পুরসভার গুদাম থেকে উধাও হয়েছে ৯০৯৩ কুইন্টাল চাল। তার মধ্যে ৫৫০০ কুইন্টাল চালের জন্য ঠিকাদারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতা পুরসভা। চাল কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দিতেই এই সিদ্ধান্ত বলে পুরসভা সূত্রের খবর।
পুরসভার একটি সূত্রে জানানো হয়েছে, পুর গুদাম থেকে ৫৫০০ কুইন্টাল চাল লোপাটের কথা এক বছর আগেই জানতেন মেয়র-পারিষদ (শিক্ষা) এবং একাধিক আধিকারিক। ওই চাল সরিয়ে ফেলার ব্যাপারে তাঁদের কারও কারও সম্মতি ছিল বলেও পুর নথি থেকে সম্প্রতি জানা গিয়েছে।
পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই বিপুল পরিমাণ চালের মান খারাপ এবং তা নষ্ট বলে এক ঠিকাদার পুর শিক্ষা বিভাগের চিফ ম্যানেজারকে লেখা চিঠিতে জানান। পুরসভার সম্মতিতে তিনি গুদাম থেকে সেই চাল ‘বাইরে ফেলে দিয়েছেন’ বলে নথিতে লেখা হয়েছে। অথচ ওই চালের মান যে খারাপ ছিল, পুরসভার কোনও খাতাতেই তা লেখা নেই।
চাল কেলেঙ্কারি নিয়ে ব্যাপক হইচই হওয়ায় ওই ঠিকাদারকে বলির পাঁঠা করা হচ্ছে বলে পুরসভার একটি মহলের অভিযোগ। চাল লোপাটের বিষয়টি ধরা পড়ার পরেই মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, “এটা ঘটেছে আগের বোর্ডের আমলে।” অথচ ঠিকাদার চিঠিটি লিখেছিলেন ২০১১ সালের ২৮ ডিসেম্বর। অর্থাৎ চাল-কারচুপির ঘটনা ঘটেছে তৃণমূল বোর্ডের আমলেই। সম্প্রতি চিঠিটির খোঁজ পেয়ে পুর-প্রশাসন রীতিমতো বিব্রত। ৫৫০০ কুইন্টাল চাল ফেলে দেওয়ার ব্যাপারে ঠিকাদারের বক্তব্য সত্য বলে ধরে নিলেও বাকি ৩৫৯৩ কুইন্টাল চালের হদিস দিতে পারেনি পুর-প্রশাসন।
পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, “পুর শিক্ষা বিভাগের নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, এক পদস্থ পুর অফিসার ওই ঘটনায় যুক্ত।” ওই আধিকারিক জানান, এফসিআইয়ের গুদাম থেকে মিড-ডে মিলের চাল নিয়ে রাখা হত পুরসভার চারটি স্কুলঘরে।
ঠিকাদারের ওই চিঠির আগেই বিভিন্ন স্কুলঘর থেকে চাল সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। নথি অনুযায়ী ২০১১-র অগস্টে পুর শিক্ষা বিভাগের এক পদস্থ অফিসার ঘর খালি করার জন্য মালপত্র সরানো জরুরি বলে জানান। শিক্ষা বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, “তার পরেই ঠিকাদার সংস্থাটি চাল সরাতে শুরু করে।” ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে পুর শিক্ষা বিভাগের চিফ ম্যানেজারকে লেখা ঠিকাদারের চিঠিতেই পরিষ্কার, ৫৫০০ কুইন্টাল চাল ‘নষ্ট’ হয়ে যাওয়ায় তা ফেলে দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি ধরা পড়েছে সিএজি-র অডিটেও। ওই চাল যে নষ্ট হয়ে গিয়েছে, সেটা কে বা কারা সাব্যস্ত করল অডিটে তোলা এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনি পুর-প্রশাসন। চাল-জট ছাড়াতে সোমবারেও মেয়র-পারিষদ (শিক্ষা) শশী পাঁজা তাঁর ঘরে পুর কমিশনার খলিল আহমেদ এবং অন্য পদস্থ আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। পুরসভার প্রাক্তন যুগ্ম কমিশনার শহিদুল ইসলাম, পূর্বতন চিফ ম্যানেজার সব্যসাচী দে এবং সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে সেখানে থাকতে বলা হয়েছিল।
শশীদেবী মঙ্গলবার জানান, সোমবারের বৈঠকে ওঁদের কেউই হাজির হননি। আবার ওঁদের ডাকা হবে। এই ঘটনায় যাঁরা জড়িত, তাঁদের চিহ্নিত করা জরুরি।
নথিতে দেখা যাচ্ছে, শশীদেবী বিষয়টি জানতেন। এ ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য কী?
চিফ ম্যানেজারের নোটে তাঁর নাম জড়ানো নিয়ে শশীদেবী বলেন, “আমার অনুমোদন আছে বলে যা লেখা হয়েছে, সেই কাগজটা সংশ্লিষ্ট অফিসারকে দেখাতে বলা হয়েছে। এখনও জবাব আসেনি।” |