থানায় আটক তৃণমূল কর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যুতে দলেরই বিধায়ককে ‘দায়ী’ করলেন মৃতার স্ত্রী। যাকে ঘিরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও প্রকাশ্যে এসে পড়ল।
শনিবার মারা যান ধনেখালির জয়রামবাটি গ্রামের বাসিন্দা কাজি নাসিরুদ্দিন। পুলিশের মারেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার দিনভর উত্তাল ছিল ধনেখালি। ক্ষিপ্ত জনতা পুলিশের একাধিক গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। জখম হন জনা বারো পুলিশ কর্মী।
মৃতার স্ত্রী মনুজা অভিযোগ করেছিলেন, দলের মধ্যে রেষারেষির জেরেই পুলিশ তাঁর স্বামীকে তুলে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করেছে। রবিবার মনুজা এই ঘটনায় স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অসীমা পাত্রের ইন্ধন আছে বলে সরাসরিই অভিযোগ করেছেন। তাঁর কথায়, “অসীমা পাত্রের শাস্তি চাই। ওঁর কথা শুনেই পুলিশ স্বামীকে মেরেছে। যে পুলিশকর্মীরা আমার স্বামীকে মেরেছেন, তাঁদেরও গ্রেফতার করে শাস্তি দেওয়া হোক।” তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন অসীমাদেবী।
|
মৃত নাসিরুদ্দিনের স্ত্রী
মনুজা বিবি। —নিজস্ব চিত্র |
স্থানীয় রাজনীতিতে দলেরই সপ্তগ্রামের বিধায়ক তথা হুগলি জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্তের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত ছিলেন নাসিরুদ্দিন। জেলা রাজনীতির সমীকরণে আবার অসীমাদেবীর ‘বিরুদ্ধে গোষ্ঠী’ বলে পরিচিত তপনবাবু। যদিও সপ্তগ্রামের বিধায়কের সংযত প্রতিক্রিয়া, “উনি (নাসিরুদ্দিন) আমাদের সক্রিয় কর্মী ঠিকই। তবে আইন আইনের কথা বলবে।”
স্থানীয় সূত্রের খবর, কিছু দিন আগে দলেরই দুই বিধায়কের গোষ্ঠীর মধ্যে মারামারি বাধে এই এলাকায়। ‘অসীমা-ঘনিষ্ঠ’ এক জনকে মারধরের অভিযোগ ওঠে নাসিরের বিরুদ্ধে। স্থানীয় মানুষের একাংশের দাবি, তারপর থেকেই নাসিরের বিরুদ্ধে রাগ ছিল দলের একটি গোষ্ঠীর। বাম জমানাতেও সিপিএমের দুই গোষ্ঠীর দুই তাবড় নেতার রেষারেষি চরমে উঠেছিল ধনেখালিতে। এ বার তৃণমূলের মধ্যেও সেই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ।
রবিবারও নাসিরুদ্দিনের বাড়িতে কোনও তৃণমূল নেতাকে দেখা যায়নি। এতে গ্রামবাসীরা ক্ষুব্ধ। গ্রামবাসীদের একাংশ তৃণমূলের বেশ কিছু পতাকা, এমনকী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া ফেস্টুনও ছিঁড়ে দিয়েছেন। পুলিশের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি। এ দিনও গ্রামে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন পুলিশকর্মীরা। গ্রামবাসীর বাধায় ফিরে আসতে বাধ্য হন তাঁরা। জেলা পুলিশের কর্তারা ঘটনা প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করেননি।
নাসিরুদ্দিনকে ‘পুলিশ দিয়ে খুন করানো হয়েছে’ বলে শনিবারই মন্তব্য করেছিলেন কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান। ওই ঘটনাকে ‘তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের পরিণাম’ বলে এ দিন অভিযোগ তুলেছে সিপিএম-ও। হাওড়ার বাউড়িয়ায় সিটু-র সম্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশে দলের নেতা গৌতম দেব এই মন্তব্য করেন। অন্য দিকে, এসইউসি (সি) রাজ্য সম্পাদক সৌমেন বসু অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন। সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের নেতারা আজ, সোমবার মৃত তৃণমূল সমর্থকের বাড়িতে যাবেন বলে জানিয়েছেন। |