সম্পাদকীয় ২...
পৃথক ফল কেন
রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন আসন্ন। কিন্তু কতখানি আসন্ন? কয় দফায় সেই ভোটপর্ব সংগঠিত হইবে? কে বা কাহারা সেই প্রক্রিয়ার দায়ভার বহন করিবে? ইত্যাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলি এই মুহূর্তে অতি অনিশ্চিত। কেবল অনিশ্চিত নহে, তিক্তবিতর্কাধীন। রাজ্য নির্বাচন কমিশন বনাম পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার আপাতত প্রতিটি প্রশ্নকে কেন্দ্র করিয়া প্রবল দ্বিমত পোষণ করিতেছে। নির্বাচন কমিশন নানাবিধ উদ্বেগ ও সেই উদ্বেগপ্রসূত বিবিধ প্রস্তাব রাজ্য সরকারকে জানাইয়াছে, কিন্তু ইঙ্গিত ইহাই যে, রাজ্য সরকার সকল উদ্বেগ ও প্রস্তাবই অগ্রাহ্য করিয়া সম্পূর্ণ নিজের মতে চলিবে, নিজের পছন্দ অনুযায়ী দিনক্ষণ নির্ধারণ করিবে, নিজের পুলিশবাহিনী দিয়া পঞ্চায়েত ভোটের ধকল সামলাইবে। কাহারও কিছু বলিবার নাই। পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী রাজ্য সরকারেরই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অধিকার। ফলত একটি আরও মৌলিক প্রশ্ন উঠিয়া আসে: রাজ্যস্তরে পঞ্চায়েত নির্বাচন সঞ্চালনার ভার কেন আদৌ রাজ্য সরকারের উপরে ন্যস্ত হইবে? যে যুক্তিতে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনের ভার নির্বাচন কমিশন বহন করে, ঠিক একই যুক্তিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দায়িত্বও কি কমিশনের হস্তে থাকাই উচিত নহে?
এই বার পঞ্চায়েত ভোট প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশন যে উদ্বেগ ব্যক্ত করিয়াছে, তাহাতে এই প্রশ্ন অধিক প্রাসঙ্গিক। রাজ্যে ভোটার সংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি ও আসন পুনর্বিন্যাসের সুবাদে পঞ্চায়েত ভোটের আকার-আয়তন এ বার পূর্বাপেক্ষা বড়, প্রায় ষাট হাজার। সুষ্ঠু ভোটগ্রহণের জন্য রাজ্যে তিন দফায় ভোট হইলে ভাল। উপরন্তু গোটা রাজ্যে যে রাজনৈতিক অশান্তির আবহ, তাহাতে এই বিপুল পরিমাণ বুথে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের দায়িত্ব রাজ্য প্রশাসন নিজে না লইয়া কেন্দ্রীয় নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে ছাড়িয়া দিলেই মঙ্গল। রাজ্য সরকার দুই প্রস্তাবেই ভিন্নমত।
কিন্তু যদি পঞ্চায়েত ভোটের আয়তন অত বড় না-ই হইত, কিংবা রাজ্যের পরিস্থিতি অত্যন্ত শান্তিময় হইত, তাহা হইলেও কি সরকারের অধীনে ভোটপর্ব সঞ্চালন সঙ্গত কাজ হইত? মুক্ত গণতন্ত্রের পক্ষে কি ইহা সহায়ক? রাজ্য সরকার তো শেষ পর্যন্ত একটি দলচালিত সরকারই বটে, এবং ভারতের বিশেষ রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনুযায়ী, রাজ্য প্রশাসন কদাচিৎ দল-শাসনের ঊর্ধ্বে উঠিতে সক্ষম! বাম নেতৃবর ই এস নাম্বুদিরিপাদের প্রস্তাব-অনুযায়ী দলহীন পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু করা গেলে কী দাঁড়াইত বলা যায় না, কিন্তু বর্তমান ব্যবস্থায় সংশয় থাকিয়াই যায় যে, যে দল সরকার চালাইতেছে, সেই দলই আবার পঞ্চায়েত-স্তরে, কিংবা অন্য কোনও স্তরে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী হইলে পক্ষপাতিত্ব বা দুর্নীতির সম্ভাবনা বহুগুণ বাড়ে সে রাজ্য সরকার তৃণমূল কংগ্রেসের হউক আর বামফ্রন্টেরই হউক। মাস্টারমশাইয়ের নিজের ছেলে পরীক্ষা দিলে যদি মাস্টারমশাই সে বছর খাতা দেখিবার অনুমতি না পান, একই যুক্তিতে রাজ্য পঞ্চায়েত নির্বাচন সঞ্চালনার অধিকারও রাজ্য সরকারের হাত হইতে সোজাসুজি নির্বাচনী কমিশনের হাতে যাওয়াই যুক্তিযুক্ত!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.