ইটভাটা/৪
গ্রামীণ রাস্তা শাসন করে ট্রাক্টর
প্রতি দিনের মতো সাইকেলে স্কুলে যাচ্ছিল বছর এগারোর পূর্বা মণ্ডল। মাটি বোঝাই একটি ট্রাক্টর আচমকা ধাক্কা মারলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তেহট্টের হাঁসপুকুরিয়া বিদ্যাপীঠের ষষ্ঠ শ্রেণীর ওই ছাত্রীর। পূর্বার মামা অসীম বিশ্বাসের অভিযোগ, ‘‘নদীর পাড় থেকে মাটি বোঝাই ট্রাক্টরটি বেপরোয়াভাবে ছুটছিল। ওদের সব সময় তাড়া থাকে। বেআইনি কাজ করছে তো!” প্রায় ন-মাস টালবাহানা করেও পুলিশ ট্রাক্টর চালককে গ্রেফতার করেনি। শেষপর্যন্ত ওই পরিবার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে।
পূর্বা একা নয়, নদিয়া-মুর্শিদাবাদ, এই দুই পড়শি জেলায় বেপরোয়াভাবে ছুটে চলা মাটিবোঝাই ট্রাক্টর। তাদের নিরন্তর ‘ট্রিপ’ খাটার প্রতিযোগিতায় পূর্বর মতো অনেকেই মারা যান। চালকরা ধরা পনেন না। কেন? গ্রামবাসীরা মুচকি হেসে জানান, কাঁচা টাকার ব্যাপার, সেখানে পুলিশেরও ‘বখরা’ আছে। তাই গ্রেফতারের প্রশ্নে পুলিশ এড়িয়েই যান সাধারনত।
‘চুরি’ যাচ্ছে জলঙ্গির পাড়। কৃষ্ণনগরে তোলা নিজস্ব চিত্র।
নদী কিংবা ভাটার দিকে যাওয়ার বেশিরভাগ গ্রামীণ রাস্তা এখন শাসন করে ট্রাক্টর। সে সব রাস্তার ঢোকার মুখেই টাঙানো থাকে, পঞ্চায়েতের বিজ্ঞপ্তি ‘এই রাস্তায় ভারী যান চলাচল নিষিদ্ধ।’ এই নিষেধ কেউ শোনে? রাখঢাক না রেখেই এক গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তার জবাব, ‘‘শুনলে কি আর ভাটাগুলো এভাবে রমরমিয়ে চলত! নাকি রাস্তাগুলোর হাল এমন বেহাল হত?’’ ফলাফল, মাটি বোঝাই ট্রাক্টরের অবিরাম যাতায়াতে সেই বিজ্ঞপ্তিতে শুধু পুরু হয়ে জমতে থাকে ধুলো।
আইনের চোখে শিশু শ্রমিক নাকি নিষিদ্ধ! তাহলে ইটভাটাতে যে কচি মুখগুলোর দেখা মেলে তারা কারা? দুই জেলার বহু ভাটাতে এখনও কাজ করতে দেখা যায় শিশু শ্রমিকদের। মাটি পাকানো থেকে কাঁচা ইট রোদে শুকোতে দেওয়ার মতো গুরু দায়িত্ব সামলায় তারাই। যদিও নদিয়া মুর্শিদাবাদের বেশিরভাগ ভাটা মালিকরাই সমস্বরে জানাচ্ছেন, ‘‘আগে ইটভাটাগুলোতে শিশুদের অল্প পয়সার বিনিময়ে কাজে নেওয়া হলেও এখন সেসব পাট চুকে গিয়েছে। এখন ভাটার বেশিরভাগ কাজ যন্ত্রের সাহায্যে করা হয়। ফলে শিশু শ্রমিকের আর প্রয়োজন নেই।” ডোমকলের মহকুমাশাসক প্রশান্ত অধিকারীর কথায়, “ভাটাগুলো যাতে কোনও ভাবে শিশু শ্রমিক কাজে না লাগাতে পারে সে দিকে কড়া নজর রাখা হচ্ছে।” নদিয়ার জেলাশাসক অভিনব চন্দ্র বলছেন, ‘‘শিশু শ্রমিকের খবর পেলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ নদিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি সংস্কার) দেবাশিস সরকার বলেন, “জেলায় বেআইনি ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে আমরা ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছি।” এই ‘হবে’ আর ‘হচ্ছে’র তফাৎটা কবে মুছবে? কেউ জানে না।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.