার পাল্লা দু’টো ভেজিয়ে তার নীচ দিয়ে কাৎ করে বঁটির লোহার ফলাটা ঢুকিয়ে চোখের নিমেষে সেটা সোজা করে টেনে দিতে দরজাটা বাইরে থেকে আটকে রইল। লোহার ফলাটা আঁকশির মতো করে দরজাটা নীচে থেকে আটকে রেখেছিল। তাতে সামান্য যেটুকু শব্দ হয়েছিল, তাতেই কিন্তু চিতাবাঘটার চলাফেরা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বোঝা যাচ্ছিল, কী হচ্ছে বোঝার চেষ্টা করছে সে। বঁটির ফলাটা যে কাঠের পাটার সঙ্গে লেগে থাকে সেটা তখন নীতীশবাবু প্রাণপণে টেনে রেখেছেন। তাঁর সাহস দেখে এগিয়ে এলেন অন্যেরাও। সকলে মিলে চাপ দিয়ে ধরে রাখলেন বঁটির পাটাটা। আর সেই ভাবেই কাটল প্রায় ঘণ্টা খানেক। তারপরে বন দফতর এসে দায়িত্ব নেয়। তাঁরা ওই দু’টি ঘর জাল দিয়ে ঘিরে ফেলেন।
রাঙাপানির গ্রামের ছেলে নীতীশবাবু সোনার কাজ করেন। তাঁর কথায়, “জানি ব্যাপারটা বিপজ্জনকই ছিল। বঁটির লোহার ফলাটা থাবা দিয়ে টানার চেষ্টা করতে পারত বাঘটা। বঁটির ফলার পিছন দিকে তেমন ধারও থাকে না। তাই সেক্ষেত্রে দরজা আটকে রাখা কঠিন হতো। ফলাটা খুলেও যেতে পারত। যাই হোক, সে সব কিছুই হয়নি। দরজার দিকে আর আসেনি চিতাবাঘটা।” তবে তারই মধ্যে বঁটির ওই ছোট্ট পাটার উপরেই চাপানো হয়েছে সিমেন্টের বস্তা। হাত লাগিয়েছিলেন উপস্থিত সকলেই।
ভিতর থেকে তখন ভেসে আসছে ক্রুদ্ধ বাঘের দাপাদাপির শব্দ। দুমদাম করে আছড়ে পড়েছে দুই ঘরের আলনা, ড্রেসিংটেবিল। ফালাফালা করে ছিঁড়েছে লেপ তোষক। এক একবার হুঙ্কার দিয়ে উঠেছে। এর মধ্যেই পিছনের দিকের একটি জানলা দিয়ে চিতাবাঘ দেখতে উঁকি দিয়েছিলেন উত্তম দত্ত। চোখের নিমেষে জানলার লোহার শিকের ভিতর থেকে থাবা দিয়ে তার পেটে আঁচড় কেটে দিয়েছে চিতাবাঘ। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে।
অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছেন ঘোষবাড়িরই ছেলে উত্তম। বেলা পৌনে দশটা নাগাদ ঘর থেকে বেরিয়ে তিনিই প্রথম চিতাবাঘের মুখে পড়েছিলেন। কলের পাড়ের দেওয়াল টপকে চিতাবাঘটা লাফিয়ে এসে পড়ে ঠিক তাঁর সামনে। পর ক্ষণেই উঠোন দিয়ে পাশে শুভমের জ্যাঠামশায়ের ঘরের দিকে চলে যায়। ভিতরে ছিলেন শুভমের জ্যাঠাইমা মিনা ঘোষ। শুভম চিৎকার করে তাঁকে সতর্ক করতে না করতেই মিনাদেবীর হাতে থাবা বসিয়ে দেয় চিতাবাঘটা। তিনি কোনও রকমে বাইরে বেরিয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়েন। তারপরেই শুরু হয় ঘোষ পরিবারের আতঙ্কের প্রহর। ১১টা নাগাদ পৌঁছয় বন দফতর। তবে চিতাবাঘটিকে কব্জা করতে করতে লেগে যায় আরও বেশ কিছুক্ষণ। বন দফতর এসে ঘুমপাড়ানি গুলি করে যখন জন্তুটিকে জালে ধরলেন তখন বেলা প্রায় ১টা বাজে।
চিতাবাঘটিকে বার করে নিয়ে যাওয়ার পরে লন্ডভন্ড ঘরদোরের অবস্থা দেখে উঠোনেই বসেছিলেন মিনাদেবী। ভয়ে তখনও কেঁপে কেঁপে উঠছেন। তাঁর মেয়েরাও চলে এসেছেন বাপের বাড়ি থেকে। তাঁরাই সামলাচ্ছেন মাকে। ঘোষ বাড়িতে এ দিন রান্নাবান্নার পাট ছিল না। সযত্নে সেই বঁটিটি তুলে রাখা হয়েছে। মিনাদেবী বলেন, “যত বার বঁটিটা দেখব, মনে পড়বে বাঘটার কথা।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.