রায়গঞ্জের কেবল টিভি কর্তা তথা উত্তর দিনাজপুর প্রেস ক্লাবের সহ সম্পাদক সঞ্জীব বর্ধন খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আরও এক যুবককে গ্রেফতার করল পুলিশ। রবিবার গভীর রাতে করণদিঘি থানা এলাকা থেকে তাকে ধরা হয়। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম মহম্মদ ইসরাইল। তাঁর বাড়ি করণদিঘির রসাখোয়ায়। ধৃতকে এ দিন রায়গঞ্জের মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতে তোলা হলে বিচারক অঞ্জন সেনগুপ্ত তাকে আগামী ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত পুলিশি হাজতের নির্দেশ দেন। এই নিয়ে ওই খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৩ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করল। আইসি দীনেশ প্রামাণিক বলেন, “গোপন সূত্রে খবর পেয়ে করণদিঘি এলাকা থেকে ওই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃত যুবক সঞ্জীববাবুর খুনের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে কি না তা জানতে জেরা করা হচ্ছে। খুনের ঘটনায় ফেরার দুই অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চলছে।” |
গত ৪ জানুয়ারি অফিস থেকে নিজের গাড়িতে চেপে বাড়ি ফেরার পথে নিশীথ সরণি এলাকায় দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন সঞ্জীববাবু। এই ঘটনার পর নিহতের পরিবারের তরফে স্থানীয় তিনজন সহ অজ্ঞাতপরিচয় একদল যুবকের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করা হয়। রমেন্দ্রপল্লি এলাকা থেকে এক অভিযুক্তকে পর দিন গ্রেফতার করে পুলিশ। কয়েকদিন পর মিলন পাড়া থেকে ওই খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আরও এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়। আইসি জানান, ব্যবসায়িক বিরোধ বা ২০০৯ সালে ওই কেবল টিভির আলোকচিত্রী খুনের ঘটনার জেরে সঞ্জীববাবুকে দুষ্কৃতীরা খুন করেছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ দিকে রায়গঞ্জের গৌরী গ্রাম পঞ্চায়েতের নরম গ্রামের বাসিন্দা দুই তৃণমূল নেতা মুকুন্দ দাস ও ক্ষীরোদ দাসকে খুনের ঘটনার তিনদিন পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। শুক্রবার বাড়ি থেকে মোটরবাইকে চেপে রায়গঞ্জে যাওয়ার পথে মাড়াইকুড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের পদ্মপুকুর মরানদী এলাকায় দুষ্কৃতীরা ওই দুই নেতাকে কুপিয়ে গুলি করে খুন করে পালিয়ে যায়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, জমি নিয়ে বিবাদের জেরেই দুষ্কৃতীরা ওই দুই জনকে খুন করে। এই ঘটনায় নিহতদের প্রতিবেশি অভিযুক্ত চারজনের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, অভিযুক্তরা ভিনরাজ্যে পালিয়ে গিয়েছে। জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্য বলেন, “মুকুন্দবাবু ও ক্ষীরোদবাবুর মৃত্যুতে দলের অপূরণীয় ক্ষতি হল! পুলিশের কাছে অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতার করার দাবি জানিয়েছি।” দুই মাসে রায়গঞ্জ থানা এলাকায় ১১টি খুনের ঘটনার পাশাপাশি দুষ্কৃতীদের মধ্যে একাধিক বার গুলি বোমার লড়াই হয়েছে। আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি হওয়ায় পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে তৃণমূল বাদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আন্দোলনে নেমেছে। পুলিশ সুপারের বদলির দাবিতে তৃণমূল বাদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ডাকে ৭ জানুয়ারি রায়গঞ্জে বনধ হয়। রাজ্যের মন্ত্রী আব্দুল করিম চৌধুরীও পুলিশ সুপারের নিজে থেকেই জেলা থেকে চলে যাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন। মৌন মিছিলের আগে অমলবাব এ দিন সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন, “রাজ্যসরকার পুলিশকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়ে বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্তদের ধরে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে বলেছে। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে ও অভিযুক্তদের ধরতে দলের পক্ষ থেকে সাধারণ মি পুলিশকে সহযোগিতা করার আবেদন জানানো হচ্ছে।” |