|
|
|
|
সুষমার মুণ্ড-মন্তব্যে দল বিপাকে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
লোকসভার বিরোধী দলনেত্রীর মুখ থেকে ‘দশমুণ্ড’ ছিনিয়ে নেওয়ার হুমকি নৈতিক জয় ছিনিয়ে নেওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিজেপি-র কাছে।
গত কাল পাক সেনার হাতে নিহত ভারতীয় জওয়ান হেমরাজ সিংহের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ মন্তব্য করেন, “হেমরাজের মুণ্ড ফেরানো না গেলে পাকিস্তান থেকে অন্তত দশটি মুণ্ড ছিনিয়ে আনতে হবে।” পাক সেনার সাম্প্রতিক আক্রমণ নিয়ে বিজেপি জাতীয়তাবাদের হাওয়া তুলে আন্দোলনে নেমেছে। কিন্তু সুষমার মন্তব্যে দল অস্বস্তিতে পড়েছে। ফলে আজ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে সুষমা ও অরুণ জেটলির বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রী যে ভাবে কঠোর বার্তা দিয়েছেন, তার জন্য ‘নৈতিক জয়’ দাবি করতেও হোঁচট খাচ্ছে বিজেপি।
হেমরাজের গ্রামে গিয়ে সুষমার এই মন্তব্যের পরেই প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ফোন করে জানান, পাক হামলা সম্পর্কে সরকারের অবস্থান জানাতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেননকে তিনি বিজেপি-র শীর্ষ নেতাদের কাছে পাঠাচ্ছেন। আজ সকালে সেই বৈঠক হয়। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী কঠোর বার্তা দিয়ে বলেন, “পাকিস্তানের সঙ্গে সব কিছু আগের মতো হবে না।” বিজেপি এটাকে সগর্বে তাদের নৈতিক জয় বলে দাবি করতে পারত। কিন্তু দলের নেতারাই মানছেন, “সুষমার মন্তব্য লাগামছাড়া হয়ে গিয়েছে। বিরোধী দলনেত্রী হিসেবে তাঁর একটা দায়িত্ব রয়েছে। জাতীয়বাদের পথ ধরে হাঁটলেও শব্দ বাছাইয়ে আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। তা না হওয়ায় বিজেপি-কে আক্রমণের সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে কংগ্রেস।”
সুষমার মন্তব্যকে কটাক্ষ করে আজ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মণীশ তিওয়ারি বলেন, “পাক হামলায় দেশবাসীর আক্রোশ রয়েছে বটে। কিন্তু সেনাবাহিনীর সুনির্দিষ্ট নীতি রয়েছে। পেশাদারি পরিধির মধ্যে থেকেই কী ভাবে জবাব দিতে হয়, তা তারা জানে। এর জন্য দেশাত্মবোধের জিগির তুলে কোনও লাভ নেই।” জাতীয়তাবাদের হাওয়া তুলে বিজেপি রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে। সেয়ানে-সেয়ানে টক্কর দিতে তৎপর কংগ্রেসও। তিন দিন পর জয়পুরে কংগ্রেসের যে চিন্তন-বৈঠক হতে চলেছে, সেখানেও তারা জাতীয়তাবাদী অবস্থান নিতে চাইছে। যে কারণে শিবসেনা হকি খেলায় পাক টিমের বিরুদ্ধে সরব হলেও বেশি আপত্তি করছে না কংগ্রেস। বরং এ মাসের শেষে পাক মহিলা হকি টিমের আসাও এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
বিজেপি-র এক নেতার কথায়, নরেন্দ্র মোদীকে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে আনলে উগ্র হিন্দুত্ব ফের সক্রিয় হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। বিজেপি নেতৃত্ব কিন্তু উগ্র হিন্দুত্বের পথ থেকে সরে এসে উন্নয়নের উপরেই জোর দিচ্ছেন এখন। স্বয়ং মোদীর মুখেও এখন শুধু উন্নয়নের বুলি। এর মধ্যে সুষমার এমন মন্তব্য একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। সুষমা-ঘনিষ্ঠরা সাফাই দিচ্ছেন, হেমরাজের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার পর সেখানে যে মনোভাব ছিল, সেটাই প্রকাশ করেছেন লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী। কিন্তু সুষমা-বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, দলের সভাপতি নিতিন গডকড়ী, প্রাক্তন সভাপতি রাজনাথ সিংহও তো ওখানে গিয়েছিলেন। তাঁরা কিন্তু এ ধরনের কোনও মন্তব্য করেননি।
দলে এই অসন্তোষ তৈরি হওয়ার কথা মাথায় রেখে সুষমা আজ নিজেই মুখ খোলেন। এই বিতর্ক নিয়ে সরাসরি কিছু না বললেও তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আজ যে কঠোর বার্তা দিলেন, তা আমাদের দৌলতেই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আজ যখন শিবশঙ্কর মেনন এসেছিলেন, তখন তাঁকেও আমরা বলেছি মানুষের রোষ যেন মনমোহন সিংহ বোঝেন। আমার ভালো লাগছে, প্রধানমন্ত্রী আমাদের কথা শুনে, সেই মনোভাব বুঝে কঠোর বার্তা দিলেন।” কিন্তু পর ক্ষণেই আক্রমণকেই আত্মরক্ষার সেরা পথ হিসেবে বেছে নেন সুষমা। তিনি বলেন, “মনমোহন সিংহ দেশের নেতা তো ননই, এমনকী দলেরও নেতা নন। অথচ সনিয়া গাঁধী যাবতীয় খারাপ পদক্ষেপের দায় প্রধানমন্ত্রীর উপরে চাপিয়ে দেন।” |
|
|
|
|
|