|
|
|
|
কৃষি মেলায় কম কৃষকদের হাজিরাই |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
গ্রামের এক তৃণমূল নেতার নির্দেশে মেলায় এসেছেন। তখন বেলা বারোটা। মূলমঞ্চের সামনে কতগুলো চেয়ার বিছানো হচ্ছে। স্টলগুলো সব ফাঁকা। সংশ্লিষ্ট দফতরের এক-দু’জন কর্মী বসে আছেন। উদ্যোক্তারা ঘোষণা করছেন, ‘আর একটু পরেই মেলার উদ্বোধন।’ পরিস্থিতি দেখে মেদিনীপুর সদর ব্লকের ওই চাষি বলছিলেন, “মেলায় এত কম লোক? আমাদের গ্রামে মেলা হলেও এর থেকে বেশি লোক হত।” পাশ থেকে আর এক চাষি বললেন, “এতগুলো স্টল। কিন্তু লোক নেই। কৃষি মেলা গ্রামে হলেই ভাল হত। আরও লোক আসতে পারত।”
শুধু মেদিনীপুর নয়, মঙ্গলবার থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের বাকি তিনটি মহকুমাতেই শুরু হয়েছে কৃষি মেলা। শেষ হবে আজ, বুধবার। প্রতি মহকুমার জন্য বরাদ্দ ৪ লক্ষ টাকা। কিন্তু, যাঁদের জন্য এই মেলা, তাঁদের উপস্থিতিই কম। যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের একটা বড় অংশ প্রশিক্ষণ শিবির কিংবা আলোচনাসভায় যোগ দিতে। |
|
কোনও স্টলেই ভিড় নেই। মেদিনীপুরের কৃষিমেলায়।—নিজস্ব চিত্র। |
তাও গ্রামের কোনও না কোনও নেতার নির্দেশ কিংবা অনুরোধে। মেদিনীপুর সদর ব্লকের কনকাবতী থেকে যেমন তৃণমূলের এক কৃষক নেতা কয়েকজন লোককে নিয়ে মেলায় এসেছিলেন। বিকেলে মেদিনীপুরে মেলার মাঠে এসেছিলেন কৃষি দফতরের প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না। তিনি বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। পরে বলেন, “গত তিন দশকে গ্রামীণ অর্থনীতি ভেঙে পড়েছিল। এখন তাকে চাঙ্গা করার চেষ্টা চলছে। যে জন্য কৃষি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন, প্রাণীসম্পদ বিকাশ সহ বিভিন্ন দফতর একযোগে কাজ করছে।”
বিরোধীরা অবশ্য পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে কৃষি মেলার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সিপিএম পরিচালিত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য যেমন বলেন, “লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে সরকার শুধু প্রচারই করছে। কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না।” |
|
কৃষি মেলায় কৃষি প্রতিমন্ত্রী |
তাঁর কথায়, “কৃষকেরা ধানের দাম পাচ্ছেন না। অভাবী বিক্রি চলছে। মেলা না- করে যদি সরকার প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে ধান কেনার শিবির করত, তাহলে কৃষকদের ভাল হত।” জবাবে মেদিনীপুরের বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতি বলেন, “উন্নয়ন দেখে ওদের ঈর্ষা হচ্ছে। তাই সরকারের বিরুদ্ধে এই কুৎসা-অপপ্রচার। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে রাজ্য জুড়ে উন্নয়নের কাজ চলছে। আসলে মানুষ সঙ্গে নেই বুঝতে পেরেই অপপ্রচার চালাচ্ছে সিপিএম।” তাঁর কথায়, “এমন মেলার ফলে কৃষকেরা উপকৃত হবেন। তাঁরা চাষের নানা বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন।
মেদিনীপুরের বিধায়কই দু’টি কৃষি মেলার উদ্বোধন করেছেন। মেদিনীপুর আর খড়্গপুর। মঙ্গলবার সকালে শুরুতে খড়্গপুর মহকুমা কৃষি মেলার উদ্বোধন হয়। রেলশহরের ট্রাফিক মাঠে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন খড়্গপুরের মহকুমাশাসক আর বিমলা। দুপুরে মেদিনীপুর মহকুমা কৃষি মেলার উদ্বোধন হয়। উপস্থিত ছিলেন মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক অমিতাভ দত্ত। সরকারি নির্দেশ মেনেই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। |
|
ঝাড়গ্রামে কৃষি মেলার সূচনা |
কৃষি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরন এবং উদ্যান পালন দফতরের যৌথ উদ্যোগে এই মেলা। মেলার জন্য ঠিক কী কী করতে হবে, তাও বলা হয়েছিল সরকারি নির্দেশে। যেমন, মেলা চত্বরে সবমিলিয়ে ১২টি স্টল থাকবে। এর মধ্যে কৃষি দফতরের একটি স্টল ৮০০ বর্গফুটের, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং উদ্যানপালন দফতরের একটি স্টল ৭০০ বর্গফুটের। মৎস্য, কৃষি বিপণন, স্বসহায়ক দল-সহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি দফতরের জন্য পাঁচটি স্টল। সব মিলিয়ে এক হাজার বর্গফুটের। মূল অনুষ্ঠান মঞ্চ হবে ৫০০ বর্গফুট জায়গার উপর। সমস্ত স্টল এবং মঞ্চ মিলিয়ে জায়গা হবে ৩ হাজার ৫০০ বর্গফুট। সেই মতোই অয়োজন হয়েছে। বলা হয়েছিল, মেলা চত্বরে ৬ হাজার ৫০০ বর্গফুট ফাঁকা জায়গা রাখতে হবে। যাতে লোকজন যাতায়াত করতে পারেন, স্টলগুলো ঘুরে দেখতে পারেন। সেই মতো ফাঁকা জায়গাও রাখা হয়। তবে দিনভর ওই জায়গার একটা বড় অংশ ফাঁকা থেকেছে। প্রশাসন অবশ্য জানাচ্ছে, মেলায় কৃষকদের উপস্থিতি ভালই ছিল। মেদিনীপুরের মেলাতেই পাঁচশো কৃষক এসেছেন। এ দিন ঝাড়গ্রামের সেবায়তন বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস প্রাঙ্গণে মেলার উদ্বোধন করেন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা। ছিলেন গোপীবল্লভপুরের বিধায়ক চূড়ামণি মাহাতো, ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক বাসব বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিম মেদিনীপুরের সহ কৃষি অধিকর্তা (তথ্য) দুলাল দাস অধিকারী, ঝাড়গ্রামের সহ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) দীনেশকুমার পাল প্রমুখ। মোট ১১টি স্টল রয়েছে মেলায়। এ ছাড়া রয়েছে প্রতিযোগিতামূলক সব্জি, শস্য ও পুষ্প প্রদর্শনী। মেলায় গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির টিকাকরণ করা হয়। ছিল আলোচনাসভা এবং কৃষক ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে প্রশ্নোত্তর পর্ব। ঘাটালে কৃষি মেলার আয়োজন হয়েছে বরদা চৌকানে বিডিও অফিস সংলগ্ন মাঠে। উদ্বোধন করেন মহকুমাশাসক অংশুমান অধিকারী। ছিলেন ঘাটালের বিডিও দেবব্রত রায়, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ছবি পাখিরা, দিলীপ মাঝি প্রমুখ। প্রতিটি মেলা প্রাঙ্গণেই সন্ধ্যায় পরিবেশিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। |
|
|
|
|
|