দক্ষিণ দিনাজপুরের অর্ধেক প্রাথমিক স্কুল সর্বশিক্ষা মিশনের বরাদ্দ টাকার সদ্ব্যবহার পত্র (ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট) জমা দিতে পারেনি। স্কুলের পরিকাঠামো উন্নয়নে মিশনের তরফে ওই টাকা দেওয়া হয়। জেলা সর্বশিক্ষা মিশনের প্রকল্প আধিকারিক সুশান্ত পান্ডা বলেন, “স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের কাছে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। প্রয়োজনে কড়া পদক্ষেপ হবে।”
মিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ দিনাজপুরে গত ২০১১-২০১২ আর্থিক বছরে সর্বশিক্ষা খাতে ৪৬ কোটি ৫১ লক্ষ ৩৯ হাজার ৩০০ টাকা পাওয়া গিয়েছে। তার মধ্যে ৩৯ কোটি ৮৭ লক্ষ ৫৭ হাজার ৪০০ টাকা জেলার ১ হাজার ১৬৯টি প্রাথমিক স্কুল এবং ১৩২টি আপার প্রাইমারি স্কুলে বাড়ি তৈরি থেকে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য দেওয়া হয়। পাশাপাশি চলতি ২০১২-২০১৩ আর্থিক বছরে ওই খাতে জেলার জন্য ২৫ কোটি ৩ লক্ষ ৮১ হাজার ৮০০ টাকা পাওয়া গিয়েছে। স্কুলগুলিতে ইতিমধ্যে অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ, স্কুলের সীমানা পাঁচিল সহ নিউ সেটআপ আপার প্রাইমারি স্কুলবাড়ি তৈরির জন্য গত বছরের টাকা মিলিয়ে প্রায় ৩২ কোটি টাকা বিলি করা হয়। পরিকাঠামো উন্নয়নে টাকা দেওয়া হয় জেলার ৬০টি হাইস্কুলকে। বর্তমানে দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রতিটি প্রাথমিক স্কুল পাকা বাড়িতে চলছে। জেলায় এমন একটি স্কুল নেই যেখানে ঘরের অভাবে খোলা আকাশের নীচে গাছ তলায় ক্লাস করতে হয়। মিড ডে মিলে রান্নাঘর, শৌচাগার প্রতিটি স্কুলে রয়েছে। ওই কারণে অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ, প্রধান শিক্ষকদের জন্য আলাদা ঘর, বিদ্যালয়ের সীমানা পাঁচিল তৈরি সহ মেরামতি ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে সর্বশিক্ষা মিশন থেকে প্রয়োজনীয় টাকা সরাসরি চেকের মাধ্যমে সার্কেল ইন্সপেক্টারের অফিস মারফত স্কুলগুলিতে পাঠানো হয়।
মিশনের এক কর্তা জানান, প্রতিটি প্রাথমিক স্কুলে ২ লক্ষ টাকা থেকে ৩ লক্ষ টাকা কয়েক দফায় দেওয়া হয়। অধিকাংশ স্কুলে কাজও হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত জেলা সর্বশিক্ষা মিশনের কাছে ৪৯ শতাংশ প্রাথমিক স্কুল কর্তৃপক্ষ সদ্ব্যবহার পত্র জমা দিয়েছেন। বাকি ৫১ শতাংশ প্রাথামিক স্কুল সেটা করতে পারেনি। ওই কারণে গত আর্থিক বছরের তুলনায় চলতি বছরে সর্বশিক্ষা খাতে কেন্দ্র সরকার থেকে কম টাকা এসেছে। চলতি আর্থিক বছর শেষ হতে আর মাত্র ৩ মাস বাকি। কাজের অগ্রগতি বাড়িয়ে সদ্ব্যবহার পত্র জমার প্রক্রিয়া দ্রুত করার জন্য দফতর থেকে চাপ সৃষ্টি করা হলেও বাস্তবে কি হবে তা নিয়ে সন্দিহান শিক্ষক থেকে বিভাগীয় ইঞ্জিনিয়ার মহল প্রত্যেকে। মিশনের এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, “আপার প্রাইমারিগুলিতে জমির সমস্যার জন্য বাড়ি তৈরির কাজ ব্যহত হচ্ছে।” এ ছাড়াও ভোটের কাজ, জনগণনা প্রক্রিয়া সহ গ্রাম সমীক্ষার জন্য প্রাথমিক শিক্ষকদের যুক্ত করা হচ্ছে। সময়ের অভাবে কাজ এগোচ্ছে না বলে শিক্ষক সংগঠনগুলির তরফে দাবি করা হয়েছে। নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন, সারা বাংলা শিক্ষক সংগঠনের প্রতিনিধিরা জানান, জেলার তপন, হরিরামপুর, কুশমন্ডির মতো সার্কেলগুলির বেশিরভাগ স্কুল এক শিক্ষক এবং দুই শিক্ষক দিয়ে চলছে। বিভিন্ন সমীক্ষার কাজ ছাড়াও শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি মিড ডে মিল পরিচালনার কাজ করতে হয়। ওই পরিস্থিতিতে তিনমাস আগে স্কুলের সীমানা পাঁচিলের জন্য স্কুলপিছু গড়ে প্রায় ২ লক্ষ টাকা সর্বশিক্ষা থেকে পাঠানো হলেও কাজ শুরু করা যায়নি। মিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় ১৭৩টি নিউ সেটআপ আপার প্রাইমারি স্কুলের মধ্যে ১৩২টির স্কুলবাড়ি তৈরির কাজ চলছে। ৫১টি স্কুলের বাড়ি তৈরি সম্পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু টাকা বরাদ্দ হলেও জমি না-পাওয়ায় ১৫টি আপার প্রাইমারির স্কুল বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করা যায়নি। ৬০টি হাই স্কুলকে দেওয়া টাকারও সদ্ব্যবহার পত্র মেলেনি। |