|
|
|
|
নয়াগ্রামের খুনে রাজনীতির রং, নিহতের বাড়িতে মুকুল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
গ্রাম্য-বিবাদের জেরে খুনের ঘটনায় রাজনীতির রং লাগাল তৃণমূল। সোমবার সন্ধ্যায় পশ্চিম মেদিনীপুরের নয়াগ্রাম থানার বড়খাঁকড়ি অঞ্চলের দরখুলি গ্রামে বিবাদের জেরে খুন হন সূর্য পাত্র নামে বছর পঞ্চান্নর এক প্রৌঢ়। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পাওনা-গণ্ডা সংক্রান্ত গ্রাম্য বিবাদে জড়িয়ে পড়েন সূর্যবাবুর ছেলে। আক্রান্ত ছেলেকে বাঁচাতে এসে বিবাদের জেরে খুন হন সূর্যবাবু। সোমবার রাতে তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ অবশ্য দাবি করেছিলেন, “সূর্যবাবু আমাদের দলীয় কর্মী। এলাকায় অশান্তি ছড়ানোর জন্য এটা সিপিএম-মাওবাদী জোটের চক্রান্ত।” মঙ্গলবার দুপুরে নিহতকে ‘শেষ শ্রদ্ধা’ জানাতে প্রথমে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে পৌঁছন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। কিন্তু তার আগেই ময়না-তদন্ত হওয়া সূর্যবাবুর মরদেহ নিয়ে পরিজনেরা চলে গিয়েছেন। সঙ্গে-সঙ্গে নয়াগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেন মুকুলবাবু। বিকেলে দরখুলি গ্রামে গিয়ে নিহতের স্ত্রী-র হাতে দলের তরফে আর্থিক সাহায্য তুলে দেন মুকুলবাবু। ঘটনাটি সিপিএমের ষড়যন্ত্র বলেও মন্তব্য করেন তিনি। নয়াগ্রামের খড়িকামাথানি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন সূর্যবাবুর ছেলে মিঠুন সংবাদমাধ্যমকে এ দিন বলেন, “সোমবার স্থানীয় তপোবনের মেলা থেকে ফিরে পরিচিত একজনের বাড়িতে বসে মুড়ি খাচ্ছিলাম। ওই সময় একটা গোলমাল থামাতে গিয়ে আমি আক্রান্ত হই। স্থানীয় কিছু মদ্যপ আমাকে মারধর করে। আমার ফোন পেয়ে বাবা এসেছিলেন। বাবা আমাকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই ওরা লাঠি দিয়ে আমার মাথা ফাটিয়ে দেয়। বাবার মুখে টাঙির কোপ মারে।” পরে অবশ্য মিঠুন যোগ করেন, “বাবা তৃণমূল করতেন। ঘটনার পিছনে সিপিএমের হাত থাকতেও পারে।” |
|
শেষ শ্রদ্ধা। —নিজস্ব চিত্র। |
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দরখুলি গ্রামের লেপা টুডুর অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার রাতেই গ্রেফতার করা হয় মদন ভক্তা ও তাঁর ছেলে মিঠুন ভক্তাকে। বুধবার তাঁদের ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ হয়। কিন্তু লেপাবাবুর দায়ের করা এফআইআর-এ কোথাও কোনও রাজনৈতিক হামলার কথা বলা হয়নি। এমনকী নিহত সূর্যবাবু এবং খুনের অভিযুক্ত মদন ভক্তা ও মিঠুন ভক্তার কোনও রাজনৈতিক পরিচয়ের উল্লেখও নেই। এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে মুকুলবাবুর জবাব, “সূর্যবাবু আমাদের দীর্ঘ দিনের কর্মী। স্থানীয় নেতৃত্ব ও বিধায়কের কাছ থেকে জেনেছি সিপিএমের ষড়যন্ত্রেই তিনি খুন হয়েছেন। নেত্রীর নির্দেশে জানাতে এসেছি সূর্যবাবুর পরিবারের পাশে দল থাকবে।” সূর্যবাবুর পরিবারের সদস্যদের কর্মসংস্থানের জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ করার আশ্বাসও দেন মুকুলবাবু।
সোমবার রাতে ঝাড়গ্রামের এসপি ভারতী ঘোষ জানিয়েছিলেন, পুরনো গ্রাম্য বিবাদের জেরে ঘটনাটি ঘটেছে। মঙ্গলবার বিকেলে মুকুলবাবু-সহ তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব যখন দরখুলি পৌঁছন তখন ভারতীদেবীও ওই গ্রামেই ছিলেন। এ দিন অবশ্য ভারতীদেবী সংবাদমাধ্যমের ফোন ধরেননি। সিপিএমের নয়াগ্রাম জোনাল কমিটির সম্পাদক হিমাংশু ত্রিপাঠী বলেন, “গ্রাম্য বিবাদের জেরে ঘটনাটি ঘটেছে। এর সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। এলাকায় অশান্তি ও বিদ্বেষ জিইয়ে রাখার জন্য রাজনৈতিক রং লাগাচ্ছে তৃণমূল।” |
|
|
|
|
|