পরিবর্তনপন্থী বিশিষ্ট জনেদের তালিকা থেকে মুছে যাচ্ছে আরও একটি নাম!
রাজ্য সরকারকে ‘বিবেকহীন ও সংবেদনশীলতাহীন’ বলে আখ্যা দিয়ে কলেজ সার্ভিস কমিশন এবং রাজ্য সরকারের নজরুল অ্যাকাডেমির সদস্য পদে ইস্তফা দিলেন প্রবীণ শিক্ষিকা মীরাতুন নাহার। তাঁর উপলব্ধি, “এই সরকার নিপীড়িত মানুষদের বঞ্চনা করছে। এদের সঙ্গে থাকা যায় না।”
গোড়ায় পরিবর্তনের পক্ষে সরব হলেও বিগত দেড় বছরে সরকারের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে, এমন বিশিষ্ট জনেদের তালিকায় রয়েছেন মহাশ্বেতা দেবী, সুনন্দ সান্যাল, তরুণ সান্যাল, সমীর আইচ প্রমুখ। মঙ্গলবার মীরাতুন নাহারের নামও সেই তালিকায় সংযোজিত হল। ইতিমধ্যেই তিনি পদত্যাগের কথা জানিয়ে রাজ্য সরকারের শিক্ষা দফতরের যুগ্ম সচিব এবং সংস্কৃতি অধিকর্তাকে চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছেন।
প্রবীণ এই শিক্ষিকা এ দিন জানান, পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)-এর তৈরি করে দেওয়া চতুর্থ শ্রেণির পদের সফল পরীক্ষার্থীদের একাংশের প্রতি সরকারি বঞ্চনার প্রতিবাদে তিনি পদত্যাগ করেছেন। পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, যে ভাবে কাজ চলছে তাতে নজরুল অ্যাকাডেমির মাধ্যমে কোনও মতেই নজরুল ইসলামের আদর্শকে বাস্তবায়িত করা সম্ভব হবে না। রাজ্যের বর্তমান সরকার শিক্ষাব্যবস্থাকে নষ্ট করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মীরাতুন নাহার।
এ দিন মীরাতুন জানান, পদত্যাগপত্রে তিনি লিখেছেন, প্রায় দেড় বছর আগে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগের জন্য পিএসসি প্যানেল তৈরি করে। সেই প্যানেলের প্রথম এবং শেষের দিক থেকে কিছু প্রার্থীকে বেছে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। প্যানেলের মাঝের দিকে নাম রয়েছে, এমন প্রার্থীরা নিয়োগপত্র পাননি। ওই প্রার্থীরা বারবার বিষয়টি জানানো সত্ত্বেও প্রতিকার হয়নি। এঁদের বেশির ভাগই স্নাতক বা তারও বেশি শিক্ষিত। তাঁরা দাবি আদায়ের জন্য অনশন করেছেন, রাস্তায় দাঁড়িয়ে জুতো পালিশ করেছেন। তার পরেও রাজ্য সরকার তাঁদের দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল হয়নি বলে অভিযোগ।
কিন্তু কলেজ সার্ভিস কমিশনের সঙ্গে পিএসসি-র কোনও প্রত্যক্ষ যোগ নেই। তা হলে সেখান থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন কেন?
মীরাতুন নাহারের কথায়, “নিপীড়িত মানুষের প্রতি সরকারের এই বঞ্চনার প্রতিবাদে আমি দুই সংস্থা থেকেই সরে যাচ্ছি। কারণ দু’টি সংস্থাই রাজ্য সরকারের।” চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের যে প্যানেল নিয়ে তিনি অভিযোগ তুলেছেন, সেই প্যানেলটি তৈরি হয়েছিল মূলত স্বাস্থ্য দফতরে নিয়োগের জন্য। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী এ দিন বলেন, “এটা বিচারাধীন বিষয়। যত ক্ষণ তা না মিটছে, তত ক্ষণ এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করা যাবে না।”
নজরুল অ্যাকাডেমি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁরা এখনও মীরাতুন নাহারের ইস্তফাপত্র হাতে পাননি। অ্যাকাডেমির সভাপতি জয় গোস্বামী বলেন, “অ্যাকাডেমির শেষ বৈঠকেও উনি আমাদের সম্মানিত সদস্যা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। ওঁর অনেক পরামর্শ আমাদের কাজে লেগেছে।” কিন্তু উনি নিজেই তো অ্যাকাডেমির কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন?
জয় গোস্বামীর জবাব, “মাত্র এক বছরের কিছু বেশি সময় নজরুল অ্যাকাডেমি গঠিত হয়েছে। কাজ করতে সময় লাগবে। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই জায়গা দিয়েছে। সেখানে নজরুলতীর্থ গড়ার কাজ শুরু হচ্ছে।” |