বিনোদন না-পসন্দ নাটকের সংলাপ,
তৃণমূলের হেনস্থা পরিচালককে

র্পিতা ঘোষের ‘পশুখামার’ রোষের মুখে পড়ায় রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছিলেন কলকাতার প্রবীণ নাট্যকার বেণু চট্টোপাধ্যায়। এ বার তাঁর নাটকে ‘মা-মাটি’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করে তাঁকেই চরম হেনস্থা হতে হল উত্তরবঙ্গের দিনহাটায়। তাঁর ‘অপরাধ’, তিনি নাটকের সংলাপে দুর্নীতিগ্রস্তদের মুখে ‘মা-মাটি’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করে সরকারকে ‘অপমান’ করেছেন। এরই জেরে স্থানীয় তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের চাপে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হল তাঁকে।
পরিচালক
বেণু চট্টোপাধ্যায়
বেণুবাবু পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। রাজ্যের নাট্য অ্যাকাডেমিরও সদস্য ছিলেন তিনি। গোটা ঘটনায় মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত বেণুবাবু বলেন, “১৯৫৯ থেকে নাটক করছি। পশুখামার রোষের মুখে পড়লে প্রতিবাদ করেছি। উইঙ্কল-টুইঙ্কল, ব্রাত্যজনের রূদ্ধসঙ্গীত নিয়ে আপত্তি উঠলে আমরা পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু, এমন অভিজ্ঞতা অতীতে কখনও হয়নি।” তাঁর অভিযোগ, “সোমবার রাতে নাটক হওয়ার পর থেকে চোরাগোপ্তা শাসানি, হুমকি শুনেছি। পরের দিন যে ভাবে চড়াও হয়েছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা, যা বলেছেন, তাতে আমাদের দলের মেয়েরা কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। বাধ্য হয়ে যা বলিনি সে কথা উল্লেখ করে ক্ষমা চাই।”
গত ৪ জানুয়ারি থেকে কোচবিহারের দিনহাটায় প্রগতি নাট্য সংস্থার উদ্যোগে উৎসব শুরু হয়েছিল। সেখানে আমন্ত্রিত হয়ে ১৪ জানুয়ারি শেষ দিনে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সেতুবন্ধন’ নাটকটি মঞ্চস্থ করে বেণুবাবুর দল ‘নিউ থিয়েটার’। বিষয়বস্তু ছিল একটি সেতু নির্মাণে দুর্নীতি। একটি দৃশ্যে তদন্তরত ইঞ্জিনিয়ারকে ফোনে অদৃশ্য এক চরিত্র হুমকি দিয়ে নির্দেশ দেয়, ‘এটা নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না। ওটা মা-মাটি হয়ে গিয়েছে। আমরা বুঝে নেব।’
রাতেই নাটকটি শেষ হওয়ার পরে নাট্যদলের লোক জনকে ঘিরে ধরে কিছু লোক হইচই করেন। ভয়ে পেয়ে নাট্যদলের পক্ষে দিনহাটা থানায় জানানো হয়। পুলিশের অফিসার ও তৃণমূলের কিছু নেতা রাতে দলটি যেখানে ছিল, সেই পুরসভার অতিথি নিবাসে গিয়ে কথা বলে। মঙ্গলবার সকালে পুলিশকে নিয়ে তৃণমূলের নেতারা ফের গিয়ে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন। দফায়-দফায় হুমকি দিয়ে বেণুবাবুকে ভিডিও ক্যামেরার সামনে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়। অভিযোগের তির স্থানীয় তৃণমূল নেতা পার্থনাথ সরকারের দিকে। ঘটনার সময় পুলিশ আগাগোড়া নিষ্ক্রিয় দর্শকের ভূমিকা নিয়েছিল বলে অভিযোগ। বিকেলে নাট্যদলের লোক জন কলকাতা রওনা হন। ঘটনা জানাজানি হতেই রাজ্যের সংস্কৃতির দুনিয়ার অনেকেই প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। অবিলম্বে ওই ঘটনায় যুক্তদের চিহ্নিত করে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও উঠেছে। শিক্ষামন্ত্রী তথা নাট্য ব্যক্তিত্ব ব্রাত্য বসুর প্রতিক্রিয়া, “আমি খোঁজ নিয়ে দেখব। এক জন শিল্পী হিসেবে মনে করি এমন ঘটনা ঘটা উচিত নয়।” নাট্য ব্যক্তিত্ব অর্পিতা ঘোষ বলেন “এ রকম যদি ঘটে থাকে সেটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এটা গণতন্ত্রের পক্ষে খুব খারাপ।” নাট্য ব্যক্তিত্ব সুমন মুখোপাধ্যায় বলেন, “সিপিএম জমানার শেষ দিকে এই প্রবণতাগুলোর বিরুদ্ধেই আমরা মুখ খুলেছিলাম। ভেবেছিলাম পরিবর্তনের পর এমন আর হবে না। এখন তো দেখছি এ আরও এককাঠি বাড়া।” নাট্যজগতের কেউ কেউ অবশ্য এ কথাও বলছেন যে, ইদানীং কিছু কিছু নাটকে বিক্ষিপ্ত কিছু সংলাপ ঢুকিয়ে হাততালি কুড়নোর চেষ্টা হচ্ছে। সত্যিকার প্রতিবাদী নাটক এগুলোকে বলা উচিত কি না তা নিয়ে বিতর্ক আছে।
যাঁর নেতৃত্বে ক্ষমা চাওয়ানো হয়েছে, সেই পার্থনাথ সরকার তৃণমূল কংগ্রেসের কোচবিহার জেলার এক জন সাধারণ সম্পাদক। তাঁর যুক্তি, “নাটকের সংলাপে এক জন দুর্নীতিগ্রস্তের মুখে ‘মা-মাটি-মানুষ’ শব্দ বসিয়ে দুর্নীতি আড়ালের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনকী, ‘দিদি সামলে নেবে’ গোছের কথাও বলা হয়েছে। আমাদের মনে হয়, তা দর্শকদের ভাবাবেগে আঘাত করেছে। তাই নাটক শেষে প্রতিবাদ করি।” দিনহাটা প্রগতি নাট্য সংস্থার সভাপতি নারায়ণ সাহা বলেন, “তৃণমূল নেতাদের উপস্থিতিতে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটানো হয়েছে। অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা নাটকে মা, মাটির ব্যাপার লেখার সম্ভবনাই নেই। তার পরেও কেউ সস্তা হাততালি কুড়োতে চাইলে জনতা মানবেন কেন?”

আমি খোঁজ নেব। শিল্পী
হিসেবে মনে করি এমন ঘটনা
ঘটা উচিত নয়।
ব্রাত্য বসু

এমন হয়ে থাকলে
দুর্ভাগ্যের। গণতন্ত্রের
পক্ষে খারাপ।
অর্পিতা ঘোষ

ভেবেছিলাম পরিবর্তনের পর এমন
আর হবে না। এখন তো দেখছি এ
আরও এক কাঠি বাড়া।
সুমন মুখোপাধ্যায়
এ ব্যাপারে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির চেয়ারম্যান গৌতম দেব বলেন, “ওই ঘটনায় কারা যুক্ত তা স্পষ্ট নয়। সকলেই তৃণমূলের কি না সেটা দেখতে হবে।”
নাটকের সংলাপে শুধু ‘মা-মাটি’ শব্দবন্ধ ছিল বলে পরিচালকের দাবি। এমনকী, ‘দিদি’ কথাটিও উচ্চারণ করা হয়নি বলেও বেণুবাবু দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “আমি তো স্ক্রিপ্ট ওঁদের পড়তে দিতে চেয়েছি। কিন্তু, ওঁরা রাজি হলেন না। বললেন, ওতে না থাকলেও আপনারা বলেছেন। এ যেন সেই জল ঘোলা করার গল্প!” পার্থনাথবাবু নিজের অবস্থানে অনড়। তিনি দাবি করেন, তাঁরা নিজে ওই সংলাপ শুনেছেন।
যদিও দিনহাটার ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক উদয়ন গুহ গোটা ব্যাপারটি কে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধের চেষ্টা বলে দেখছেন। উদয়নবাবু বলেন, “নাটক হল সমাজের দর্পণ। সেখানে নাট্য পরিচালক কী সংলাপ লিখবেন, সেটা শাসক দলের নেতারা ঠিক করে দেবেন? এটা হতে পারে না। এটা গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধের সামিল।” দিনহাটার সিতাইয়ের কংগ্রেস বিধায়ক কেশব রায়ের বক্তব্য, “নাটকে কী সংলাপ থাকবে সেটা নাট্যকারের স্বাধীনতা। তাতে হস্তক্ষেপ করা হলে তো রাজনীতিতেও কোনও দলের বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না।” তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য দাবি করেছেন, “জনগণের নির্বাচিত সরকারকে হেয় করার চেষ্টা দেখেই স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ হয়েছে।”

একটি বাংলা ছবিতে আবার একসঙ্গে কাজ করছেন সোহিনী হালদার ও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।
তারই শু্যটিংয়ের ফাঁকে দুই অভিনেত্রী। মঙ্গলবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.