নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
ভরসন্ধ্যায় জমজমাট রাস্তায় হাসপাতালের মহিলা অফিসারের শ্লীলতাহানিতে অভিযুক্ত যুবককে হাসপাতালে মেডিক্যাল পরীক্ষা করাতে নিয়ে গিয়ে সোমবার জনরোষের মুখে পড়েছিল পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে শিলিগুড়ি আদালতের ঢোকার আগে হাসপাতালে ওই অভিযুক্তকে মারধরের চেষ্টা হয়। পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে কিল-চড় মারার চেষ্টা করে জনতা। কিন্তু, পুলিশের বাধায় জনতা পিছু হটে। তারই মধ্যে জনতার একাংশ ওই যুবকের শরীরে থুতু ছিটিয়ে দেয়। পুলিশ কোনমতে অভিযুক্তকে ডাক্তারি পরীক্ষা করিয়ে আদালত কক্ষে নিয়ে যায়। পরে আদালতে তাঁর জামিনের আর্জি মঞ্জুর হয়। আদালত সূত্রের খবর, জামিনদার না থাকায় সে জেল থেকে বেরোতে পারেনি। এই ঘটনার পরে গোটা শহরেই পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। শহরের চম্পাসারি থেকে মহাবীরস্থান, আস্রমপাড়া থেকে মিলনপল্লি, দেশবন্ধুপাড়া থেকে শান্তিনগর সর্বত্রই ক্ষোভ বাড়ছে। অনেকেরই অভিযোগ, শিলিগুড়িতে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার কারণে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে একদল যুবক। প্রাতর্ভ্রমণকারী থেকে সন্ধ্যায় কর্মক্ষেত্র থেকে ফেরার পথে মহিলাদের নিগ্রহের শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা। |
শিলিগুড়ি |
কোথায় নিরাপদ মেয়েরা |
নানা ভয় মহিলা মহলে |
হলদিবাড়ির শিমুলবাড়ি থেকে প্রতিদিন শিলিগুড়িতে সবজি নিয়ে আসি।
হলদিবাড়ি স্টেশন থেকে আমাদের বাড়ি ২ কিলোমিটার ভিতরে। রাতে যখন বাড়ি
ফিরি ভয় করে। পরিচিত লোক না
থাকলে স্টেশনে অপেক্ষা করি।
জয়মালা বিশ্বাস, সবজি বিক্রেতা |
প্রতিদিনই খবরের কাগজে নারীদের উপরে অত্যচারের খবর পাচ্ছি। শিলিগুড়িতেও এই ঘটনা ঘটায় আতঙ্ক হচ্ছে। এই অবস্থা হলে সাধারণ মহিলারা ঘর থেকে বেরোবে কি করে। পুলিশ কি করছে বুঝতে পারছি না!
বীথিকা সরকার, প্রতিবন্ধী মহিলা
|
|
|
বাড়ি থেকে দূরে হস্টেলে থেকে পড়াশোনা
করি। কলেজের বাসেই আমরা যাতায়াত
করি।
তার পরেও বাড়ির লোক নানা
চিন্তা করে।
সবসময় আমি ভাল আছি
কি না তা নিয়ে
ভাবতে থাকে। এই
অবস্থার পরিবর্তন
হওয়া দরকার। যাতে
অভিভাবকরা আস্থা ফিরে পান।
অন্তরা রায়, ছাত্রী |
শিলিগুড়ি-শিবমন্দির যাতায়াত করতে হয়। রাতে সিটি অটোতে করে ফিরি। সে সময় মদ্যপদের দাপট দেখা যায়। অটোতে তারা বাজে আচরণ করে। পুলিশকে দেখা যায় না। একটা আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। পুলিশের নজরদারি আরও বাড়ানো প্রয়োজন।
তাপসী পাল, আইনজীবী |
|
|
বাসে, অটোতে করে প্রতিদিন শিলিগুড়ি শহর থেকে শিবমন্দির যাতায়াত করতে হয়। সন্ধ্যায় বাস থেকে নেমে হেটে হেটে বাড়ি ফিরি। এখন যা ঘটছে তাতে পুলিশের নজরদারি না বাড়ানো হলে মহিলারা ঘরের বাইরে বেরোবে কোন ভরসায়?
চিরশ্রী মজুমদার, সরকারি কর্মচারি |
চার দিকে এই অবস্থা শুনে অস্বস্তি হয়। এমনটা আশা করিনি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এক জন মহিলা, মহিলার উপরে অত্যাচার মেনে নেওয়া যায় না। মুখ্যমন্ত্রীকে কড়া হতে হবে। যাতে পুলিশ ঠিক নজরদারি করে।
ঋতুপর্ণা চৌধুরী, ছাত্রী |
|
|
লোকলজ্জায় অনেকেই পুলিশের কাছে যাচ্ছেন না বলে স্বীকার করেছেন কাউন্সিলরদের অনেকেই। তা নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে সিপিএমের বিভিন্ন সংগঠন। হাসপাতালেও বিক্ষোভ দেখান স্বাস্থ্যকর্মীরা। ওই ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক বলে আখ্যা দিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। এই ধরণের ঘটনা যাতে ফের না ঘটে সে জন্য তিনি পুলিশকে নজর রাখার নির্দেশ দেন। মন্ত্রী বলেন, “এই ধরণের ঘটনা সমাজবিরোধীরা করে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সে ব্যপারে পুলিশের কর্তাদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। ওই স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গেও আমরা কথা হয়েছে। শিলিগুড়িতে এখন পুলিশে অনেক সজাগ রয়েছে। মহিলাদের ভয়ের কিছু নেই।” সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা প্রাক্তন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “ওই ঘটনায় শহরের মহিলারা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। বাড়ির বাইরে বার হতে মেয়ে, বউদের দু’ বার ভাবতে হচ্ছে। গোটারাজ্যের পরিস্থিতিই এক। ধর্ষণ শ্লীলতাহানীতেই এ রাজ্য এগিয়ে চলেছে। পুলিশ প্রশাসন যে পুরোপুরি ব্যর্থ তা স্পষ্ট। অথচ এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে রাজ্যে ক্ষমতাসীন দলের নেতামন্ত্রীরা বিষয়গুলি চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।” ঘটনায় শঙ্কিত শহরের কংগ্রেস, সিপিএম থেকে এমনকী, তৃণমূল কাউন্সিলরও। কংগ্রেস কাউন্সিলর গৌরী দত্ত বলেন, “প্রশাসনের কর্তারা কী করছেন, বুঝতে পারছি না। মহিলারা কি বাড়ি থেকে বেরোতে পারবে না?” তৃণমূলের কাউন্সিলর পূরবী সেনগুপ্ত জানান, রাজ্য জুড়ে এমন ঘটনা কেন বাড়চে সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। তাঁর মতে, “রাজ্য জুড়ে এ ধরনের ঘটনা বন্ধ হওয়া দরকার। কে বা কারা করাচ্ছে সেটা সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার। হঠাৎ করে এ ধরনের ঘটনা বেড়ে গিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের উসকানি রয়েছে কি না দেখা দরকার।” এ দিন অভিযুক্ত পঙ্কজ কুণ্ডুকে বেলা ১টা নাগাদ ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য শিলিগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের কর্মী, চিকিৎসক, নার্সদের একাংশ তাকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখান। সেখানে থাকা রোগীর পরিবারের লোকজনও বিক্ষোভে সামিল হন। অভিযুক্তকে কিল, চড় মারা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হাসপাতালের কর্মী সংগঠনের নেতা প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী বলেন, “আমরা অভিযুক্তের কঠোর শাস্তির দাবি করছি।” এ দিন ঘটনার প্রতিবাদে এসএফআই, ডিওয়াইএফআই এবং মহিলা সমিতির তরফে বিধান রোডে পথসভা করা হয়। পুর এলাকার ৬ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা কংগ্রেস কর্মীদের তরফে রাতে মৌন মিছিল বার করা হয় ঘটনা। প্রগ্রেসিভ ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য রাধেশ্যাম মাহাতো বলেন, “প্রশাসনকে কড়া ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিতে হবে।” |