স্কুলছুটদের জন্য ‘কর্তব্য’ প্রাক্তনীদের
নেহা রজক, শিউলি বর্মন, রাজু রাম এদের কারও বাবা ভ্যান চালান। কারও মা পরিচারিকার কাজ করেন। কারও বাবা ইটভাটার শ্রমিক। আবার কারও মা বাজারে সবজি বিক্রি করেন। বাবা-মায়েরা ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খোঁজ রাখতে পারেন না। ফলে, নেহারা বেশির ভাগই স্কুল ছুট। কেউ কোনদিন স্কুলে পা রাখেনি। এমনই ৪০ জন ছেলেমেয়ে নিয়ে স্কুল খুলেছেন মালদহ বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরের ১৯৯২ সালের মাধ্যমিক ব্যাচের প্রাক্তনীরা।
২০০৮ সাল থেকে মালদহ শহরের মহানন্দা নদী লাগোয়া কামারপাড়ায় এই স্কুল চলছে। সবার আড়ালে সরকারি সাহায্য না নিয়ে নিজেরা চাঁদা তুলে কর্তব্য নামে এই স্কুল চালাচ্ছেন বিবেকানন্দ স্কুলের প্রাক্তনীরা। স্কুলে ছেলেমেয়ে ফের পড়তে যাওয়ায় যারপরনাই খুশি কামারপাড়ার বস্তিবাসীরা। তাঁদের কথায়, “আমাদের ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। এখন প্রতিদিনই ওরা স্কুলে যাচ্ছে। অনেক কিছু শিখেছে। আমরা খুশি। ঠিকঠাক পড়াশোনা করে বড় হলে ছেলেমেয়েদের বাজারে সবজি বিক্রি করতে হবে না। পরিচারিকার কাজ করতে হবে। হাতে-কলমে কাজ শিখে মাথা উঁচু করে বাঁচবে।”
কর্ত্যব্যের সম্পাদক সৌগত ইকবাল ও তাঁর সতীর্থরা জানান, রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে স্কুলে পড়ার সময়েই লক্ষ্য স্থির করেন তাঁরা। সেটা হল, প্রতিষ্ঠিত হলে সামাজিক কর্তব্য পালন করবেন তাঁরা। সেই লক্ষ্যে আমরা বস্তি এলাকার স্কুলছুট ও নিরক্ষর ছেলেমেয়েদের প্রথাগত শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য কর্তব্য স্কুল খুলেছেন।
বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরের ১৯৯২ সালে মাধ্যমিক ব্যাচে ছাত্র সংখ্যা ছিল ১০২ জন। স্কুল থেকে পাশ করে কেউ চিকিৎসক, কেউ বিজ্ঞানী, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ শিক্ষক হিসাবে দেশে ও বিদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এদেরই ৭০-৭৫ জন প্রাক্তনী এগিয়ে এসেছেন স্কুল গড়তে। যখন যেমন টাকার প্রয়োজন ফেসবুকে সকলকে জানানো হচ্ছে, ৭দিনের মধ্যে সকলেই টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
সেই টাকায় কেনা হয়েছে ছাত্রীদের জন্য কম্পিউটার, সেলাই মেশিন। শুধু আর্থিক সাহায্য পাঠিয়েই থেমে থাকেননি প্রাক্তনীরা। বস্তির ছেলেমেয়েদের পড়াতে নিজেদের সময় বার করে প্রাক্তনীরা পালা করে স্কুলে পড়াতে যাচ্ছেন। প্রতিদিন বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত স্কুল চলছে। পড়াশুনার পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের কম্পিউটার, সেলাই শেখানো হচ্ছে।
প্রাক্তনীদের একজন মোলপুর স্বাস্থকেন্দ্রের বিএমওএইচ পার্থসারথি রায় বলেন, “স্বাস্থকেন্দ্র সামলে সময় পাই না। কিন্তু যখনই সময় পাই স্কুলে ছুটে যাই। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের পড়াতে আমার ভীষণ ভালো লাগে।” জাপানে কর্মরত বিজ্ঞানী অনির্বাণ বন্দোপাধ্যায় বলেন, “দূর থেকে এই স্কুল চালানোর জন্য সবরকম সাহায্য করছি ঠিকই। কিন্তু ওই স্কুলে পড়াতে পারলে নিজেকে সার্থক মনে হতো।”
একই আক্ষেপ করেছেন ১৯৯২ সালের ব্যাচের বর্তমান আমেরিকায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়র শুচিশুভ্র সিংহ, দেবরাজ কুমাররা। স্কুলের প্রাক্তনীদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিকেকান্দ বিদ্যামন্দিরের বর্তমান প্রধান শিক্ষক ব্রহ্মচারী অনিবার্ন চৈতন্য। তিনি বলেন, “ছাত্ররা যেভাবে স্বামী বিকেকানন্দের ভাবাদর্শ কাজে লাগিয়ে শিক্ষাদানে ব্রতী হয়েছে। তা পরে আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.