কুম্ভমেলা
তেরঙা আলোয় সেনাদের স্মৃতিতর্পণ
ই আরতিতে প্রদীপ নিয়ে নৌকো ভাসবে না গঙ্গায়। রামধুনের সঙ্গে মিশে থাকবে বেশ কিছুটা বারুদও। বড় বড় আখড়ার মত আলোর ধুন্ধুমার এখানে নেই, বরং প্রস্তুতি চলছে তেরঙা আলোয় শিবির সাজিয়ে দেওয়ার।
মানচিত্র বলছে, কার্গিলের বরফে রক্তের দাগ কুম্ভমেলা থেকে ঢের দূরে। ছত্রপতি শিবাজি স্টেডিয়াম অথবা তাজ প্যালেসের সেই আর্ত, দগ্ধ ফ্রেমগুলোও অপ্রাসঙ্গিক মনে হওয়ার কথা। তবে এ বারের কুম্ভ মেলায় শহিদ সেনা-পুলিশ-জওয়ানদের পরিবারের জন্য রয়েছে বিশেষ আয়োজন। প্রয়াগের নদীর তীরে তৈরি হয়েছে কার্গিল যুদ্ধ এবং ২৬/১১-র জঙ্গি হানায় নিহত সেনা ও পুলিশকর্মীদের স্মৃতির উদ্দেশে ৩০টি বিশেষ তাঁবু এবং সেনা ছাউনি। মেলা চলাকালীন সেখানে এসে থাকবেন নিহতদের পরিবারবর্গ।
নিয়ন্ত্রণরেখায় প্রতিদিন হিংসা এবং সেনা হত্যার ঘটনায় গোটা দেশ যখন অগ্নিগর্ভ, তখন এই ধরনের শিবিরকে যেন আরও বেশি প্রাসঙ্গিক মনে হয়। এই মেলা যদি মনের মিলনক্ষেত্র হয় তবে সেখানে বিক্ষুব্ধ, আর্ত মনের সমাবেশই বা থাকবে না কেন। সুর বাঁধার এই লীলাভূমিতে কেনই বা থাকবে না সুর ছিঁড়ে যাওয়ার বেদনার প্রকাশ। হরিশচন্দ্র মার্গে বদ্রীনাথের মহারাজ সন্তশ্রী বালক যোগেশ্বর দাসজীর আশ্রম এলাকায় তিরিশটি বিশেষ তাঁবু সাজানো হয়েছে। পাশে ১৬টি পৃথক সেনাবাহিনীর তাঁবু। সেই সঙ্গে একটি বিশাল যজ্ঞশালা তৈরি হয়েছে, যার শতাধিক হোমকুন্ড। এখানে শুধু মাত্র কার্গিল যুদ্ধের শহিদ এবং মুম্বই হামলায় নিহতদের জন্যই বসবে বিশেষ যজ্ঞ। ২০০৩ সালে কার্গিলের শহিদ পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছিলেন যোগেশ্বর দাসজী। তখন থেকেই ইচ্ছে ছিল এঁদের জন্য মহাকুম্ভে কিছু একটা করার। বললেন, “আগামী রবিবার বেনারসের সন্ন্যাসীদের কৈলাস যাত্রার সময় উদ্বোধন হবে মহাযজ্ঞের। ১৩ ফেব্রুয়ারি পূণ্য আহুতির মাধ্যমে এখানে যজ্ঞ শেষ হবে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন শহিদদের পরিবার। গোটা ব্যবস্থায় সব রকম সহায়তা করছে উত্তরপ্রদেশ সরকার।
এখানেই এসে থেকে যাওয়ার কথা পরমবীর চক্রে সম্মানিত শহিদ মেজর বিক্রম বাত্রার বাবা অর্জুন বাত্রা, ক্যাপ্টেন মনোজকুমার পাণ্ডের ভাই আশিস পাণ্ডে, জম্মুর সেনা মেডেল পাওয়া শহিদ অজয় সিংহ জাসরোটিয়ার মা এবং ভাই, মুম্বই সন্ত্রাসে নিহত এটিএস প্রধান হেমন্ত কারকারের স্ত্রী কবিতা কারকারে, নিহত মুম্বই পুলিশের সিনিয়র ইন্সপেক্টরের স্ত্রী, আজমল কসাবকে আটকাতে গিয়ে প্রাণ হারানো মুম্বই পুলিশের কর্মী তুকারাম ওম্বলের স্ত্রী-সহ আরও অনেকের। আশ্রমের মধ্যে যে অংশে এই তাঁবু, তার নাম বদলে করা হয়েছে ‘ওয়ার মেমোরিয়াল’। প্রতি সন্ধ্যায় হচ্ছে শহিদ স্মৃতিতে আরতি, পরিকল্পনা রয়েছে কার্গিল এবং ২৬/১১-র ছবির প্রদর্শনী করার। গোটা এলাকা তেরঙা আলোয় রাঙিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে।
কুম্ভমেলায় এই প্রয়াস প্রথম। শত শত বছর ধরে কুম্ভ ছিল কঠোর সাধনা, কৃচ্ছ্বসাধন এবং সন্ন্যাসীদের পুণ্যার্জনের এক পরম আখড়া। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ভক্ত মানুষের মিলনক্ষেত্র। আজ সেখানে যেমন উচ্চপ্রযুক্তির অনায়াস মিলমিশ, তেমনই উঁকি মারতে দেখা যাচ্ছে জাতীয়তাবাদের আবেগকেও। বর্ণহিন্দুত্বের সঙ্গে কার্গিলকে মিলিয়ে দেওয়ার এই প্রয়াসের পিছনে কি রয়েছে কোনও রাজনৈতিক শক্তির প্রেরণা? ব্যবস্থাপনা এবং উদ্যোগের যিনি প্রধান সেই যোগেশ্বর দাসজী বলছেন, “আদৌ নয়। দেশকেও তো মাতৃরূপে বন্দনা করি আমরা। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, আগামী পঞ্চাশ বছর দেশমাতৃকার সেবাই সবচেয়ে বড় পুজো। দেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে যাঁরা লড়াই করতেন তাঁদের পকেটে থাকত গীতা। আর আজ সেই দেশকে রক্ষা করতে গিয়েই যাঁরা প্রাণ দিলেন, এই পুণ্যস্থানে তাঁদের স্মরণ করাটা তো খুব স্বাভাবিক ঘটনা।” ২০০৬-এ কার্গিলের বুকেই একটি সর্বধর্মসম্মেলন হয়েছিল, যেখানে শহিদদের পরিবারের সবাই উপস্থিত ছিলেন। যে মাটির বুকে সেনারা লড়াই করেছিলেন, তা স্বচক্ষে দেখে সে সময় হয়তো কিছুটা সান্ত্বনা পেয়েছিল তাঁদের পরিবার। কিন্তু এ বারের প্রয়াসে সেই বীর সেনাদেরই স্মৃতিতর্পণ করল কুম্ভ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.