আলোয় ফেরানো হল দলের বর্ষীয়ান শ্রমিক নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে।
প্রায় দেড় মাস আগে দলেরই এক কর্মীর হাতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে শোভনদেববাবুকে নিগৃহীত হতে হয়েছিল, হলদিয়ায় মঙ্গলবার ‘বেঙ্গল লিডস’-এর অনুষ্ঠানে শিল্পপতিদের কাছে তাঁকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচয় করালেন ‘আমাদের দায়িত্বশীল ট্রেড ইউনিয়ন নেতা’ বলে। শিল্পপতি, ব্যবসায়ীরাই নন, হলদিয়ায় দলের প্রথম সারির নেতৃত্বের সামনে শোভনদেববাবুকে দর্শকাসন থেকে মঞ্চে ডেকে প্রথম সারিতে বসতে বলেন মমতা। প্রত্যাশিত ভাবেই খুশি শোভনদেব। দেড় মাস আগে তাঁকে নিগ্রহের পরে দলের পক্ষ থেকে নীরবতায় যে শোভনদেববাবু গুমরে ছিলেন, এ দিন তিনিই বলেন, “যা হয়েছে ভালই হয়েছে। সম্মান পেয়েছি। মমতা আমাকে সংবর্ধনাও দিয়েছে। আমি খুশি!”
এখানেই শেষ নয়। অনুষ্ঠান শেষে দলের দুই সাংসদ সৌগত রায় ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বসে শোভনদেববাবু কথা বলছিলেন। সেই সময়ে শোভনদেববাবুর পাশে একই চেয়ারে এসে বসেন মুখ্যমন্ত্রী! কিছু ক্ষণের জন্য চার জনে আলাপচারিতায় মেতে ওঠেন। যে শোভনদেবকে নিয়ে তৃণমূলে কিছু দিন আগে পর্যন্ত অস্বস্তি ছিল, তাঁকে ঘিরেই এ দিনের সৌহার্দ্যের ছবি চোখ টেনেছে তৃণমূল শিবিরের।
তৃণমূলের প্রথম বিধায়ক শোভনদেববাবুকে দলের শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে নকশাল নেত্রী দোলা সেনকে বসানো নিয়ে সংগঠনে গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব মাথা চাড়া দিয়েছিল। সম্প্রতি শোভনদেববাবুকে নিগ্রহের ঘটনার পরে সেই গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বই প্রকাশ্যে এসেছিল। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন দিল্লিতে যে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন তাতেও শোভনদেববাবুর নিগ্রহের ঘটনার উল্লেখ করেছেন।
এমতাবস্থায় এ দিন দোলাকে কার্যত পিছনের সারিতে বসিয়ে শোভনদেববাবুকে সামনের সারিতে এনে দলনেত্রী সম্মান জানানোয় দলের মধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে। দলের এক প্রবীণ নেতার কথায়, “আসলে দলনেত্রী সমালোচকদের কাছে একটা বার্তা দিতে চেয়েছেন- আমাদের সংগঠনে সব ঠিকই আছে। আমাদের মধ্যে বিবাদও হয়। আবার যোগ্য, প্রবীণ নেতাদের সম্মানও দেওয়া হয়।” পাশাপাশি দলের এক সাংসদ মনে করেন, “শিল্পপতিদের সামনে মমতা বুঝিয়ে দিলেন এখানে দায়িত্বশীল ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে। এতএব শিল্পপতি, ব্যবসায়ীরা এখানে নিরুপদ্রবে ব্যবসা করতে পারেন।” তবে দলনেত্রী প্রলেপ দিলেও শোভনদেব-ক্ষত কিন্তু শুকোয়নি। কারণ শোভনদেব-অনুগামী এক শ্রমিক নেতা বলেছেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে চত্বরে যে নেতাটি শোভনদার গায়ে হাত তুলেছিলেন, এখনও দল কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।” ফলে ক্ষত কতটা শুকলো তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। |