নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
জোড়াপানি নদীখাত সংস্কার করতে আট কোটি টাকার যে মাটি কাটার কাজ হয়েছে সে ব্যাপারে শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য পুরোপুরি অন্ধকারে ছিলেন বলে দাবি করেছেন। চেয়ারম্যান রুদ্রবাবু বলেন, “জোড়াপানি নদী সংস্কার করা হবে বলে বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে কবে টেন্ডার ডেকে কাজ শুরু হয়েছে, আট কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে সে ব্যাপারে আমি কিছুই জানতাম না। সে কারণেই তদন্ত কমিটি গড়ে তা দেখা হবে।”
তবে বামেরা চেয়ারম্যানের ওই দাবি নস্যাৎ করেছেন। তাদের অভিযোগ, এসজেডিএ’র মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক গোদালা কিরণ কুমার ওয়ার্ক অর্ডারে সই করে ওই কাজের অনুমোদন দিয়েছেন। চেয়ারম্যান জানেন না তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। তাদের অভিযোগ, বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে এসজেডিএ’তে পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি হচ্ছে। চেয়ারম্যান তার একটা অংশ দেখিয়ে বাকিটা আড়াল করতে চাইছেন। বিভিন্ন প্রকল্পে প্রায় ১২০ কোটি টাকার কাজে নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতি হচ্ছে বলে তারা অভিযোগ তুলেছেন।
জোড়াপানি নদীর কাজে দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ‘সিএজি’কে দিয়ে অডিট এবং সিবিআইকে দিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছেন বামেরা। চেয়ারম্যান এবং মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিককে পদে থাকলে তদন্তের কাজ বাধা পেতে পারে বলে সে সময় তাদের সরে দাঁড়ানো প্রয়োজন বলে দাবি করেছেন। রুদ্রবাবু বলেন, “বামেদের চিন্তার কোনও কারণ নেই। শুধু আমাদের সময়ের এই কাজ নয়। বামেদের জমানায় জমি কেনা থেকে শুরু করে যত কাজ হয়েছে সবই তদন্ত করে দেখা হবে।”
উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব জানান, রুদ্রবাবু একজন সমাজ সেবক। বিধায়ক হওয়ার আগে থেকে তিনি নানা ধরনের সমাজসেবামূলক কাজ করে আসছেন। এখন তিনি এসজেডিএ’র চেয়ারম্যান। মন্ত্রী বলেন, “সেখানে কোনও রকম অস্বচ্ছ ব্যাপারে রুদ্রবাবু যুক্ত থাকতে পারেন সেটা অন্তত আমি বিশ্বাস করি না। সে জন্য তিনি নিজেই তদন্তের কথা বলেছেন। তদন্ত হলেই সব স্পষ্ট হবে।” এ দিন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা এসজেডিএ’র প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোক ভট্টাচার্য এবং এক সময়ে এসজেডিএ’র সদস্য নুরুল ইসলামকে পাশে বসিয়ে সিপিএমের ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার এসজেডিএ’র দুর্নীতি বিষয়ে সরব হন। তিনি জানান, এর আগে ১৪ কোটি টাকা খরচ করে ত্রিফলা আলো লাগাতে আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে। এ বার প্রকাশ্যে এসেছে জোড়াপানি নদীর কাজ। এসজেডিএ’র মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক-সহ অন্য বাস্তুকারদের নিয়ে যে ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং’ কমিটি গড়া হয়েছে তাতে সুষ্ঠু তদন্তের কাজ হবে না বলেই তারা দাবি করেছেন।
এসজেডিএ’র প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোকবাবু দাবি করেছেন, তার আমলে এ রকম কোনও দুর্নীতি হয়নি। তিনি বলেন, “এখন তো অধিকাংশ কাজই বিনা টেন্ডারে হচ্ছে। কী দরে কাজ হবে ঠিকাদার ঠিক করে দিচ্ছেন। মোট কত টাকার কী পরিমাণ কাজ, কত দিনে তা হবে ওয়ার্ক অর্ডারে কিছুই উল্লেখ থাকছে না। কাজ না হতেই টাকা মিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যন্ত্রাংশ না কিনেই ঠিকাদার সংস্থাকে টাকা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।” রুদ্রবাবু বলেন, “ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে অশোকবাবুর হতাশা এখনও কাটেনি। একজন চিকিৎসক হিসাবে পরামর্শ দিতে পারি ওনাকে হতাশা কাটানোর উপায় খুঁজতে হবে। চিকিৎসক হিসাবে সেটুকু সাহায্য করতে পারি।”
জীবেশবাবু জানান, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারাই তদন্ত করলে তা কী হতে পারে সকলেই বুঝতে পারছেন। অপরাধীদের আড়াল করতেই এটা করা হচ্ছে। বিষয়টি হাস্যকর। দুর্নীতির জন্য চেয়ারম্যান, কাজের সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকরা সকলেই দায়ী। তাঁদের অভিযোগ, ইতিমধ্যে মালবাজার-সহ বিভিন্ন জায়গায় ৪৫ কোটি টাকা খরচে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসাচ্ছে এসজেডিএ। শহরে ৯ কোটি টাকা দিয়ে উন্নত মানের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসিয়েছে তারা। জলপাইগুড়িতে করলা নদী সংস্কারে ২৬ কোটি টাকার হিয়ুমপাইপ কেনা হয়েছে। মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানে পাম্প মেশিন কেনা, ড্রাই পোর্টের জন্য ‘ক্রেন’ কেনা-সহ ১২০ কোটি টাকার কাজে ব্যাপক হারে দুর্নীতি হয়েছে। |