সেবিকা-সঙ্কট
সরকারি হাসপাতালে পুরুষ নার্স আনার চিন্তা
নার্স বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক শুভ্রবসনা মহিলার ছবি। বিশেষত এ রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে। তবে এ বার বুঝি ছবিটা বদলাতে চলেছে। আকাল সামলাতে সেবিকার পদে পুরুষ নিয়োগের কথা ভাবছে স্বাস্থ্য দফতর, যদিও তা নিয়ে কিছু প্রশ্ন ইতিমধ্যে উঠে পড়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে পুরুষ নার্স অবশ্য অভিনব কিছু নয়। বর্তমানে বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতাল-নার্সিংহোমে পুরুষ নার্সরা কাজ করছেন, তাঁদের গুরুত্বও যথেষ্ট। আগে হাতে গোনা অন্য কয়েকটা হাসপাতালে (যেমন, তদানীন্তন কারমাইকেল, বর্তমানে আরজিকর) সেবিকা হিসেবে ছেলেদেরও নিয়োগ করা হতো। কিন্তু সরকারি অধিগ্রহণের পরে সেই প্রথায় দাঁড়ি পড়েছে। সরকারি চিকিৎসালয়ে নার্সের ভূমিকায় মেয়েরাই একচেটিয়া। কিন্তু পরিস্থিতির ফেরে অন্য রকম ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন স্বাস্থ্য-কর্তারা।
কেন? স্বাস্থ্য দফতরের বক্তব্য: ইদানীং সরকারি হাসপাতালে যে হারে নার্সের অভাব দেখা দিয়েছে এবং তাঁদের একটা বড় অংশ যে ভাবে দীর্ঘ ছুটিতে যাচ্ছেন, তাতে বিকল্প হিসেবে পুরুষ নার্সের কথা ভাবা ছাড়া উপায় নেই। স্বাস্থ্য-সংস্কারের লক্ষ্যে সরকার নিযুক্ত উচ্চ পর্যায়ের পরামর্শদাতা কমিটির চেয়ারম্যান, চিকিৎসক সুব্রত মৈত্রের কথায়, “কলকাতা তো বটেই, বিভিন্ন জেলা হাসপাতাল ঘুরেও দেখেছি, নার্সের অভাবে কী ভাবে পরিষেবা ধাক্কা খাচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালে তো বহু বছর ধরে পুরুষ নার্সরা কাজ করছেন। এ বার সরকারি হাসপাতালেও তাঁদের আনা দরকার।”
ওঁদের পরিকল্পনা ঘিরে গোড়াতেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে। আপত্তি তুলেছে নার্সদের বিভিন্ন সংগঠন। যেমন নার্সেস ইউনিটি-র সম্পাদক ঋতুপর্ণা ভগতের দাবি, মহিলা নার্সরা বেশি ছুটি নেন এই যুক্তি ভিত্তিহীন। তাঁর প্রশ্ন, “মাতৃত্বকালীন ছুটি (মেটারনিটি লিভ) ছাড়া সব ছুটিই তো এক! আপত্তিটা কি শুধু মেটারনিটি লিভ নিয়ে? কিন্তু সেটা তো বরাবরই ছিল। আগে কেন এ সব বলা হয়নি?” সরকারের ব্যাখ্যা কী?
নার্সিং বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর সান্ত্বনা কুণ্ডু জানান, তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না। তবে স্বাস্থ্য-কর্তাদের বক্তব্য: নতুন জমানায় মাতৃত্বকালীন ছ’মাসের ছুটির ধারণাটা বদলে গিয়েছে। এখন কোনও মহিলা সরকারি কর্মী সন্তানের ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত যে কোনও সময়ে সন্তান পরিচর্যার জন্য দু’বছর ছুটি নিতে পারেন। “তাই ছুটি নেওয়ার হিড়িক পড়ে গিয়েছে। সামলে ওঠা যাচ্ছে না।”মন্তব্য এক কর্তার।
নার্সে টান অবশ্য দেশ জুড়ে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান মোতাবেক, এই মুহূর্তে ভারতে মোট নার্স তিন লক্ষ। চাহিদা ন’লক্ষের। পশ্চিমবঙ্গের সব সরকারি হাসপাতালে প্রায় তিন হাজার নার্সের ঘাটতি, বেসরকারি ক্ষেত্রে হাজারখানেক। দক্ষিণ ভারত থেকে নার্স এনেও সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য-কর্তারা মানছেন, চিকিৎসা পরিষেবায় ত্রুটির যত অভিযোগ জমা পড়ে, তার সিংহভাগের কারণ নার্সের অভাব। কিন্তু নার্সিং পেশার সঙ্গে মেয়েদের যে ভাবে এক করে ফেলা হয়েছে, পুরুষদের আনলে ধারণাটা ধাক্কা খাবে না?
স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তার মতে, এই ভাবনা অযৌক্তিক। তাঁর দৃষ্টান্ত, “বেসরকারি হাসপাতালে পুরুষ নার্সরা সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছেন। ভারতীয় সেনা এবং দক্ষিণের বেশ কিছু রাজ্যেও বহু বছর পুরুষ নার্স রয়েছেন।” “মহারাষ্ট্রে মোট নার্সের ১০% পুরুষ। কেরলে রেড ক্রস সোসাইটি বয়স্কদের উপশম-চিকিৎসায় বছরে যে তিন হাজার নার্সকে নিযুক্ত করে তাঁর বড় অংশই পুরুষ।”
আমেরিকায় মোট নার্সের ৬% পুরুষ। ব্রিটেনের প্রতি দশ জন নার্সের মধ্যে পুরুষ এক জন। রয়্যাল কলেজ অফ নার্সিং-এ ছাত্রের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আউটডোর, অপারেশন থিয়েটার এবং পুরুষদের সাইকিয়্যাট্রি ও অর্থোপেডিক বিভাগের সীমিত গণ্ডি ছাড়িয়ে পুরুষ নার্সের কাজের পরিসর ছড়িয়েছে অন্যান্য ওয়ার্ডে। সঙ্কট মোকাবিলায় একই ধারায় সামিল হতে এ বার পশ্চিমবঙ্গও কোমর বাঁধছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.