পঞ্চায়েত নির্বাচনে সার্বিক বাম ঐক্য গড়ে আসন রফায় ব্লক নেতাদের দায়িত্ব দিল কোচবিহারের জেলা বামফ্রন্ট নেতৃত্ব। সোমবার জেলার ১২টি ব্লকের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে ওই ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৩১ তারিখের মধ্যে ব্লক কমিটির নেতাদের বৈঠক করে ওই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়সীমাও এ দিন বেঁধে দেন জেলা নেতৃত্ব। পাশাপাশি তৃণমূলের সন্ত্রাস মোকাবিলা নিয়েও নিচুতলার কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ ভাবে মোকাবিলার পরামর্শ ওই বৈঠকে দেওয়া হয়েছে। এমনকী, কোনও নেতা ঐক্য গড়ার ক্ষেত্রে অনীহা দেখালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও বৈঠকে সতর্ক করে দেওয়া হয়।
সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক তারিণী রায় বলেন, “সার্বিক বাম ঐক্য গড়ে পঞ্চায়েতে লড়তে চাইছি। সে জন্য শরিক দলের ব্লক নেতাদের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে বৈঠক করে আসন রফা চূড়ান্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সমস্যা হলে জেলা ফ্রন্ট নেতারা হস্তক্ষেপ করবেন। ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, “বামফ্রন্টের একজন প্রার্থীকেই একটি আসনে আমরা দেখতে চাই। গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতির ওই আসন রফার বিষয়টি ব্লক নেতাদের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ঐক্য গড়ে লড়ার ব্যাপারে কোন নেতা সমস্যা করলে সেটা দলবিরোধী কাজ বলে বিবেচনা করা হবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
সত্তরের দশক থেকে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ফি বছর কোচবিহারে সার্বিক বাম ‘অনৈক্য’ প্রকাশ্যে এসেছে। প্রার্থী দিয়ে দুই বড় শরিক সিপিএম ও ফরওয়ার্ড ব্লক পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াই করে। যার জেরে দিনহাটায় সিপিএমের এক ডাকসাইটে নেতা হেরে যান বলেও অভিযোগ রয়েছে ফ্রন্টের অন্দরে। এ বার রাজ্যে বামফ্রন্ট ক্ষমতা হারানোয় সব শরিক দলের নেতারাই সার্বিক ঐক্য গড়ে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাস্তব পরিস্থিতিতে যে দলের যেখানে শক্তি ও সম্ভাবনা রয়েছে তারা সেখানে প্রার্থী দেবে বলে ইতিমধ্যে জেলা ফ্রন্টের বৈঠকে চূড়ান্ত হয়েছে।
এ বার নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে ওই ঐক্য গড়ার ব্যাপারে বার্তা দিতেই সোমবার কোচবিহারে সমস্ত শরিক দলের ব্লক নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন বামফ্রন্টের নেতারা। সিপিএম ও ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদকরা ছাড়াও সিপিআইয়ের সুরথ চক্রবর্তী, আরএসপি’র তাপস সাহা প্রমুখও ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক তারিণী রায় বলেন, “বাম আমলে কে বড় সেটা দেখানোর লড়াই ছিল। এখন আমরা ক্ষমতায় নেই। তাই সার্বিক ঐক্য গড়ে লড়তে চাইছি। প্রাথমিকভাবে ব্লক নেতৃত্ব কে আসন রফা চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”
বৈঠকেই কোচবিহার থেকে হলদিবাড়ি প্রতিটি ব্লক কমিটির বৈঠকে বসার সূচিও চূড়ান্ত করে দেওয়া হয়। ফ্রন্ট সূত্রে খবর, একমাত্র সিতাই ছাড়া বাকি সব ব্লকের ব্লক নেতারা নিজের এলাকায় বৈঠক করবেন। সিতাই ব্লকের বৈঠক ২৯ জানুয়ারি দিনহাটায় হবে। ওই প্রসঙ্গে ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদকের দাবি, “অন্য কর্মসূচি থাকায় সে দিন সিতাইয়ের বদলে তাই ব্লক নেতাদের দিনহাটায় বৈঠক করতে বলা হয়েছে। অন্য ব্যাপার নেই।” এরই পাশাপাশি পঞ্চায়েতে তৃণমূল সন্ত্রাস করবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বামফ্রন্ট নেতারা। সিপিএম জেলা সম্পাদক তারিণী রায় বলেন, “তৃণমূল সন্ত্রাস করবে ধরে নিচ্ছি। প্রশাসনকে সে কথা মাথায় রেখে নিরপেক্ষ ভোট করানোর কথাও বলা হবে। তাও সন্ত্রাস মোকাবিলা করা না গেলে প্রশাসন কে তার দায়িত্ব নিতে হবে। আমাদের কর্মীরাও চুপ করে বসে থাকবে না।” |