পুণ্যের স্নান সারা। এ বার ঘরে ফেরার তাড়া। কাকভোর থেকেই ভিড় বাসে ও ফেরিতে। তবে সবার এমন ভাগ্য নয়। পরিজনদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মঙ্গলবার সাগরমেলাতেই কাটাতে বাধ্য হলেন বারাণসীর চিন্তাওয়াড়ি পান্ডে, পটনার ইলাইচি দেবীরা।
মেলায় হারিয়ে যাওয়া এমন অনেককে আগলে রেখেছে বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। পরিজনদের হারিয়ে ফেলা মানুষগুলির পাশে দাঁড়িয়েছেন উত্তম শ’, সুমন গায়েন, দেবেন্দ্রনাথ পাত্র-রা। এমনই এক দলছুট রামনারায়ণ চৌবে ভীষণ রেগে গিয়েছেন ছেলে শ্রীরামের উপরে। সোমবার রাতে মেলায় স্ত্রী, ছেলে-পুত্রবধূ ও নাতিকে নিয়ে ঘুরছিলেন। হঠাৎই ছন্দপতন। ভিড়ে ছেলে মনুকে নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন শ্রীরাম। তার পর থেকে স্ত্রী অভিরাজদেবী, পুত্রবধূ দময়ন্তীকে নিয়ে ছেলে-নাতির খোঁজ করছেন বৃদ্ধ।
তুলনায় ভাগ্য ভাল দিল্লির কলাবতী দেবীর। সোমবার ভোরে স্নানের পরে দলছুট হয়ে যান। তাঁর বোঁচকা থেকে একটি নম্বর পেয়ে কলাবতীর জামাইকে ফোন করেন দলছুটদের সাহায্যে এগিয়ে আসা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের এক সদস্য। |
মেলা শেষে আরতি। ছবি: সুমন বল্লভ। |
জানা যায়, কলাবতীর হারিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে দিল্লি থেকে রওনা দিয়েছেন তাঁর ছেলে সুরিন্দর যাদব। মেলায় দিশা হারানো সাত হাজারেরও বেশি পুণ্যার্থীর মধ্যে এখনও পর্যন্ত এমন ভাগ্যবানের সংখ্যা মাত্র চোদ্দোশো। জানালেন ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সম্পাদক মনোজ চাঁদগোঠিয়া।
মেলায় আসা মানুষের মন খারাপের আরও কারণ রয়েছে। গত কয়েক দিন ভ্যানরিকশায় পুজোর উপচার বিক্রি করে বেড়ানো সাগর এলাকার বাসিন্দা সুভাষিনী দেবী যেমন। বললেন, “এই কয়েকটা দিন কিছু বাড়তি রোজগার হল। এখন আবার যে কে সেই।”
মেলা শেষ হতে না হতেই দেখা গেল, কারা যেন জলের পাইপ চুরি নিয়েছে। চুরি যাচ্ছে অন্যান্য সামগ্রীও। নাসিকের খণ্ডরাও জয়ভাবের যেমন অভিযোগ, সোমবার রাতে মেলার মাঠ থেকে তাঁর সব চুরি হয়ে গিয়েছে। কী ভাবে বাড়ি ফিরবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না ওই যুবক। পুলিশ-প্রশাসনের নামে গাল পাড়েন তিনি। তবে মেলার মাঠেও তারস্বরে মাইকে ছড়িয়ে পড়ছে প্রশাসনের সতর্কবার্তা“যারা এমন কাজ করছেন, তাদের কঠিন সাজা হবে!” তবে এ সব ঘোষণা ছাপিয়ে বারবারই ভেসে আসছে, ‘বিন্দুকি মা কিরণকুমারী আপ যাহাঁ ভি হো...’। |