নতুন কী, প্রশ্ন শিল্পমহলের
লগ্নি নগণ্য, তবু মাঠ ভরেছে তাই স্বস্তি রাজ্যের
তাশা ঠিক বলা যাবে না। প্রত্যাশা মিলে গেলে হতাশা বলা যায় কি?
দ্বিতীয় ‘বেঙ্গল লিডস’ থেকে প্রাপ্তির ঘরে গোড়া থেকে শূন্যই বসিয়ে রেখেছিল শিল্পমহল। তাদের দাবি, ২৫ কোটি টাকা খরচ করে তিন দিনের শিল্পযজ্ঞের শেষে বৃহস্পতিবার সেই প্রত্যাশা মিলে গিয়েছে। “আগের জমানায় যা হয়েছে সব ভুল, এটা জানার বাইরে এই সম্মেলনে আর কিছু প্রাপ্তি নেই আমাদের,” বললেন এক শিল্প-কর্তা।
প্রত্যাশা মিলে গিয়েছে রাজ্য সরকারেরও। শিল্প সম্মেলনের সাফল্য তারা মাপতে চেয়েছিল স্টলের সংখ্যা দিয়ে! তাই স্টলের সংখ্যা বাড়াকে সাফল্যের তালিকাতেই রেখেছে তারা। সরকার জোর দিয়েছিল, মাঠ যেন খালি না-থাকে। থাকেনি। সরকারের বিভিন্ন দফতরের স্টলই মাঠ ভরিয়েছে। ঠিক যে ভাবে হল ভরেছে ছাত্র, সরকারি কর্মী এবং বিভিন্ন বণিকসভার সদস্য সংস্থার কর্মীদের দিয়ে।
আর লগ্নি? তার হিসেব ঘিরে থেকে গিয়েছে ধোঁয়াশাই। গুজরাতের সরকারি হিসেব বলছে, ২০০৩-এ প্রথম বার ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’ সম্মেলনে লগ্নি সংক্রান্ত ৮০টি মউ স্বাক্ষর হয়েছিল। লগ্নির প্রস্তাব ছিল ৬৬ হাজার কোটি টাকার। ২০১১-তে তা বেড়ে হয় যথাক্রমে ৮৩৮০টি এবং ২০ লক্ষ ৮৩ হাজার কোটি টাকা।
সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ভেঁপু নিয়ে কুচকাওয়াজ স্থানীয় শিল্পীদের।
বৃহস্পতিবার বেঙ্গল লিডসে। ছবি: সুদীপ আচার্য।
আর ‘বেঙ্গল লিডস’? শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, অঙ্কটা বড় কথা নয়। এই ধরনের সম্মেলনে যোগাযোগটাই মূল বিষয়। তাঁর জোর, পরস্পরের সঙ্গে মত বিনিময়ের উপর। পার্থবাবুর কথায়, “আমরা এঁদের সামনে রাজ্যের নীতি ও ভাবনা বলেছি। ওঁদের পরিকল্পনা সুস্পষ্ট ভাবে জানাতে বলেছি।” কিন্তু যেখানে আগাম ঘোষণা সত্ত্বেও শিল্পনীতিই প্রকাশ করা গেল না, সেখানে এই দাবির যৌক্তিকতা কী? প্রশ্ন তুলেছে শিল্প মহল। “কী নিয়ে আলোচনা করব? শুধু অনুযোগ জানানো ছাড়া আর কিছুই তো হল না একের পর এক সেমিনারে।” মন্তব্য হতাশ এক শিল্পকর্তার। তাঁরা অবশ্য এর বেশি কিছু প্রত্যাশাও করেননি। কারণ, “আমরা জানতাম রাজ্যের ভাবমূর্তি নিয়ে যে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে, সেটা রাতারাতি চলে যাওয়ার মতো কিছু হয়নি। সরকার দাবি করলেও গত দেড় বছরে সার্বিক ভাবে লগ্নি টানার জন্য কাজের কাজ খুব কিছু হয়নি।”
নতুন লগ্নি কি তবে একেবারেই নেই? শিল্পমন্ত্রী বলেন, “আমরা অনেক প্রস্তাব পেয়েছি।” তাঁর হিসেবে অঙ্কটা ১৫ হাজার কোটি টাকার মতো। এসার গোষ্ঠী ও গ্রেট ইস্টার্ন এনার্জি এ রাজ্যে তাদের নতুন প্রকল্পে যথাক্রমে ৫০০০ ও ২৬০০ কোটি টাকা লগ্নি করবে। ম্যাটিক্স-এর নয়া লগ্নির অঙ্ক প্রায় ৫২০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া ট্রান্সফর্মার ও অনুসারী শিল্পে মারসন সংস্থার লগ্নির পরিমাণ প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। সিমেন্ট কারখানা গড়তে ইমামি গোষ্ঠীর লগ্নির অঙ্ক ৫০০ কোটি টাকা। আল্ট্রাটেক, অম্বুজা এবং ওসিএল-ও সিমেন্ট শিল্পে লগ্নি করার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু এই সব প্রস্তাব কি বেঙ্গল লিডস-এ এল, নাকি আগেই এসেছিল? ধোঁয়াশা কাটেনি।
কোন প্রস্তাব কখন এসেছে, সে সব নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজিও নন শিল্পমন্ত্রী। কিছু প্রস্তাব আগের সরকারের আমলেই এসেছে মেনে নিয়েও তাঁর দাবি, তাদের কাছে শুধু কয়েকটি নাম ছিল। তাঁরা ক্ষমতায় আসার পরেই সেই সব প্রস্তাবকে নিয়ে নতুন উদ্যমে ঝাঁপান, লগ্নিকারীদের রাজি করান।
এ দিনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে বেঙ্গল চেম্বারের প্রেসিডেন্ট কল্লোল দত্ত, ডিভিসি-র চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ সেন, এসার গোষ্ঠীর ভারতের কর্তা ইফতিকার নাসের, মিৎসুবিশি কেমিক্যাল-এর এগ্জিকিউটিভ চেয়ারম্যান ডি পি পাত্র, উপদেষ্টা সংস্থা আই-ইউনের দেবাশিস সেনগুপ্ত ছাড়া রাজ্যের শিল্পমহলের প্রথম সারির তেমন কাউকে চোখে পড়েনি।
তবে গত কালের মতো এ দিনও বহু সাধারণ মানুষ এসেছিলেন মেলা দেখতে। প্রায় ২০ হাজার টাকার বিক্রিবাটা হওয়ায় খুশি জেলার গ্রামীণ উন্নয়ন সেলের স্টল-কর্মী হরিরানী ভুঁইঞা। এক শিল্পকর্তাও সব শুনে আশ্বস্ত হলেন, “যাক মেলার মাঠ অন্তত খালি থাকেনি!”
শিল্প পরে, মাঠ ভরানোই বড় কাজ ছিল যে!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.