|
|
|
|
হলদিয়া বন্দরের প্রসঙ্গ তুলেই সুর কাটলেন বিদ্যা |
জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় ও
দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত • হলদিয়া |
সেই তাল কাটলই। আর তা কাটল এক শিল্পপতির প্রশ্নকে ঘিরেই। ‘বেঙ্গল লিডস’-এর আসরেও উঠে এল হলদিয়ায় এবিজি-বিতাড়ন পর্ব, বন্দরের নাব্যতার করুণ দশার কথা। হলদিয়ার বন্দর-কাঁটা যাতে সামনে চলে না আসে, সে জন্য যথেষ্ট সতর্ক ছিল শিল্প দফতর। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না।
শিল্প-সম্মেলনের প্রাক্-মুহূর্তে হলদিয়া থেকে রাতারাতি উধাও শুভেন্দু অধিকারীর কাটআউট, ব্যানার। শিল্প টানার মহামেলায় সর্বত্রই শুধু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি-ব্যানার। আর এই ভরা আসরে হলদিয়া বন্দরের প্রসঙ্গ পেড়ে গঙ্গাজলে যেন চোনা ফেলে দিলেন রেনুকা সুগারের মালকিন বিদ্যা মুরকুম্ভি। মঞ্চের আশপাশে তখন সদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছেন শ্যামল আদক, সাধন জানা-সহ এমন অনেকে, অক্টোবরেই হলদিয়া থেকে পালাতে বাধ্য করার জন্য যাঁদের বিরুদ্ধে কয়েক বার থানায় অভিযোগ দায়ের করে এবিজি। জঙ্গি শ্রমিক আন্দোলনের সেই কুশীলবরাই এ দিন দেখা গেল লগ্নিসেবকের ভূমিকায়! |
|
‘বেঙ্গল লিডস ২’-এর মঞ্চে মমতা-শুভেন্দু। —নিজস্ব চিত্র |
বক্তৃতা শেষে মুখ্যমন্ত্রী শিল্পপতিদের কাছ থেকে সরাসরি প্রশ্ন আহ্বান করেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জমানায় ৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে তৈরি হওয়া রেণুকা সুগারের বিদ্যা মুরকুম্ভি মমতাকে বলেন, “ম্যাডাম, আমাদের কারখানাটি পূর্বাঞ্চলের এক মাত্র চিনি কারখানা। আমরা কাঁচা চিনি নিয়ে এসে তা প্রক্রিয়াজাত করে চিনি তৈরি করি। কোনও কারণে যদি কারখানা বন্ধ থাকে, তা হলে রাজ্যে চিনির দর প্রতি কিলোগ্রামে দু’টাকা বেড়ে যায়।” এর পরেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে মুরকুম্ভি সরাসরি অভিযোগ করেন, “বন্দর সমস্যায় পড়ে আমাদের চরম ভোগান্তি হচ্ছে। নাব্যতার যা হাল, তাতে হলদিয়া বন্দরে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টন পণ্যবাহী জাহাজ আনা যায়। তার বেশি আনতে হলে বার্থ পাওয়া এবং পণ্য খালাসের সমস্যায় পড়তে হয়। এই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হোন। তা না হলে হলদিয়ার শিল্প সংস্থাগুলিকে ভুগতে হবে।” |
|
• শিল্প ও কৃষিতে অনেক ছাড় দিচ্ছি। |
• অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে জাতীয় গড়ের চেয়ে রাজ্য এগিয়ে। |
• শ্রমদিবস নষ্টের পরিমাণ কমেছে। ফিরেছে কর্মসংস্কৃতি। |
• ল্যান্ড ব্যাঙ্ক, পাওয়ার ব্যাঙ্ক, জমি মানচিত্র, জমি ব্যবহারের নীতি তৈরি হয়েছে। যা বলেছিলাম, সব করে দিয়েছি। |
• রেলের ১৩টি কারখানা, এনটিপিসি-সিইএসসি-র ৪/৫টি বিদ্যুৎ প্রকল্প, দুর্গাপুরে সেল-এর, নয়াচরে প্রসূনের প্রকল্প, দু’টো গভীর সমুদ্র বন্দর, দু’টো ফিল্ম সিটি হচ্ছে। |
• আবেদনের সাত দিনের মধ্যে ১৪ওয়াই ধারায় অতিরিক্ত জমি রাখার অনুমতি পাবেন। |
• দেড় বছরে একটিও কারখানা বন্ধ হয়নি। ইউনিয়নের সমস্যা নেই। |
|
পরে বিদ্যাদেবী বলেন, “একে তো নাব্যতার সমস্যা। তার উপর বন্দরের আধুনিকীকরণও পাল্লা দিয়ে হয়নি। তাই পণ্য খালাসে বাড়তি খরচ বহন করতে হচ্ছে আমাদের।” মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য এই সমস্যা নিয়ে বিশদ আলোচনায় যাননি। বন্দরের চেয়ারম্যানকে দেখিয়েই দায়িত্ব সেরেছেন তিনি। বন্দর কর্তাদের একাংশ জানিয়েছেন, কোম্পানি হিসেবে এবিজি কোনও বিষয়ই নয়। কিন্তু তারা বন্দরের আধুনিকীকরণ ও উৎপাদনশীলতার প্রতীক হয়ে উঠেছিল। এবিজি-র চলে যাওয়াটা যে শিল্প মহলকে ভোগাবে, তা তখনই বোঝা উচিত ছিল। বন্দর কর্তাদের কেউ কেউ আবার বলেছেন, রেণুকা সুগার যে পণ্য আমদানি করে, তা এবিজি-র বার্থগুলির মাধ্যমে খালাস হোত না। তবে নাব্যতা ও দ্রুত পণ্য খালাস এক মাত্র যন্ত্রের মাধ্যমেই সম্ভব। যা হলদিয়া বন্দরে এখনও হয়নি। তার জন্য রাজনৈতিক স্বার্থ জড়িত। মুখ্যমন্ত্রীর সামনে তা তুলে ধরে বিদ্যাদেবী ঠিক কাজই করেছেন।
দেশের প্রথম সারির শিল্পপতিরা না এলেও এ দিন সম্মেলন এলাকা আলো করে ঘুরতে দেখা গিয়েছে এবিজি-বিতাড়ন পর্বের একাধিক নেতাকে। বন্দরে শ্রমিক সরবরাহকারী এজেন্ট শেখ মুজফ্ফরকেও দেখা গেল সম্মেলনে। কয়েক বছর আগেও প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠের ডান হাত বলে পরিচিত ছিলেন তিনি। স্যুট গায়ে রীতিমতো শিল্পপতি সেজে এ দিন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে করমর্দন করতেও চলে যান! হয়তো চিনতে পেরেই পার্থবাবু আর হাত বাড়াননি। মুজফ্ফরের এক সহকারীর আক্ষেপ, “দলের নেতাকেও চিনতে পারলেন না!” ওই সঙ্গীর থেকেই জানা গেল, অধুনা শিল্পপতি মুজফফ্র নাকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানেও রাজভবনে আমন্ত্রিত ছিলেন! সাদা স্যুট পরে তিনি নাকি প্রথম সারিতেই বসেছিলেন। |
|
এবিজি-পর্বে অভিযুক্ত শ্যামল আদক, সাধন জানারা যে ভাবে সভাস্থলের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত ঘুরে বেড়ালেন, তাতে ক্ষুব্ধ অনেকেই। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের এক কর্তা তো বলেই ফেললেন, “বোঝার উপায় নেই, এঁরাই বাঁদরটুপি পড়ে পরিচয় গোপন করতে পারেন!” তবে দ্বিতীয় ‘বেঙ্গল লিডস’-এর অনুষ্ঠানে অদ্ভুত সমাপতন হল নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনের নেতাদের লগ্নি টানার অনুষ্ঠানে আসা। নন্দীগ্রামে শিল্পতালুকের বিরোধিতা করে শিরোনামে এসেছিলেন শেখ সুফিয়ান, আবু তাহেররা। এ দিন শিল্প মেলায় সস্ত্রীক এসেছিলেন তাহের। স্ত্রীকে বিভিন্ন স্টল ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিলেন। সুফিয়ানও মন দিয়ে শুনলেন মুখ্যমন্ত্রী লগ্নির আহ্বান। শিল্পের দরকার আছে? দু’জনেরই জবাব, নিশ্চয়। তবে কথা নেই ফিরোজা বিবির। নন্দীগ্রামের বিধায়ক। জমি আন্দোলনে ছেলেকে হারিয়েছেন। এ দিন তিনিও হাজির শিল্প ধরার বৈঠকে!
|
এবিজি-র কাজহারাদের জমায়েতে পুলিশের লাঠি
নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া |
বেঙ্গল লিডস ২’-এর উদ্বোধনের দিনই হলদিয়ায় এবিজি-র কাজহারা শ্রমিকদের জমায়েতে লাঠি চালাল পুলিশ। গ্রেফতার হলেন ১৭ জন। এবিজি-র মতো সংস্থাকে হলদিয়া বন্দর থেকে বিতাড়িত করে সেই শিল্পশহরেই শিল্প সম্মেলন করার যৌক্তিকতা কী, এই প্রশ্ন নিয়ে মঙ্গলবার সুতাহাটায় মিছিলের কর্মসূচি নেন এবিজি-র কাজহারা শ্রমিকেরা। পুলিশ অবশ্য তাঁদের অনুমতি দেয়নি। তাই সুতাহাটার নন্দরামপুরে এ দিন মিছিলের জন্য জমায়েত হতেই পুলিশ তা ছত্রভঙ্গ করে দেয়। শেখ সিরাজ-সহ আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। মিছিলে যোগ দিতে আসার পথে বাজকুলের কাছে আটক করা হয় কংগ্রেসের জেলা সাধারণ সম্পাদক কণিষ্ক পণ্ডাকে। কাজহারা শ্রমিকেরা দুপুরে ফের মিছিল করতে গেলে পুলিশ জমায়েতে লাঠিচার্জ করে। গ্রেফতার করা হয় আইএনটিইউসি-র জোনাল সভাপতি আরিফ আহমেদ, নূর আলম-সহ আরও ১৫ জনকে। এবিজি-র কাজহারাদের পাশে প্রথম থেকেই রয়েছে কংগ্রেস। এ দিনের ঘটনার পর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, “গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যে কেউ বিক্ষোভ দেখাতে পারেন। তা বলে কাউকে গ্রেফতার করা হবে কেন?” লাঠি চালানোর কথা অবশ্য মানতে চাননি হলদিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি। তাঁর বক্তব্য, “বেঙ্গল লিডস’-এর দিনে অনুমতি ছাড়াই ওঁরা মিছিল করছিলেন। গোলমাল এড়াতেই কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” |
|
|
|
|
|