|
|
|
|
সীমান্তে পারদ চড়ছে, উদ্বিগ্ন সর্বজিতের পরিবার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ভারত-পাক সাম্প্রতিক উত্তেজনায় ঘুম ছুটেছে সর্বজিৎ সিংহের পরিবারের লোক জনের। লাহৌরের সেন্ট্রাল জেলে প্রায় সাড়ে বাইশ বছর ধরে বন্দি সর্বজিৎ। ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত ওই ভারতীয়ের বাড়ির লোক জনের এখন আশঙ্কা, পরিস্থিতি এ রকম থাকলে সর্বজিতের রেহাই নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও বাড়বে।
মঙ্গলবার কলকাতায় সর্বজিতের উদ্বিগ্ন দিদি দলবীর কউর বললেন, “যখনই ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক খারাপ হয়, তখনই আশঙ্কায় আমাদের বুক কেঁপে ওঠে। ভাইকে আদৌ ফিরে পাব তো? এখন যেমন হচ্ছে। গত ক’দিন ধরে নতুন করে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর উত্তেজনা শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভাইয়ের মুক্তি নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। দু’টি দেশের সরকারের প্রতিই আমাদের আবেদন, যুদ্ধের পরিস্থিতি যেন তৈরি না-হয়। বিদ্বেষের কাঁটা বিছানোর বদলে শান্তির ফুল ছড়ান। শুধু পাকিস্তানের জেলে বন্দি আমার ভাই না, আমরাও এই ২২ বছর পাঁচ মাসে তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছি।” কথা বলতে বলতে কান্নায় বুজে আসছিল দলবীরের গলা। |
|
সর্বজিতের মেয়ে পুনমদীপ সিংহ ও বোন দলবীর কউর। —নিজস্ব চিত্র |
একই আশঙ্কা সর্বজিতের ছোট মেয়ে, দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী পুনমদীপ সিংহের। “নতুন করে ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। আর বাবাকে নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তাও আরও বেড়েছে। কার দোষ, আমাদের জানার দরকার নেই। আমাদের একটাই প্রার্থনা, শান্তি বজায় থাকুক। দু’দেশের মানুষ ভাল থাকুক,” বলল পুনমদীপ। সর্বজিৎ যখন নিখোঁজ হন, সে তখন ২৮ দিনের শিশু। বাবাকে প্রথম দেখে ২০০৮ সালে। তার আবেদন, “দু’দেশের জেলেই আমার বাবার মতো যাঁরা বন্দি হয়ে আছেন, তাঁদের সকলকে মুক্তি দেওয়া হোক। ওই সব বন্দির পরিবারের যন্ত্রণা কী রকম, আমরা সেটা নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝতে পারি।”
চণ্ডীগড়, লখনউ, পটনার মতো শহরের পর এ দিন কলকাতায় ‘সবর্জিৎ মুক্তি অভিযান’-এর অঙ্গ হিসেবে পাকিস্তানে ওই বন্দির আইনজীবী আওয়াইস শেখের লেখা একটি বই প্রকাশিত হয়। বইয়ের নাম, ‘সর্বজিৎ সিংহ আ কেস অফ মিসটেকেন আইডেন্টিটি’। ওই অভিযানে অংশ নিতেই কলকাতায় এসেছেন সর্বজিতের পরিবারের লোকজন। ভারতীয় ভাষা পরিষদের বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত আওয়াইস অবশ্য সর্বজিতের মুক্তি নিয়ে আশা প্রকাশ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত উত্তেজনার বিষয়টি সাময়িক। শীঘ্রই এ সব মিটে যাবে। দু’দেশের মানুষ, দু’দেশের সরকার শান্তি চায়। কিন্তু দু’দেশেই কিছু ব্যক্তি ও সংগঠন নিজেদের স্বার্থের কারণে চায় না যে, পড়শি এই দেশ দু’টির মধ্যে শান্তি বজায় থাকুক। তবে শেষ পর্যন্ত তারা জয়ী হবে না।” ওই আইনজীবী দেড় মাস আগে সর্বজিতের সঙ্গে জেলে দেখা করেছেন। তাঁর দাবি, সর্বজিৎ এখন ভাল আছেন। সর্বজিৎ সিংহের মামলাটি এখন ঠিক কোন জায়গায়? আওয়াইস জানালেন, সর্বজিৎ সিংহের মুক্তির বিষয়টি এখন পাক প্রেসিডেন্টের বিবেচনাধীন। তাঁর আশা, সর্বজিতের প্রাণ ভিক্ষার আবেদন মঞ্জুর হবে। মার্চ মাসের পর সে দেশে তদারকি সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার কথা। তার আগেই সর্বজিৎ মুক্তি পাবেন বলে আশা করছেন তাঁর আইনজাবী। আওয়াইসের কথায়, “এক দিন ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে আমি সর্বজিৎকে এ দেশে নিয়ে আসব। আপনাদের আমানতকে আপনাদের হাতে তুলে দেব।” |
|
|
|
|
|