নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
রেলের মাঠে ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিলেন তিনি সেটাই তাঁর ‘অপরাধ’। তাই বেধড়ক মার খেতে হল তাঁকে। এতটাই যে, আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই যুবক এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
অভিযোগ, উইকেট দিয়ে ওই যুবককে বেধড়ক মারধর করেন রেলরক্ষী বাহিনীর (আরপিএফ) বাহিনীর এক কনস্টেবল। এখানেই শেষ নয়। অভিযোগ উঠেছে, সকলে যখন হাসপাতালে ওই যুবকের চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত, তখন ওই কনস্টেবল মাঠের পাশেই যুবকটির বাড়িতেও চড়াও হয়ে প্রথমে তাঁর বৃদ্ধা ঠাকুরমাকে মারধর করেন। বাধা দিতে এলে ওই যুবকের তরুণী বোনকেও চুলের মুঠি ধরে রাস্তায় বার করে এনে তাঁর জামা-কাপড় ছিঁড়ে দেন বলে অভিযোগ। রেল কতৃর্পক্ষ জানান, অভিযুক্ত কনস্টেবল মদন গিরি মারধরের অভিযোগ স্বীকার করেছেন। অভিযুক্ত কনস্টেবলকে সাসপেন্ড করে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছে দক্ষিণ-পূর্ব রেল।
মঙ্গলবার বেলা ১২টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে টিকিয়াপাড়া স্টেশনের কাছে, রেল আবাসনের মাঠ এবং সংলগ্ন নোনাপাড়ায়। পুলিশ জানায়, শানু খান (২০) নামে ওই যুবককে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওই কনস্টেবলের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে মারধরের অভিযোগ দায়ের করেছে শানুর পরিবার।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, টিকিয়াপাড়ায় রেলের ওই মাঠে রোজকার মতো এ দিনও অন্য বন্ধুদের সাথে ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিলেন স্থানীয় নোনাপাড়ার বাসিন্দা শানু। |
হাসপাতালের শয্যায় শানু খান। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র |
মাঠে খেলতে আসা সকলেরই বয়স আঠেরো থেকে কুড়ির মধ্যে। অভিযোগ, খেলা চলাকালীন হঠাৎ বড়গেছিয়া আউটপোস্টের কনস্টেবল মদন এসে তাঁদের খেলায় বাধা দেন। তাঁর দাবি ছিল, রোজ মাঠে খেলতে এসে গালিগালাজ করেন ওই যুবকেরা। তাই খেলা বন্ধ থাকবে। মদনবাবুর এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন শানু ও অন্য কয়েক জন যুবক। অভিযোগ, এর পরেই ওই কনস্টেবল ক্ষিপ্ত হয়ে শানুকে প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে কিল, চড়, লাথি, ঘুষি মারতে থাকেন, যতক্ষণ না শানু মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং সহ-খেলোয়াড় মুন্না খান নামে এক যুবক জানান, শানুকে মেরে মুখ ফাটিয়ে দেন আরফিএফের ওই কর্মী। শানু হাত জোড় করে মাঠে খেলার জন্য ক্ষমা চান। অন্য খেলোয়াড়রাও শানুকে ছেড়ে দিতে বলেন। মুন্না বলেন, “আমরাও সবাই হাত জোড় করে ক্ষমা চাই। কিন্তু আরপিএফের ওই কনস্টেবল থামেননি। এর পরেও মাঠ থেকে উইকেট তুলে নিয়ে চুলের মুঠি ধরে শানুর বুকে-পিঠে মারতে থাকেন যতক্ষণ না ও অচেতন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।” মুন্না জানান, অচেতন শানুকে তাঁরাই হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এ দিন বিকেলে প্রহৃত যুবকের মা মুন্নি বেগম বলেন, “শানুকে নিয়ে আমরা যখন হাসপাতালে, তখন ওই কনস্টেবল আমাদের বাড়িতে চড়াও হয়ে আমার শাশুড়িকে চড়-থাপ্পড় মারে। আমার মেয়েকেও চুলের মুঠি ধরে মারতে মারতে রাস্তায় নিয়ে যায়। সেখানে ওর জামাকাপড় ছিঁড়ে দেয়।” মুন্নি বেগম জানান, এই দৃশ্য দেখে এলাকার লোকজন তাড়া করলে ওই কনস্টেবল পালিয়ে যায়।
এই ঘটনার কথা জানাজানি হতে স্থানীয় নোনাপাড়ায় তীব্র উত্তেজনার ছড়ায়। এলাকার শ’তিনেক বাসিন্দা টিকিয়াপাড়ায় আরপিএফ আবাসনের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। খবর যায় দক্ষিণ-পূর্ব রেলের টিকিয়াপাড়ার অফিসেও। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, এর পরেই ওই কনস্টেবলকে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
ঘটনার কথা স্বীকার করে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ অফিসার সৌমিত্র মজুমদার এ দিন বলেন, “অত্যন্ত অন্যায় ভাবে ওই যুবককে মারধর করা হয়েছে। আরপিএফের ওই কনস্টেবল সবকিছু স্বীকারও করেছেন। তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।” |