|
|
|
|
তারাবাজি |
শ্রী-র পরের ছবি ক’মাস পরেই |
‘ইংলিশ ভিংলিশ’ ছবিতে অসাধারণ সাফল্যের পর অনেকেই ভাবছেন তাঁকে
নিয়ে কী ছবি করা যায়। বললেন বনি কপূর। তাঁর মুখোমুখি প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত |
একটা ধোসা আর দুটো ইডলি।
এক বাটি সম্বরে ডুবিয়ে।
এটাই বনি কপূরের ব্রেকফাস্ট। আদতে উত্তর ভারতের বাসিন্দার এই দক্ষিণী খাবারের প্রতি ভালবাসা কি ‘শ্রীদেবী-ইমপ্যাক্ট’?
হাসলেন বনি, “দক্ষিণী খাবার আমার বরাবরই ভাল লাগে। সাংসারিক যোগাযোগটা কাকতালীয়।”
ততটাই কাকতালীয় আরেকটা জিনিসও। বনি-শ্রীদেবীর বিয়ের কী আশ্চর্য মিল চেতন ভগতের ‘টু স্টেটস’-এর সঙ্গে। এই ‘টু স্টেটস’ থেকেই তৈরি হতে চলেছে বলিউড সিনেমা। আরও আশ্চর্যের যে তাতে অভিনয় করবেন বনির ছেলে অর্জুন, যে গল্পে এক উত্তর ভারতীয় ছেলে এক দক্ষিণ ভারতীয় মেয়ের প্রেমে পড়ে।
হাসিমুখে বনির স্বীকারোক্তি, “এটা সত্যিই আমি ভেবে দেখিনি।”
তবে গোটা ভারতবর্ষের মতো উনিও ভাবছেন শ্রীদেবীর ‘ইংলিশ-ভিংলিশ’-এর সাফল্যের পরে কোন ছবি করা উচিত? “অনেকেই ভাবছেন তা নিয়ে। ওর নিজেরও কিছু আইডিয়া আছে। ‘ইংলিশ-ভিংলিশ’-এর পরিচালক গৌরী শিন্ডেরও কিছু আইডিয়া আছে। আমি নিজেও ভাবছি আগামী দু’ তিন মাসের মধ্যেই কিছু ঘোষণা করা হবে।”
শ্রীদেবীর সেকেন্ড ইনিংসের এই সাফল্য অনেককেই অবাক করেছে। মুমতাজ থেকে মাধুরী পর্যন্ত বলিউডের অন্যান্য অভিনেত্রী প্রত্যাবর্তনের পরেও এই রকম স্বীকৃতি পাননি। কারণটা বনি বিশ্লেষণ করতে চান না। ইন্ডাস্ট্রি ও দর্শক বলছে এ সবই সম্ভব হয়েছে ছবিতে শ্রীদেবীর দক্ষ অভিনয়, ভাল চিত্রনাট্য ও গৌরীর পরিচালনার জন্য।
শ্রীদেবীকে প্রথম দেখার স্মৃতি আজও ভুলতে পারেননি বনি। “আমি চেন্নাইতে একটা তামিল ছবিতে ওকে প্রথম দেখি। ওর ছবির অনুরাগী ছিলাম। ১৯৭৮-এ ঋষি কপূরের সঙ্গে ওকে সাইন করানোর কথা ভাবি। আমি ওর সঙ্গে দেখা করতে ওর চেন্নাইয়ের বাড়িতেও লোক পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু ওকে বলা হয় শ্রী তখন শু্যটিংয়ের কাজে সিঙ্গাপুরে।”
১৯৮০তে বনি প্রথম নিজের একক প্রযোজনায় ছবি করেন ‘হম পাঁচ’। তার এক বছর আগে ‘সলওয়া শাঁওন’ দিয়ে বলিউডে অভিষেক হয়েছে শ্রীদেবীর। ‘‘সেটা দেখেই আবার শ্রী-কে নিজের প্রযোজিত ছবিতে নিতে ইচ্ছে হয় আমার।” কিন্তু তার পরের ছবি, ‘ওহ সাত দিন’-এ অনিল কপূরের বিপরীতে ছিলেন পদ্মিনী কোলাপুরী। “পদ্মিনী তখন উঠতি অভিনেত্রী। এর আগে ও রাজ কপূরের সঙ্গে কাজ করেছিল। তা ছাড়া ও ছিল মরাঠি। আমরা ভেবেছিলাম, ওই চরিত্রটা পদ্মিনীই ভাল ফুটিয়ে তুলতে পারবে।”
‘জাগ উঠা ইনসান’-এর সেটে বনি আর শ্রীদেবীর পরবর্তী সাক্ষাত্। শ্রীদেবী আর মিঠুন চক্রবর্তী অভিনীত ওই ছবিতে দু’জনের অন স্ক্রিন আর অফ স্ক্রিন কেমিস্ট্রি নিয়ে প্রচুর কথা হয়। “ওই সময় একবার এক ফ্লাইটে আমি আর শ্রী মুম্বই থেকে চেন্নাই গিয়েছিলাম। ও তত দিনে বিখ্যাত হয়ে গেছে। ‘হিম্মত্ওয়ালা’ রিলিজ করেছে। তবুও ফ্লাইটে ওর কোনও তারকাসুলভ আচরণ ছিল না। এমনকী ছিল না কোনও মেক আপ,” মনে পড়ে যায় বনির।
তবে তখনও কিছু প্রকাশ করেননি। অপেক্ষা করেন ১৯৮৩-র শেষ পর্যন্ত। তার পর চেন্নাই যান শ্রীদেবীর মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। “ওর মা-ই ওর কাজের ব্যাপারে সব কিছু দেখতেন। আমি শ্রীদেবীকে একটা ছবি সই করাতে গিয়েছিলাম। আমি নীচের ঘরে বসে ছিলাম। ও বার বার ঘরে ঢুকছিল আর বেরোচ্ছিল প্রত্যেক কাজে মায়ের অনুমতি নিতে।”
ওই কয়েক ঝলক দেখাতেই হয়তো বনির জীবনটা পাল্টে গেল। “সেই সময় ওর পারিশ্রমিক ছিল ছবি পিছু আট থেকে সাড়ে আট লাখ টাকা। এই নিয়ে আলোচনা শুরু হতে ওর মা বললেন, ‘আমরা দশ টাকা নেব।’ দশ মানে যে দশ লাখ টাকা, দশ টাকা নয় সেটা বুঝতে আমার পনেরো সেকেন্ড লেগেছিল। তবে তার পর আমি যা করলাম সেটা আরও মারাত্মক! বলেছিলাম, এগারো টাকা দেব। আমি কিন্তু এগারো লাখ বলিনি। আমি যদি দশ সেকেন্ড চুপ করে থাকি, তা হলে শ্রী-এর মা অন্তত দু’মিনিট চুপ করেছিলেন, পুরো ব্যাপারটার আকস্মিকতা কাটিয়ে উঠতে।”
এটা কি এক ব্যবসায়ীর দুরন্ত চাল? নাকি এক প্রেমিকের জামাই হয়ে বাড়িতে ঢোকার আগে হবু শাশুড়ির মন কাড়ার নতুন ফন্দি? বনি এমন ভাবে হাসেন যার অর্থ হয় দু’টো কারণই ঠিক। পারিশ্রমিকটা এতটাই লোভনীয় ছিল যে বনি তখনই শ্রীদেবীর ডেট পেয়ে যান। বাপুর পরিচালনায় ছবির নায়িকা হিসেবে ঠিক হয় শ্রীদেবীর নাম। তবে সেই ছবিটি শেষ পর্যন্ত হয়নি।
এর পর আসে অনিল কপূরের সঙ্গে ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’। কখন বুঝলেন আবেগ কেবল অনুরাগীর সীমানা ছাড়িয়ে আরও বেশি কিছুর দিকে যাচ্ছে? “ওই দৃশ্যটা মনে আছে? শ্রী একটা লাল পোশাক পরে...?” বনির গলার স্বর আরও নিবিড় হয়ে আসে যখন তিনি বলতে থাকেন কী ভাবে সেটে উনি শ্রীদেবীর অত্যন্ত যত্ন নিতেন। “আমি ওকে রানির মতো রাখতে চাইতাম। আগেই আমি ওর পারিশ্রমিক বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। আমি চেয়েছিলাম যে কেউ যেন চাইলেই ওর কাছে না আসতে পারে। জাদুর মতো স্ক্রিন প্রেজেন্স। অথচ ওর মধ্যে একটা নরম সারল্য ছিল। ওর প্রশ্ন ছিল সারল্যে ভরা। আমি ওর চারপাশে একটা দেওয়াল হয়ে থাকতাম। অনেকেই ওর সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে ভয় পেত। তারা তাদের প্রশ্ন আমার মাধ্যমে ওকে পৌঁছে দিতে চাইত।”
আর সেই শ্রীদেবীই বিয়ের পর ছবির দুনিয়া থেকে পুরো ছুটি নিয়ে নিলেন। তবে একজন প্রযোজক স্বামীর দৌলতে ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগটা বরাবরই ছিল। “৪০ বছর ধরে ২৫০ খানার বেশি ছবি ও করেছে। তবে এই ব্রেক নিয়ে ওর কোনও আফশোস দেখিনি। একবার তো অমিতাভের সঙ্গে যশ চোপড়ার একটা ছবিতে কাজের কথা হয়েছিল। অমিতাভের সঙ্গে ‘বাগবান’ করার জন্যও ওকে প্রায় মাস ছ’য়েক ধরে পীড়াপীড়ি করা হয়েছিল।”
কেবল ‘ইংলিশ ভিংলিশ’-এর ক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম। “আমরা রজনীকান্তের মেয়ের বিয়েতে চেন্নাই গিয়েছিলাম। ‘অপোজিট’ বলে
একটা ছবির জন্য পরিচালক বাল্কি কথা বলতে এসেছিলেন রজনী আর শ্রীর সঙ্গে। বাল্কি চেয়েছিলেন হিন্দিতে ছবিটা করুক অমিতাভ আর শ্রী। ওই ছবিটা নিয়ে কথাবার্তা চলার সময়েই ও কথায় কথায় ‘ইংলিশ ভিংলিশ’-এর আভাস দেয়। শ্রী শোনামাত্রই খুব আগ্রহী
হয়ে পড়ে।”
বাকিটা ইতিহাস।
পরিবার সামলানোর ফাঁকে ফাঁকেই বনির প্রযোজিত ছবিগুলো আর চিত্রনাট্যের সেশনেও উপস্থিত থাকেন শ্রীদেবী। “আমি শ্রী আর আমাদের মেয়ে জাহ্নবীকে আমার ছবি ‘নো এন্ট্রি মে এন্ট্রি’র চিত্রনাট্য শুনিয়েছি। ওদের ইনপুটটা খুব জরুরি। এই কমেডি ছবিতে সলমন, অনিল আর ফরদিন মুখ্য ভূমিকায় থাকবে।”
‘নো এন্ট্রি’ না কি বাংলায় হবে বলে শোনা যাচ্ছিল? “ঠিক। কলকাতার সঙ্গে আমার একটা বিশেষ সম্পর্ক আছে। শক্তি সামন্তর সহযোগী হিসেবে কাজ করার সময় আমি দু’বছর ছিলাম এখানে। আমি বাংলাও বুঝতে পারি। কলকাতাই আমায় প্রথম রুটি দিয়েছে।”
স্মৃতি ঘাঁটতে ঘাঁটতে তাঁর মনে পড়ে যায় মধ্য কলকাতার এক মাঝারি মাপের হোটেলে কাটানো দিনগুলোর কথা। “তখন ‘অনুরোধ’-এর শ্যুটিং করছিলাম। বারবার দার্জিলিং-কলকাতা যাতায়াত করতে হতো। ছবির অভিনেতারা পার্ক হোটেলে থাকলেও সহকারী পরিচালক হিসেবে আমার ঠিকানা ছিল প্যারাডাইস হোটেল।”
আজকে তাজ বেঙ্গলের বিলাসবহুল সুইট-এ বসে ইডলি দোসা খেতে খেতে, ভাবতে কেমন লাগে সেই সব ফেলে আসা দিনগুলোর কথা? “পরিচালক হতে চেয়েছিলাম। সহকারী পরিচালক হিসেবে খুব সুনাম ছিল আমার। ‘মেহবুবা’ করেছিলাম। এমন অনেক পরিচালক ছিলেন আমাকে সহকারী হিসেবে নেওয়ার জন্য যাঁরা উদগ্রীব থাকতেন খুব।” আর কলকাতা? “এই শহরেই প্রথম টানা রিকশা দেখি। হোটেলে রুম শেয়ার করতে হত। কমন বাথরুম। গিজার নেই। এক বালতি গরম জলই তখন ছিল আশীর্বাদ।”
কথা বলতে বলতে চলে যান দার্জিলিংয়ের শ্যুটিংয়ের গল্পে। সিনেমা পাগল জনতাকে তিনি ‘অনুরোধ’-এর তারকাদের সঙ্গে দেখা করতে দেননি। সেই রাগে ওরা মেরে বনির নাক ফাটিয়ে দেয়। “নাক থেকে রক্ত ঝরছে। ওই অবস্থায় বাগডোগরা থেকে গাড়ি চালিয়ে ফরাক্কা আর পলাশী পেরিয়ে কলকাতা এসেছিলাম।”
বাংলার সঙ্গে সেই যোগাযোগ এখনও শক্তপোক্ত রয়েছে? তাঁর উত্তর, “‘নো এন্ট্রি’ বাংলাতে করলে টলিউডের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিতে চাই।” তবে তার আগে বনির প্রার্থনা সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ টিম ‘বেঙ্গল টাইগার্স’-এর সাফল্য নিয়ে। “আমি আদ্যন্ত ক্রিকেট পাগল। রাতে মাঝে মধ্যে ঘুম না আসলে ভাবি, সুনীল গাওস্কর একটা ছয় মারছেন। সঙ্গে সঙ্গে আমি যেন স্বপ্নের রাজ্যে চলে যাই। ২০০২তে সৌরভ যখন অধিনায়ক ছিলেন, আমি জাতীয় দলের সঙ্গে ঘুরেছিলাম। সব ক’টা মাঠে গিয়ে তাঁদের খেলা দেখেছিলাম।”
আশ্চর্যের, তিনি ইডেনে এখনও একটাও ম্যাচ দেখেননি। “আশা করছিলাম ‘বেঙ্গল টাইগার্স’ হোম ম্যাচগুলো ইডেনে খেলতে পারবে।” কিন্তু এখন জানা যাচ্ছে ‘বেঙ্গল টাইগার’ তাঁদের হোম ম্যাচ খেলবে শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙঘা স্টেডিয়ামে। সেখানেও কি শ্রীদেবী দলকে উত্সাহ দিতে আসবেন? “নিশ্চয়ই! আমি অর্জুন আর অনিলকে আনারও চেষ্টা করব।”
ব্রেকফাস্ট শেষ। এ বার যাওয়ার পালা। জিজ্ঞেস করলাম মনে পড়ে শ্রীদেবীকে বিয়ে করছেন শুনে কী ভাবে রামগোপাল বর্মা বলেছিলেন যে, অন্য অনেক পরিচালকের মতো তিনিও বনি কপূরকে খুন করতে চান? আজ তা ভেবে কেমন লাগে?
একটু থেমে, হেসে বনির উত্তর, “ওদের জন্য দয়া হয়।” |
|
|
|
|
|