টাকার অভাব ছিল না। তা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গ পারল না। অথচ করে দেখাল পড়শি ঝাড়খণ্ড!
পুলিশি ব্যবস্থা আধুনিকীকরণের ‘পাইলট প্রজেক্ট’ হিসেবে ‘ক্রাইম অ্যান্ড ক্রিমিন্যাল ট্র্যাকিং নেটওয়ার্ক অ্যান্ড সিস্টেমস’ (সিসিটিএনএস) চালু হওয়ার কথা ছিল পুরুলিয়া জেলা, বিধাননগর কমিশনারেট এবং কলকাতা পুলিশের উল্টোডাঙা ও মানিকতলা থানায়। ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সেখানে অনলাইন ব্যবস্থাটি বলবৎ করার সময়সীমা ধার্য করেছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। রাজ্য তা মানতে পারেনি।
ফলে সিসিটিএনএস এখনও অধরা পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু প্রায় একই সময়ে একই উদ্যোগের সূচনা হয়েছিল যে রাজ্যে, সেই ঝাড়খণ্ড ইতিমধ্যে তা চালু করে ফেলেছে। গত ১১ জানুয়ারি রাঁচির জগন্নাথপুর থানায় সিসিটিএনএসের উদ্বোধন হয়েছে। রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি নিয়ে ইতিমধ্যে বিহারকে ‘দরাজ শংসাপত্র’ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র সম্প্রতি ভরা এজলাসে জানিয়েছেন, বিহারের রাস্তাঘাট পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় অনেক ভাল। এ বার পুলিশ আধুনিকীকরণের দৌড়েও আর এক পড়শির এগিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে এ রাজ্যের সার্বিক ভাবমূর্তির পক্ষে আর একটি নেতিবাচক সূচক হিসেবে দেখছে প্রশাসনের একাংশ।
সিসিটিএনএস আসলে কী? এক পুলিশ-কর্তার ব্যাখ্যা: এই ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষ সাইবার কাফে বা নিজের কম্পিউটারে বসে দিন-রাতের যে কোনও সময়ে পুলিশে অভিযোগ নথিভুক্ত করতে পারবেন, সশরীরে থানায় হাজির হতে হবে না। অভিযোগ গ্রহণে পুলিশি অনীহার যে অভিযোগ হামেশাই ওঠে, সিসিটিএনএসের দৌলতে তারও কিছুটা সুরাহা হবে বলে কর্তারা আশাবাদী। তাঁদের মতে, এটি চালু হলে থানার পুলিশকে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে। উপরন্তু অপরাধ দমনে পুলিশেরও সুবিধে হবে বিস্তর। “সিসিটিএনএসের সাহায্যে পথচলতি মানুষের কাছ থেকে দুর্ঘটনা বা শ্লীলতাহানির মতো গুরুত্বপূর্ণ খবর পুলিশ নিমেষে পেতে পারবে। পাশাপাশি পুলিশ নিজেদের মধ্যে নানা তথ্য আদান-প্রদান করতে পারবে। যে কোনও থানায় মাউস ক্লিকেই কম্পিউটারের পর্দায় ভেসে উঠবে গোটা রাজ্যের অপরাধ ও অপরাধী সংক্রান্ত হাজারো তথ্য।” মন্তব্য রাজ্য পুলিশের এক কর্তার। শুধু তা-ই নয়। এখন ভিন্ রাজ্যের অপরাধী এখানে অপরাধ করে গেলে তার খুঁটিনাটি জানতে হা-পিত্যেশ করে বসে থাকতে হয়। নতুন ব্যবস্থায় তা নিমেষে হাতের মুঠোয় আসবে বলে কর্তাটির দাবি।
কিন্তু এ রাজ্যে সেই সুযোগ কবে পুরোদস্তুর মিলবে, এ নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনেই ঘোরতর সংশয়। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা জানাচ্ছেন, পুরুলিয়ার দু’-একটা থানাকে এখনও কম্পিউটার মারফত সদর দফতরের সঙ্গে যুক্ত করা যায়নি। আবার বিধাননগর কমিশনারেট সম্পূর্ণ ভাবে নেটওয়ার্কের আওতায় এলেও মহড়ায় ধরা পড়েছে, অনলাইনে দায়ের করা অভিযোগ কিছু থানায় পৌঁছলেও তা স্থায়ী হচ্ছে না। ত্রুটিগুলো এখন পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এ হেন বিভ্রাট কেন?
মহাকরণ সূত্রের খবর: এই পুলিশি অনলাইন চালু রাখতে সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টরে যে ‘স্টেট ডেটা সেন্টার’ তৈরি হয়েছে, বিপত্তি সেখানেই। কিছু অভিযোগ কম্পিউটারে নথিভুক্ত হলেও কারিগরি সমস্যার দরুণ পরবর্তী কালে সেগুলোর খোঁজ মিলছে না। এমনকী, কোনও দুষ্কৃতীর ছবি পাঠানো হলে তা এতটাই আবছা যে, চেনা দায়। এ সব কারণে সিসিটিএনএস পুরোদস্তুর চালু করতে আরও কিছু দিন লাগবে বলে স্বরাষ্ট্র দফতরকে জানিয়ে দিয়েছেন রাজ্যের পুলিশ-কর্তারা।
সমস্যার অবশ্য এখানেই শেষ নয়। কী রকম?
স্বরাষ্ট্র-সূত্রের খবর: সিসিটিএনএসে কলকাতার থানাগুলো লালবাজারের সঙ্গে অনলাইনে জুড়বে। মহাকরণের সঙ্গেও রাজ্যের সব থানার কম্পিউটার-যোগাযোগ থাকবে। তাই দুই লালবাড়িতে সার্ভার বসাতে হবে। যে জন্য দুই বাড়িতে বিদ্যুৎ পরিবাহী অসংখ্য তারের বিন্যাস (ওয়্যারিং) ঢেলে সাজা জরুরি। কিন্তু তাতেই আপত্তি তুলেছে পূর্ত দফতর। পূর্ত-কর্তাদের দাবি, পুলিশের প্রস্তাব অনুযায়ী লালবাজার-মহাকরণে ওয়্যারিং পাল্টালে বর্তমান পরিষেবায় তার প্রভাব পড়বে। তার উপরে মহাকরণ ‘অতীব সংবেদনশীল এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত থাকার কারণেও সেখানে ওই সার্ভার বসানোর পক্ষপাতী নয় পূর্ত দফতর। তা হলে উপায় কী?
বিকল্প হিসেবে পুলিশকে পূর্তের পরামর্শ: বেতার ব্যবস্থায় মহাকরণকে জোড়া হোক রাজ্যের সব থানার সঙ্গে। পুলিশ-কর্তারা জানিয়েছেন, আপাতত সেই মতো এগোনো হচ্ছে। |