পাটিসাপ্টা, মালপো, পায়েস। সঙ্গে মুগের পুলি, রসবড়া, দুধপুলি। রেকাবি সেজেছে পিঠে পুলিতে। পৌষ সংক্রান্তির সকাল থেকে মিঠে রোদ গায়ে মেখে উত্তরেও শুরু হল পিঠে উৎসব। শিলিগুড়ির কিছু দোকানে দেখা গিয়েছে পিঠে। তবে বাজারে বা ফুড পার্লারে নয়। আধুনিকতার আগল ভেঙে ওই একটি দিন বাঙালি ফিরেছে সাবেকিয়ানায়। বাড়িতে বসে দিন ভর গৃহিনীরা ব্যস্ত ছিলেন উৎসবের আয়োজনে। ভোর আলো ফোলার আগে উত্তরের গাঁয়ে ঘুম ভেঙেছে শাখের শব্দ ও উলুতে। আলপনায় ভরেছে নিকানো উঠান। তুফানগঞ্জের তলিকা গ্রামের রিনা সাহা বা দক্ষিণ দিনাজপুরের জলঘর গ্রামের শ্যামলী বর্মন কুলদেবতাকে প্রথম পিঠে উৎসর্গ করে কাজে নেমে যান। এর পরেই গ্রাম শহরে শুরু হয়ে যায় পিঠে তৈরির প্রস্তুতি। সকালে সাদা ভাপা পিঠে তৈরি গ্রামের রেওয়াজ। তা হয় কুলদেবতাকে। এর পরে বেলা যত গড়াতে থাকে ততই বেড়ে চলে বৈচিত্র্য। |
চালের গুড়ো, নারকেল, দুধের উপকরণে তৈরি হয় দুধপুলি, পায়েস, পাটিসাপটা। অনেক বাড়িতে রাত পর্যন্ত চলে পিঠে তৈরি। বাঙালির ব্যস্ততম জীবনে সময়ের টানাটানির জেরে শিলিগুড়ির মতো শহরের ছবিটা ভিন্ন ছিল। ফালাকাটা, ধূপগুড়ি বা ময়নাগুড়ির মতো শহরের দোকানে তেমন পিঠে না মিললেও শিলিগুড়ির কয়েকটি দোকানে ছিল ভিড়। সেখানে লাইন দিয়ে রসবড়া, ছানার পায়েস, মালপোয়া কিনেছেন বাঙালি। বিধানরোডের একটি দোকান মালিক মহাদেব ঘোষ বলেন, “বুঝতে পারিনি এতটা চাহিদা হবে।” |
রন্ধন প্রণালী |
• রসপুলি: রাঙা আলু সেদ্ধ করে আটার সঙ্গে মেওয়া আর এলাচের গুঁড়ো দিয়ে মাখা হত। পরে পুলি বানিয়ে ঘিয়ে ভেজে চিনির রসে ডুবিয়ে রাখা হত।
• পাটিসাপটা: রুল ময়দা ও চালের গুঁড়োয় সরু চাকলি গড়ে মেওয়া, কাজু ও কিসমিসের সঙ্গে অল্প চিনি মিশিয়ে পুর দেওয়া হত। তার পরে ক্ষীরে ডুবিয়ে রাখা হত সারা রাত। কেউ ভাজাও খেতেন।
• গোকুল পিঠে: মেওয়ার সঙ্গে এলাচ ও আতপ চালের গুঁড়ো মাখা হত। আলাদা করে আটা ও দুধ গুলে পিঠে গড়ে ঘিয়ে ভেজে ডোবানো হত রসে।
• মুগ সামলাই বা মুগ সামলি: সোনা মুগের ডাল কাঠখোলায় ভাজার পরে এমন ভাবে সেদ্ধ করা হত, যাতে গলে না যায়। তাতে জিরে বাটা, আদা বাটা, নুন, মিষ্টি মিশিয়ে রুটির লেচির মত গোল গোল করে তার মধ্যে নারকেল বা তিলের মিষ্টি পুর ভরা হত। পরে ভেজে রসে ডোবানো হত।
• ক্ষীরপুলি: আতপ চালের গুঁড়ো করে গরম জল দিয়ে মেখে লেচি করা হত। সেই লেচি বেলে তার মধ্যে ক্ষীরের পুর ভরে গড়া হত পুলি। তার পরে তা ফোটানোও হত ক্ষীরে ফেলে। পরে এলাচ গুঁড়ো ছড়িয়ে পরিবেশন হত। |
|