|
|
|
|
জন্মদিনে অচেনা মায়া |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
এ এক অন্য মায়াবতী।
গরিব পরিবারের মেয়ে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের তখ্তে বসার পর থেকে বিলাসব্যসনই হয়ে উঠেছিল তাঁর অন্যতম পরিচয়। নিজেকে সব সময় বৈভবের চূড়ায় দেখতে চেয়েছেন তিনি। জন্মদিনে কেকের ওজন পাল্লা দিত তাঁর বয়সকে। মার্সিডিজ বেঞ্জ বা সেই মাপের উপহার ছাড়া মন ভরত না। কিন্তু এ বার রাজ্যপাট খোয়ানোর পর তাঁর প্রথম জন্মদিনে দেখা মিলল অন্য এক দলিত নেত্রীর। বৈভবের ছটা নেই। নেই বাড়তি আড়ম্বরও। ছিলেন না নিজের রাজনৈতিক বিচরণভূমি, লখনউয়েও। ৫৭তম জন্মদিনটি কাটালেন দিল্লিতে।
উপহার পাওয়া শুধু নয়, ক্ষমতায় থাকতে এমন দিনে কল্পতরু হতেন। ঘোষণা করতেন একাধিক প্রকল্পের। দু’বছর আগে এমন দিনেই ৪ হাজার কোটি টাকার ৬০০টি প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন তিনি। তাতেও অবশ্য হালে পানি পাননি ভোটে। হারাতে হয়েছে তখ্ত। তাই আজ দিল্লিতে নিজের আত্মজীবনীমূলক বইয়ের অষ্টম খণ্ড প্রকাশ করেই ক্ষান্ত থাকলেন বহুজন সমাজ নেত্রী। তবে চেপে রাখেননি আক্ষেপ। বলেই ফেললেন, “এমন দিনে কত প্রকল্পের উদ্ধোধন করতাম। কিন্তু এখন অখিলেশ সরকার আমার প্রকল্প বন্ধ করে দিচ্ছে।” |
|
জাঁকজমকহীন জন্মদিনে শুধু বই প্রকাশ। নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই |
ক্ষমতা হারানোর স্বাদ এর আগেও পেয়েছেন বসপা নেত্রী। কিন্তু তাতে জন্মদিনের জাঁকজমকে ভাটা পড়তে দেখা যায়নি। এ বছরের এই ভোল বদল কি তবে নতুন কোনও রণকৌশল? জন্মদিনের এত আড়ম্বর দলিত ভোটাররা ভাল ভাবে নিচ্ছেন না, সেটা বুঝতে পারছেন বসপা নেত্রীও। রাজনীতির কারবারিরাও বলছেন, উত্তরপ্রদেশে মায়াবতী বা বিহারে রামবিলাস পাসোয়ানের মতো দলিত নেতানেত্রীদের মধ্যে ধনী ও প্রভাবশালী উচ্চ বর্ণের নেতাদের সঙ্গে এক সারিতে গণ্য হওয়ার একটা তীব্র বাসনা কাজ করে। তা থেকেই বৈভব প্রদর্শনের একটা ঝোঁক চাপে তাঁদের মধ্যে। এবং এটাকেই তাঁরা নিষ্পেষিত, শোষিত শ্রেণির উত্থান বলে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেন। যে কারণে জন্মদিনে মহার্ঘ্য গাড়ি উপহার পেয়ে মায়াবতী অবলীলায় বলতে পেরেছিলেন, আমার মার্সিডিজে চড়ার অর্থ হল দলিত শ্রেণির ক্ষমতায়ন। প্রথম-প্রথম ওই যুক্তি ভোটাররা মেনে নেন। একাত্মবোধ করেন ওই নেতাদের সঙ্গে। পরে ছবিটা উল্টে যায়, মায়াবতী-রামবিলাসদের ক্ষেত্রে যা ঘটেছে। ভোটব্যাঙ্কে ধস নেমেছে তাঁদের। বাধ্য হয়েই রণকৌশল পাল্টাচ্ছেন মায়াবতীরা।
ভিন্ন মেজাজের জন্মদিনের অনুষ্ঠানেও প্রথাগত ভাবে কংগ্রেস-বিজেপি-কে তুলোধোনা করতে ছাড়েননি মায়াবতী। এফডিআই, মূল্যবৃদ্ধি থেকে সাম্প্রতিক কাশ্মীর সমস্যা সব প্রশ্নেই মনমোহন সরকারের নীতিকে আক্রমণ করেছেন তিনি। বিজেপি-র কড়া সমালোচনায় বলেছেন, “অন্তর্দ্বন্দ্ব ভুলে ওরা যদি সত্যিকারের বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করত, তবে কেন্দ্রের সরকার বহু আগেই পড়ে যেত।” কিন্তু মায়াবতী নিজেই যে প্রতি বার বিভিন্ন নীতিগত ক্ষেত্রে কংগ্রেসকে সমর্থন দিয়ে আসছেন? এ নিয়ে নেত্রীর সাফাই, “বিজেপি-ই চায় সরকার বাঁচাতে। বিজেপি তথা এনডিএ যদি সরকার ফেলতে আদা-জল খেয়ে নামত, বহু দল ইউপিএ-র বিরুদ্ধে ভোট দিত।” আসন্ন নির্বাচনে তাই বসপা-কেই বিকল্প শক্তি হিসাবে তুলে ধরার আহ্বান জানান মায়াবতী।
মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সাংবাদিক বৈঠকে লিখিত বক্তৃতা পাঠ করেই উঠে যেতেন মায়াবতী। আজ কিন্তু তিনি নিজের বলা শেষ হলে, সাংবাদিকদের বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দেন। পরে তাঁদের খাওয়ার আয়োজন ঠিক ভাবে হয়েছে কি না, তারও খোঁজখবর নেন। এই মায়াবতীকে আগে দেখেননি, মানছেন তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরাও। তবে সব কিছুর মধ্যেই চেনা ছবি শুধু একটি। হিরের গয়না বরাবরই প্রিয় মায়াবতীর। জন্মদিনে সব সময়ই হিরের গয়নায় নিজেকে মুড়ে রাখেন তিনি। বাকি সব কিছু কাটছাঁট করলেও ছাড়তে পারেননি হিরের মায়া। সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর হিরের দুল, আংটি ও নেকলেসেই ঝলক মিলল ব্র্যান্ড মায়াবতীর। |
|
|
|
|
|