স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য রয়েছে সরকারি আবাসন। কিন্তু ভগ্নপ্রায় ওই আবাসন বসবাসের পক্ষে একেবারেই অনুপযুক্ত হওয়ায় স্বাস্থ্যকর্মীরা অন্যত্র থাকেন। তা সত্ত্বেও পটাশপুর-২ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীদের বেতন থেকে নিয়মিত কাটা হচ্ছে আবাসনে থাকার টাকাএক দু’-মাস নয়, গত ছয় বছর ধরে।
পটাশপুর সদর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে কসবা পটাশপুর মৌজায় কয়েক একর জায়গার উপর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ভেঙে পড়া আবাসনগুলি। ঝোপঝাড়, আগাছায় ভর্তি আবাসনগুলিতে সাপ-শেয়ালের বাসা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েক বছরে দফায়-দফায় চুরি হয়েছে আবাসনের বিভিন্ন সামগ্রী। ডাকাতিতে বাধা দিতে গিয়ে আহতও হয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। নার্স, ফার্মাসিস্ট ও সাফাইকর্মীর জন্য বরাদ্দ রয়েছে ছ’টি আবাসন। সেগুলির অবস্থাও তথৈবচ। সদ্য অবসরপ্রাপ্ত সাফাইকর্মী আরতি ঘোড়ই বলেন, “ক’টা টাকাই বা মাইনে পেতাম। থাকার ব্যবস্থা নেই। তা সত্ত্বেও বাড়ি ভাড়ার টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে। আবেদন-নিবেদন করতে-করতে অবসর নিলাম, কিন্তু সমস্যার সুরাহা হল না।” স্বাস্থ্য কেন্দ্রের একমাত্র ফার্মাসিস্ট সন্তোষকুমার মণ্ডল বলেন, “প্রতি মাসে আমার সাড়ে তিন হাজার টাকার বেশি কেটে নেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরের বিভিন্ন স্তরে অভিযোগ জানিয়েও সাড়া পাইনি।” স্থানীয় পটাশপুর গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান মৃণালকান্তি দাস, ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ওয়াসিম রানা, বিডিও ত্রিদিব সরসকলেই স্বীকার করেন, ওই আবাসনগুলিতে বসবাস তো দূরের কথা, পায়ে দাঁড়ানোও বিপজ্জনক। |
তা সত্ত্বেও কেন টাকা কাটা হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের?
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যে বাম জমানার আগে পূর্ত দফতরই স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও আবাসনগুলি নির্মাণ করেছিল। নিয়ম অনুযায়ী, জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কাছ থেকে আবাসনের বর্তমান অবস্থা জেনে পূর্ত দফতর তা বাতিলের রিপোর্ট দিলে, বাড়ি ভাড়ার টাকা আর কাটবে না স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু এখনও পর্যন্ত পূর্ত দফতরকে কোনও চিঠি পাঠানো হয়নি। ফলে তদন্তেও আসেনি তারা।
এগরা মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় বছর খানেক আগে স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন তৎকালীন মহকুমাশাসক রত্নেশ্বর রায় ও বিডিও ত্রিদিব সর। অভিযোগ, মহকুমাশাসক ব্লকের ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে বিডিওকে তদন্ত করাতে বললেও আজও তা করা হয়নি। বিডিও বলেন, “কাজের চাপে তা করা সম্ভব হয়নি। যত দ্রুত সম্ভব তা করা হবে।”
বিএমওএইচ ওয়াসিম রানা বলেন, “আমি এবং আমার আগের আধিকারিকরা সমস্যা সমাধানের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার চিঠি পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু ফল মেলেনি। এখানে থাকা নিরাপদও নয়।”
আর পাঁচটা বিষয়ের মতো এটাও জানা নেই জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কালিদাস দত্তের। তিনি বলেন, “আমাদের কোনও গাফিলতি নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।” |