স্কুল-মাঠে মাইক, কৃষিমেলা বাজিয়ে দিল ছুটির ঘণ্টা
স্কুলের ভিতরের মাঠে মাইক বাজিয়ে কৃষিমেলার আয়োজন করা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হল কাটোয়ায়। মঙ্গলবার কাটোয়া শহরের কাশীরামদাস বিদ্যায়তনের (কেডিআই) মাঠে এই মেলা শুরু হয়েছে। এ দিন চতুর্থ পিরিয়ডের পরে স্কুল ছুটি দেওয়া নিয়েও চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতি কাটাতে মেলার উদ্বোধক ক্ষুদ্র, কুটির ও ভূমি দফতরের প্রতিমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বুধবার কাটোয়ার মহকুমাশাসক আর অর্জুনকে স্কুল চলাকালীন ‘মাইক-বিহীন’ অনুষ্ঠান করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এ দিন বেলা ১টা নাগাদ স্কুল চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, ছাত্রাবাসের সামনের মাঠে প্রায় ২২টি স্টল রয়েছে। ছাত্রাবাসের এক দম সামনে মূল মঞ্চ। মাইকে দেশাত্মবোধক গান থেকে সরকারি প্রচার, সবই চলছে। এ সবের মধ্যেই পড়ুয়ারা স্কুলব্যাগ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সঙ্গে তাদের অভিভাবকেরাও। অন্য দিকে পাশের মাঠ সূর্যনারায়ণ হল, বিজ্ঞান ভবনে ক্লাস চলছিল। এ দিকে স্কুলের মূল ভবনের পাঁচটি ঘর প্রশাসন মেলার জন্য নেওয়ায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে পড়ুয়াদের। বুধবার স্কুলের খেলা রয়েছে। স্কুলের একটি মাঠে মেলা হওয়ায় লং জাম্প ও হাই জাম্প কোথায় হবে, তা নিয়েও ধন্দে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

অকাল প্রস্থান। কাটোয়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র।
এ ভাবে মেলা হওয়ায় অভিভাবকেরা ক্ষুব্ধ। কাটোয়ার টেলিফোন ময়দানের প্রতিভা দাস বৈরাগ্য, পঞ্চাননতলার শেলি সিংহ, তাঁতিপাড়ার গণেশচন্দ্র রায়েরা বলেন, “এমনিতেই নানা কারণে ঠিক মতো স্কুল হয় না। তার উপরে কাজের দিনে স্কুলের মধ্যে মেলা করার কোনও মানে হয় না।” শুধু অভিভাবকেরা নন, কৃষিমেলার স্থান নিয়ে কৃষকেরাও ক্ষুব্ধ। উদ্বোধনের সময়ে কৃষকদের দেখাও বিশেষ মেলেনি। কাটোয়া ১ ব্লকের আলমপুর পঞ্চায়েতের সাহাজাহান শেখ কিংবা মঙ্গলকোটের কৈচর ২ পঞ্চায়েতের অজিত মণ্ডলেরা বলেন, “ওই স্কুলের মাঠের চেয়ে নিয়ন্ত্রিত বাজার কমিটির (আরএমসি) মাঠে এই মেলা হলে ভাল হত। ওই মাঠের পাশেই খাজুরডিহি, পানুহাটের মতো কয়েকটি গ্রাম আছে। সেখানকার চাষিরা মেলায় যোগ দিতে পারতেন।” কৃষিমেলায় কৃষিজাত দ্রব্যের চেয়ে হস্তশিল্পের প্রদর্শনই বেশি হচ্ছে। মেলার আহ্বায়ক, কাটোয়ার সহ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) রবিউল হক বলেন, “প্রশাসন চেয়েছে বলেই আরএমসি-র বদলে কেডিআই-তে এই মেলা হয়েছে।”
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত বছর ৩১ ডিসেম্বর মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে কৃষিমেলা নিয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে আরএমসি-র সচিব ও কেডিআইয়ের প্রধান শিক্ষক সুধীন মণ্ডল উপস্থিত ছিলেন। প্রশাসনের কর্তারা স্কুলের মাঠে কৃষিমেলা করার ইচ্ছা প্রকাশ করলে প্রধান শিক্ষক বাধা দেননি। এখন মেলা নিয়ে বিতর্ক বাধায় প্রশাসনের কর্তারা প্রধান শিক্ষকের উপরে দোষ চাপাচ্ছেন। রবিউল হকের দাবি, “ওই বৈঠকে প্রধান শিক্ষক আপত্তি জানালেই মেলা আরএমসি-তে করা হত।” মহকুমাশাসক বলেন, “দশ দিন আগেই প্রধান শিক্ষককে সকালে স্কুল করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। এর পরে যা বলার তিনিই বলতে পারবেন।”
প্রধান শিক্ষক অবশ্য মেলার জন্য স্কুলের অসুবিধার কথা মানতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, “কেতুগ্রামের উদ্ধারনপুরের মেলার জন্য টিফিনের পরে ছুটি দেওয়া হয়েছে। বুধবার স্কুলের ক্রীড়া রয়েছে। পড়ুয়া বা আমাদের কোনও অসুবিধা হচ্ছে না।” যদিও স্কুলপড়ুয়া সৌম্য পাত্র, শান্তনু সাহা, টুবান রায়েরা বলেন, “শিক্ষকেরা বলেছেন, মাঠে মেলা হচ্ছে বলেই ছুটি দেওয়া হয়েছে।” স্কুলের কর্মীরাও সে কথা জানিয়েছেন। স্কুল পরিচালন কমিটির সম্পাদক অপূর্ব লাহা বলেন, “স্কুল ছুটি দেওয়ার ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই।” মন্ত্রী স্বপনবাবু বলেন, “কোনও কারণে বিষয়টি এমন হয়ে গিয়েছে। স্কুল চলাকালীন মাইক বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.