|
|
|
|
কাজ এগোয়নি ঘোষিত প্রকল্পের |
নতুন শিলান্যাসে জেলায় মুখ্যমন্ত্রী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, উন্নয়নে জোয়ার এসেছে। দ্রুত গতিতে কর্মকাণ্ড। সেই সূত্রে আরও এক দফা উদ্বোধন ও শিলান্যাস সারতে আজ, বুধবার ফের পশ্চিম মেদিনীপুরে পা রাখতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১১ দিনের মাথায় এই নিয়ে দ্বিতীয় বার।
৫ জানুয়ারি সরকারি উদ্যোগে আয়োজিত বিবেক ছাত্র ও যুব উৎসবে যোগ দিতে মেদিনীপুর শহরে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে দিন কোনও প্রকল্পের উদ্বোধন বা শিলান্যাস হয়নি। যদিও মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন, “এটা পুলিশের অনুষ্ঠান। তাই এদিন শিলান্যাস বা উদ্বোধন করছি না।” তারপরই বেলদা আসার কথা ঘোষণা করেছিলেন। মূলত, বিভিন্ন প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধনের জন্যই বিপুল ব্যয়ে ১১ দিনের মাথায় দ্বিতীয় বার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সফর মুখ্যমন্ত্রীর। এটাও সরকারি অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠান হচ্ছে বেলদায়।
কী করবেন মুখ্যমন্ত্রী? প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলদার মঞ্চ থেকেই বেশ কয়েকটি পানীয় জল প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। উদ্বোধন করবেন স্কুল হস্টেলেরও। শিলান্যাস করবেন কাঁসাই নদীর অ্যানিকেত, ধেড়ুয়া জলপ্রকল্প, ন্যাচরাল ফাইবার মিশনে ‘কমন ন্যাচরাল ফাইবার সেন্টার’ প্রভৃতি প্রকল্পের। কতটা কাজ এগিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত প্রকল্পের? |
|
মুখ্যমন্ত্রী যে জলপ্রকল্পগুলির উদ্বোধন করার কথা, সেই প্রকল্পে ৪১টি পানীয় জল প্রকল্প তৈরির কথা। যার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল ৬০ লক্ষ টাকা। ৪১টি জল প্রকল্পের মধ্যে ১৯টির কাজ শেষ হয়েছে। ১৫টি প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে তা চালু করা যায়নি। দু’টি প্রকল্পের কাজ শেষের পথে। দু’টি প্রকল্পের কাজ চলছে। একটি প্রকল্পে জলস্তর না মেলায় অন্যত্র করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই প্রকল্পের মধ্যে সব থেকে বড় যে দু’টি, যে দু’টির জন্যই ৬০ লক্ষের মধ্যে ৪০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে তার হাল কী? এই দু’টি প্রকল্পের মধ্যে একটি হবে মেদিনীপুর সদর ব্লকের ধেড়ুয়াতে। সবে তার টেন্ডারের কাজ শেষ হয়েছে। অন্যটি বেলপাহাড়ির সুকজোড়াতে। তার কাজ সবে শুরু হয়েছে!
যে হস্টেলের উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী সেই প্রকল্পের হালও সন্তোষজনক নয়। মুখ্যমন্ত্রী ৬৭টি হস্টেল তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন। প্রথম দফায় ১৭টি ও দ্বিতীয় দফায় ৫০টি। প্রথম দফার ৮টির কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলির কাজ চলছে। দ্বিতীয় দফার ৫০টির মধ্যে ৩০টি করবে এইচআরবিসি। একটিরও কাজ শুরু হয়নি। বাকি ২০টি করবে পূর্ত দফতর। সবে টেন্ডার হয়েছে।
এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় একাধিক প্রকল্প ছিল। সেগুলিরও তেমন কোনও অগ্রগতি ঘটেনি বলে অভিযোগ। লালগড়,শালবনি ও নয়াগ্রামে কলেজ তৈরির কথা। লালগড়ে সবে ভিত্তি প্রস্তরের কাজ শুরু হয়েছে। শালবনিতে কাজ কিছুটা এগোলেও নয়াগ্রামে কাজ শুরুই হয়নি। |
|
জোরকদমে চলছে শিলান্যাসের ফলক তৈরির কাজ। মঙ্গলবার বেলদায় রামপ্রসাদ সাউ ও সৌমেশ্বর মণ্ডলের তোলা ছবি। |
নয়াগ্রাম ও শালবনিতে স্টেডিয়াম তৈরির কথা। শালবনিতে স্টেডিয়ামের কাজ শুরু হলেও জমি জটে নয়াগ্রামে কাজ শুরু করা যায়নি। রামগড়ে প্রাথমিক শিক্ষক শিক্ষণ কেন্দ্র তৈরির কাজও সবে শুরু হচ্ছে। শালবনিতে আইটিআই তৈরির কাজ অবশ্য কিছুটা এগিয়েছে। সুবর্ণরেখা নদীতে ভসরাঘাটের কাছে সেতু নির্মাণের কাজ সবে শুরু হয়েছে। আমকোলা সেতু নির্মাণের জন্য পদক্ষেপ শুরু হয়েছে। ব্লকে ব্লকে আইটিআই তৈরির ক্ষেত্রেও কোনও অগ্রসর ঘটেনি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯টি ব্লকে কেবল জমি দেখা হয়েছে। জামবনিতে শালপাতা, সবংয়ে মাদুর ও পিংলাতে হ্যান্ডলুম সেন্টার তৈরির ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপই হয়নি।
অন্য ঘোষিত প্রকল্পের কাজও ততটা এগোয়নি বলেই অভিযোগ। যে ঘটনাকে কটাক্ষ করে সিপিএমের দখলে থাকা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য বলেন, “উন্নয়নের কাজ কী হচ্ছে, তা সকলেই দেখতে পাচ্ছেন। এ ভাবে অর্ধসমাপ্ত, আদৌ কাজ হবে কিনা না ভেবে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে উদ্বোধন ও শিলান্যাস অনুষ্ঠান করে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি খরচে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এ ভাবেই দলীয় প্রচার হচ্ছে। তবে মানুষ বুঝে গিয়েছেন, অনুষ্ঠানই হচ্ছে, কাজ কিছু হচ্ছে না।” তৃণমূল বিধায়ক মৃগেন মাইতির অবশ্য বলেন, “এর সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই। মুখ্যমন্ত্রী সকলের। তিনি জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরিয়েছেন, উন্নয়ন করছেন। জঙ্গলমহলের বাইরেও তিনি উন্নয়নের গতিকে ছড়িয়ে দিতে চান। সে কথা জানাতেই এই অনুষ্ঠান।” |
|
|
|
|
|